সানি রায় ও পুরন্দর চক্রবর্তী,সময় কলকাতা , ২৫ আগস্ট : দ্বৈত নাগরিকত্ব ভারতে সিদ্ধ নয়। ফলে বিদেশের নাগরিকত্ব নিতে হলে ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হয়। ইদানিং ধুম পড়েছে ভারতের নাগরিকত্ব ছেড়ে বিদেশে যাওয়ার। আর্থিকভাবে সমৃদ্ধশালীরা আরও বেশি সমৃদ্ধশালী হওয়ার লক্ষ্যে ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়ে বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব নিচ্ছেন। তথাপি ভারতের সংবিধান কোনওভাবেই দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়ার অনুমতি দেয় না। যদিও সমীক্ষা বলছে বিশ্বে প্রায় ৪৯ শতাংশ দেশেই দ্বৈত নাগরিকত্ব চালু। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশের নাগরিক এসে ভারতে নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে চাইতে পারেন। অন্য দেশের নাগরিক যুগপৎ ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারেন না বলেই বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে তাঁদের ভারতে জন্মগ্রহণকারী সন্তান জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে পারেন অনায়াসে। মা বা বাবার একজন ভারতীয় হলেও এই অধিকার বর্তায়। এদেশে ভোটার হওয়া নাগরিক হওয়ার অন্যতম মাপকাঠি। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাউকে না জানিয়ে অন্য দেশের নাগরিকরা ভারতের নাগরিকত্ব নিচ্ছেন,এরকম অভিযোগ উঠছে। ভোটার হতে পারলে ভারতের নাগরিক হওয়া আর জটিল হয় না। আর এভাবেই অসাংবিধানিকভাবে ভারতের নাগরিক হয়ে যাচ্ছেন অনেকেই।এই অভিযোগ সবচেয়ে বেশি প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আগত লোকেদের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশ থেকে আসা সামান্য কিছু মানুষদের ক্ষেত্রেও পরিযায়ী পাখি হয়ে ভোটার হতে পারার অভিযোগ উঠে থাকে । জলপাইগুড়ির ধুপগুড়িতেও এরকম অভিযোগ উঠল জনৈক নেপাল চন্দ্র পাল ও তার স্ত্রীর ক্ষেত্রে । ধুপগুড়ি বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রাক্কালে স্থানীয় মানুষরা তাঁদের বিরুদ্ধে যে অবিশ্বাস্য অভিযোগ এনেছেন তা অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত নেপাল চন্দ্র পাল । কিন্তু নেপাল চন্দ্র পালের বিরুদ্ধে ওঠা প্রশ্নের বা অভিযোগের গভীরতা অন্য জায়গায়। প্রশাসন এর দায় এড়ায় কী করে? অন্য দেশ থেকে এসে যেকেউ ভারতের নাগরিকত্ব পায় কী করে? রাজনৈতিক নেতারা যা বলছেন তা শুনলে চূড়ান্ত বিস্মিত হতে হয়, চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। জনপ্রতিনিধি যা বলছেন, তা স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ কে মান্যতা দিতেও বাধ্য।
শুধু নেপাল চন্দ্র পালের বিরুদ্ধে নয়, অভিযোগ অনেকেরই বিরুদ্ধেই।অভিযোগ যে তাঁরা ভুয়ো নাগরিক এবং এক অর্থে তারা ভুয়ো ভোটারও বটে।অভিযোগ, ধুপগুড়ি পুরসভার ১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের দুই নাম্বার ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা নেপাল চন্দ্র পাল, হৃদয় দত্ত সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দু’দেশের নাগরিকত্বের অভিযোগ ওঠে । স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, নেপাল চন্দ্র পাল ও তার স্ত্রী বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনের সময় ধুপগুড়িতে এসে ভোট দিয়ে আবার বাংলাদেশে চলে যায়। ভোটের সময় ছাড়া তারা কয়েক বছর বাংলাদেশে থাকে। পাশাপাশি এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে তারা বেপাত্তা থাকে। ধুপগুড়িতে আবার এসেছে নির্বাচন । উপনির্বাচনের আগে হাজির নেপাল চন্দ্র। তিনি বলছেন, এই অভিযোগ সত্য নয়, তিনি ভারতেই থাকেন। কিন্তু সমস্বরে স্থানীয় মানুষ বলছেন, নেপাল চন্দ্র সহ একাধিক পরিযায়ী ভোটার পাখি এবারও বাংলাদেশ ছেড়ে ভোটের আগে হাজির ভারতে। “বাংলাদেশীরা” নাকি ভোট দেবেন ধুপগুড়ি উপনির্বাচনে!
ভোটার হওয়ার মাধ্যমেই নাগরিকত্বের ছাড়পত্র পাওয়ার বিষয়টি সহজ হয়ে আসে। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি। প্রশাসন ও ধূপগুড়ি এলাকায় দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কিত উদ্ভূত সাংবিধানিক সমস্যা সম্পর্কে একসময়ের জনপ্রতিনিধি যা বলছেন তা শুনলে চমকে উঠতে হয়। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর, ননিগোপাল সরকার বলেন, “১৫ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিক ব্যক্তির ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশেরই নাগরিকত্ব রয়েছে। সারা বছর তারা বাংলাদেশেই থাকে। শুধুমাত্র লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের কয়েকদিন আগে এসে ভোট দিয়েই ফের বাংলাদেশে চলে যায়।”ননী গোপাল বাবু আরও বলেন, ওই এলাকাতেই প্রচুর জমি জমাও কিনে রেখেছে অভিযুক্তরা। বারংবার বিভিন্ন মহলে জানিয়ে কোন লাভ হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জনপ্রতিনিধির বক্তব্য এবং এলাকাবাসীর অভিযোগ শুনে যেকেউ ভাবতেই পারেন সাংবিধানিক সংকট নয় , আদতে শীতঘুমে রয়েছে প্রশাসন। অভিযোগ আসে, অভিযোগ থেকে যায়। পরিযায়ী পাখির মত দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে একদল মানুষ তাঁদের নাগরিকের অধিকার অবৈধভাবে বাংলাদেশের পাশাপাশি ফলিয়ে চলেন ভারতেও । দ্বৈত নাগরিকত্ব ভারতে সংবিধান-স্বীকৃত না হলেও অবলীলায় অন্য দেশের নাগরিকদের এদেশে ভোটার হয়। বিচিত্র নাগরিকত্বের সংজ্ঞায় পরিযায়ী বিদেশী নাগরিকদের মৌরসি পাট্টা ক্রমেই কায়েম হয় সেলুকাসের বিচিত্র দেশের মাটিতে ।
More Stories
প্রকাশ্যে মাংস কাটা : দৃশ্যদূষণ ও শিশুমনে প্রভাব উত্তরবঙ্গের জেলায়
দুদিনের বৃষ্টি সর্বনাশ ডেকে আনল পূর্ব বর্ধমানের চাষের
OPTICALILLUSION: মাত্র ১ শতাংশ মানুষ পারবে নীচের দেওয়া ছবি দুটির মধ্যে থেকে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ৩ টি পার্থক্য খুঁজে বের করতে