Home » কামদুনিকাণ্ডে হাইকোর্টের রায়, ফাঁসি মকুব -দুজন বাদে মুক্তি পেতে চলেছে অভিযুক্তরা,কামদুনির হাতে পড়ে রইল পেন্সিল

কামদুনিকাণ্ডে হাইকোর্টের রায়, ফাঁসি মকুব -দুজন বাদে মুক্তি পেতে চলেছে অভিযুক্তরা,কামদুনির হাতে পড়ে রইল পেন্সিল

পুরন্দর চক্রবর্তী, সময় কলকাতা, ৬ অক্টোবর : নিম্ন আদালতের রায় কার্যত খারিজ করে কামদুনি কান্ড নিয়ে রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। পর্বতের শেষ পর্যন্ত মুসিকপ্রসব হল, মনে করছেন কামদুনি কাণ্ডের সঙ্গে একদশক ধরে জড়িয়ে থাকা বিশেষজ্ঞ মহল। সবকিছু হাতছাড়া হয়ে পড়ে রইল পেন্সিল।

হাইকোর্টের রায়ে,কামদুনি মামলা সাজা ঘোষণা করল কলকাতা হাইকোর্ট। তিনজনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষিত হয়েছিল যা মকুব করে দিল আদালত। অভিযুক্ত শরিফুল আলি, আনসার আলি ও আমিন আলি – এই তিনজনকে এর-আগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল নিম্ন আদালত। আজ কলকাতা হাইকোর্টে বেকসুর খালাস পেয়ে গেল আমিন আলি। শুধুমাত্র আনসার আলি ও শরিফুল আলির আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মৃত্যুদণ্ডের কোনও বিষয়ই রইল না আর। গ্রামবাসী ও মৃত ছাত্রীর পরিবারের তরফে এই ঘটনার মূল পান্ডা ছিল আনসার আলি। নিম্ন আদালতে শুনানি চলাকালীন, অভিযোগ ছিল মূলত তার দিকে যে দুজন যাবজ্জীবনের সাজা পেয়েছে তাদের মধ্যে আনসার আলি অভিযুক্তদের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনায় পাণ্ডা ছিল , এরকম অভিযোগ বারবার উঠেছে। চার্জ শিটে অবশ্য সইফুলকে সবচেয়ে বেশি অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়। ধর্ষণ, ছাত্রীর মৃতদেহের উপরে অত্যাচার, পুনরায় ধর্ষণ – একাধিক অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ থাকায় তাদের ফাঁসি চেয়ে এসেছিল কামদুনি। তারা মুক্তি না পেলেও তাদের প্রাণদণ্ড মূকুব হয়েছে। কামদুনি খুশি নয়, তাদের চাওয়া দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি কার্যত হাতছাড়া। কামদুনি মনে করছে তাদের হাতে পড়ে রইল পেন্সিল। উচ্চ আদালতের রায়ের শেষে টুম্পা, মৌসুমীদের প্রতিক্রিয়া ও হতাশায় তাদের কার্যত আছাড়িপিছাড়ি দেখলেই তা বোধগম্য হবে।

উল্লেখ্য,নিম্নআদালত আরও তিন অভিযুক্ত এমানুল হক, ভোলানাথ নস্কর ও আমিনুল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছিল। এদের মধ্যে এমানুল হককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা রদ করে, তাকে মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি আমিনুল ও ভোলানাথ ইতিমধ্যেই ১০ বছর জেল খেটে ফেলেছে। দু’জনকেই ১০ হাজার টাকা করে দিতে বলা হয়েছে। অনাদায়ে আরও তিন মাস জেল খেটে তারপর ছাড়া পাবে আমিনুল ও ভোলানাথ।অর্থাৎ একজন ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে অবিলম্বে এবং আরও দুজন ছাড়া পাওয়ার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে।

ঘটনা প্রায় এক দশক আগের। ২০১৩ সালের জুন মাসের ওই ভয়ঙ্কর ঘটনা টলিয়ে দিয়েছিল গোটা রাজ্যকে। প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে। কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। প্রমাণের অভাবে দু’জন আগেই ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল। মামলা চলাকালীন আরও এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালে কলকাতার নগর দায়রা আদালত বাকি ৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করেছিল। তিনজনের ফাঁসির সাজা ও বাকি তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালত।পরবর্তীতে সেই মামলা আসে হাইকোর্টে। দীর্ঘ শুনানির পর অবশেষে আজ কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তার ডিভিশন বেঞ্চ কামদুনি মামলায় রায়দান করল।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, কামদুনি কাণ্ডের আন্দোলনকারীরা বিচারের শেষে যা যা চেয়েছিলেন সেই হিসেব ধরলে তাদের চাওয়া পাওয়ার হিসেবে তাদের দাবি মেটে নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,পেন্সিল ছাড়া কিছুই প্রাপ্তি হয় নি কামদুনির।কলেজ ছাত্রী ধর্ষণ ও খুনের কাণ্ডে নয় অভিযুক্তর মধ্যে প্রধান দুই অভিযুক্ত আনসার ও শরিফুলকে মুক্ত না করতে পারলেও অভিযুক্তদের আইনজীবীরা সবাইকেই কারাগারের বাইরে নিয়ে আসতে পেরেছেন।এগারো বছরের কম সময়ে দুজন বাদে মুক্তি পেয়ে গেল সবাই। কামদুনির দীর্ঘ লড়াইয়ের প্রতিফলন না হওয়ায় হাইকোর্টের রায়ে যে কামদুনি গ্রাম যে খুশি হয় নি তা বলাই বাহুল্য। তরুণী ছাত্রীর ওপরে পৈশাচিক ও বর্বর অত্যাচার ও হত্যার সুবিচার চেয়ে ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে যারা একযোগে লড়েছিলেন তাদের মধ্যে হতাশা ছাড়া বিশেষ কিছুই কাজ করছে না। কার্যত কামদুনির দিকে যারা এক দশক ধরে নজর রেখেছেন তাঁরাও মনে করছেন টুম্পা, মৌসুমী, ‘মাস্টার’ প্রদীপ মুখার্জী ভাস্কর এবং কামদুনির পাঁচটি পাড়ার বাসিন্দারা একযোগে লড়ে অঙ্কে শূন্য পেয়েছেন। সব কিছু হাতছাড়া হয়েছে, রইল পড়ে পেন্সিল।

About Post Author