Home » সদ্যপ্রয়াত চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কাপুর কেন ছিলেন স্বতন্ত্র?

সদ্যপ্রয়াত চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কাপুর কেন ছিলেন স্বতন্ত্র?

সময় কলকাতা ডেস্ক : আবার নক্ষত্র পতন,প্রয়াত হলেন চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কাপুর। রং তুলিতে ছবিকে জীবন্ত করে তুলতে জুড়ি মেলা ভার ছিল তাঁর। চিত্র শিল্পী ওয়াসিম কাপুর চলে গেলেন, রেখে গেলেন অসংখ্য স্মৃতি যা ছড়িয়ে রয়েছে চিত্রকলা ক্ষেত্রে ।তাঁর প্রয়াণে শিল্পী মহলে নেমে এসেছে শূন্যতা। সোমবার সকালে প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিটে সহসা ব্রেন স্ট্রোকে পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে। ৭১ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যুকে অকাল প্রয়াণ হিসেবেই মানছেন চিত্রশিল্পীরা। আরও অনেক কিছু দিতে পারতেন তিনি, একবাক্যে বলছেন তাঁর শিল্পের অনুগামী, বিদগ্ধ জন তথা বহু চিত্রশিল্পী। তাঁরা বিষন্ন, তাঁরা বলছেন সহসা বিদায় না নিলে রিয়্যালস্টিক আর্ট তথা পোট্রেট অঙ্কনে তাঁর দক্ষতা আরও ব্যাপ্তি পেতে পারত, ঋদ্ধ হত চিত্রকলা ক্ষেত্র।

 

সেলিব্রিটিদের ছবি বা লক ডাউন বা রিক্সা যে ছবি তিনি এঁকেছেন তা বিমূর্ত হয়ে উঠেছিল ওয়াসিম কাপুরের তুলিতে। তাঁর রংয়ের ব্যবহার তাঁকে করে তুলেছিল বিশিষ্ট। রাধাকৃষ্ণ, মাদার টেরেসা বা বিগ বি তাঁর তুলিতে অসামান্য ক্যানভাস হয়ে উঠেছে।

লখনউ শহরে ১৯৫১ সালে জন্মেছিলেন ওয়াসিম কাপুর।পরবর্তীতে কলকাতায় এসে স্থায়ী বসবাস শুরু করা ওয়াসিম কাপুর রং তুলির ব্যবহারে কলকাতাকে তুলে ধরেছিলেন। তাঁর কর্মক্ষেত্র কলকাতা হলেও তাঁর শিল্পের বিষয় তিলোত্তমা কলকাতা হলেও বলা যায় তাঁর শিল্পের বিচরণ ছিল বিশ্বব্যাপী।কেন স্বতন্ত্র ছিলেন ওয়াসিম কাপুর জানিয়ে তাঁর স্মৃতিচারণা করার ফাঁকে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ শিল্পীরা। শিল্পী ছিলেন এক বিরাট হৃদয়ের অধিকারী।তাঁর বহুদিনের সুহৃদ জহর দাসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে বহু অজানা তথ্য।

১৬ বছর অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের যুগ্ম ভাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জহর দাস ও ওয়াসিম কাপুর। রুসি মোদীর পরে জহর দাস অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, সম্পর্ক আরও প্রগাঢ় হয়েছিল ওয়াসিম কাপুরের সঙ্গে। নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তাঁদের। ” যখনই গেছি ওর বাড়িতে, ওয়াসিমকে দেখেছি রং তুলি ক্যানভাস নিয়ে মগ্ন, ওয়াসিম এত আগে না চলে গেলে আরও সমৃদ্ধ হতে পারত চিত্রকলা শিল্প “, সখেদে জানিয়েছেন জহর দাস।

‘সময় কলকাতা’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জহর দাস বলেছেন তাঁদের আঁকার আঙ্গিক ভিন্ন হলেও তিনি ছিলেন ওয়াসিম কাপুরের গুনমুগ্ধ ও তাঁর চিত্রের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধাশীল। জহর দাস যা জানিয়েছেন তা থেকে সুস্পষ্ট যে রিয়্যালস্টিক আর্টের সংজ্ঞা যেন যথাযথ মাত্রা পেয়েছিল ওয়াসিম কাপুরের আঁকা পোট্রেট ও জীবনের ছবি তুলে ধরা বিভিন্ন বিষয়ে । মুখাবয়ব অঙ্কন তাঁর প্ৰিয় ক্ষেত্র ছিল। পোট্রেট অঙ্কনে তাঁর সাফল্য নতুন দিশা পায় রুপোলি জগতের নায়ক- নায়িকার চিত্রায়নে। এবিষয়ে জহর দাস বলেছেন – ‘পোট্রেট আঁকায় ওয়াসিম ছিল অসামান্য দক্ষ,রঙিন পর্দার সেলিব্রিটি, মূলত নায়িকাদের পোট্রেট অঙ্কন কতটা বাণিজ্যিক ভাবনাযুক্ত ছিল তার মূল্যায়ন করা দুরুহ তথাপি এর মধ্যে দিয়ে শৈল্পিক ভাবনার বিকাশ ঘটেছে।”

জহর দাসের মতে,শিল্পীকে তাঁর জন্মস্থান দিয়ে বেঁধে রাখা যায় না।ব্যক্তিগত ভাবনার বিকাশ ঘটে তাঁর ছবিতে। শিল্পীদের সুখ, দুঃখ, আনন্দ, উল্লাস, গরিমা সবই জীবন্ত হয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে। ওয়াসিম কাপুর নিজের ক্যানভাসে তাঁর ব্যক্তিগত অনুভূতি বিকাশের যে কথা বলেছিলেন তার অনুরণন তাঁর সুহৃদের বক্তব্যে। মাদার টেরেসা বা যিশুখ্রীষ্টকে আঁকার ক্ষেত্রেও এরকম প্রভাব কাজ করে থাকতে পারে। ঔদার্য্য যে ওয়াসিম কাপুরের হৃদয়ে।

জহর দাস জানিয়েছেন, তিনি ও ওয়াসিম কাপুর দুজনেই ছিলেন বামপন্থী মানসিকতার শরিক যা তাঁদের সম্পর্ক আরও গভীর করেছিল। তথাপি অজাতশত্রু তথা বড় মাপের ও বড় মনের মানুষ হিসেবে পরিচিত ওয়াসিম কাপুর কখনও রাজনৈতিক ভাবনার জন্য সংকীর্ণ গন্ডিতে বাঁধা পড়েন নি।

‘মমার্ত ‘র আপনজন ছিলেন ওয়াসিম কাপুর। উদীয়মান শিল্পীদের সাহায্য করতেন আর তাঁদের প্রদর্শনীর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে ওয়াসিম কাপুরের প্রাণশক্তি যেন উপচে পড়ত – স্মৃতিচারণা জহর দাসের।

চলে গেলেন শিল্পীদের আপনজন, ফাইন আর্টসের এক প্রাণপুরুষ ওয়াসিম কাপুর। রেখে গেলেন শূন্যতা।রেখে গেলেন একরাশ মুগ্ধতা।।

About Post Author