সময় কলকাতা ডেস্ক,২২ অক্টোবর : টেরাকোটার ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। বঙ্গের বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর টেরাকোটা শিল্পের জন্য বিখ্যাত।আর বঙ্গের প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজোয় বাঁকুড়ার এক শিল্পী এক অসামান্য মা দুর্গাকে তাঁর পরিবার সহ ১ ইঞ্চির মধ্যে তুলে ধরেছেন। শিল্পী অর্পিতা সরকারের সৃজনশীল সৃষ্টি বাঙালির উৎসবে এনেছে এক অন্য মাত্রা। একটু বিশদে আলোচনা করা যাক।
যখন শরতের নীল আকাশে টুকরো টুকরো সাদা মেঘের ভেলা ভাসে আর কাশফুলের বনে দোলা লাগে, সেই সময় বাঙালির প্রাণে ছন্দ জাগে, এখন বাঙালির প্রাণের উৎসব উদযাপনের সময়। মা ঘরে আসছেন। চর্চায় আসে ত্রেতা যুগের শ্রীরামচন্দ্রের কথা, তিনিও শরৎকালেই দেবী দুর্গার অকালবোধন করেছিলেন।শ্রীরামচন্দ্র জড়িয়ে আছেন ভারতের সুপ্রাচীন সংস্কৃতি ও সভ্যতার সঙ্গে। ভারতের সুপ্রাচীন সভ্যতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতীয়দের শিল্প ভাবনা। দেশে বিদেশে বহু প্রাচীন সভ্যতার সঙ্গেই বহু প্রাচীন শিল্প জড়িয়ে আছে। এরকমই এক শিল্প টেরাকোটা।টেরাকোটা একটি লাতিন শব্দ: ‘টেরা’ অর্থ মাটি, আর ‘কোটা’ অর্থ পোড়ানো। মানুষের ব্যবহার্য পোড়ামাটির তৈরি সকল রকমের দ্রব্য টেরাকোটা নামে পরিচিত। আঠালো মাটির সঙ্গে খড়কুটো, তুষ প্রভৃতি মিশিয়ে কাদামাটি প্রস্তুত করা হয়। সেই মাটি থেকে মূর্তি, দৃশ্যাবলি তৈরি করে রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে টেরাকোটা ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। মানবসভ্যতার বিকাশকাল হতে পোড়ামাটির ভাস্কর্যের ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে। সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবীলনীয় সভ্যতা, মায়া সভ্যতায় এই শিল্পের প্রচলন ছিল। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে মৌর্য সাম্রাজ্য, “গুপ্ত সাম্রাজ্য-এর বহু টেরাকোটার নিদর্শন পাওয়া গেছে। সুমেরীয়, মায়া, থেকে সিন্ধু সভ্যতা এবং বর্তমান দিনের ভারতের সমাজ এবং উৎসব জীবনকে এক সূত্রে টেরাকোটার মধ্যে দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন অর্পিতা সরকার।
বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা অর্পিতা সরকার ১ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের টেরাকোটার দুর্গা। বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর কিংবা পাঁচমুরার টেরাকোটার এক বিশেষ শৈল্পিক গুরুত্ব রয়েছে। বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজার আমলের থেকে সংরক্ষিত আছে টেরাকোটার বিশেষ নিদর্শন। বাঁকুড়ার গৃহবধূ অর্পিতা এর আগেও একটি আলপিনের মাথায় তিনি তৈরি করেছিলেন মা দুর্গার মুখমণ্ডল, যার দৈর্ঘ্য ছিল এক সেন্টিমিটার এর ১০ ভাগের ১ ভাগ। বাড়ির অন্যান্য কাজ ছাড়াও শিল্পের প্রতি বিশেষ টান রয়েছে অর্পিতা সরকারের। এবার শিল্প ভাবনায় নতুনত্ব এনে মাত্র দু দিনে ১ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের টেরাকোটার মা দুর্গা বানিয়ে জেলায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বাঁকুড়া শহরের কেন্দুয়াডিহির বাসিন্দা দুই সন্তানের জননী অর্পিতা।তিনি যেকোনও বিশেষ উৎসবের আগে তিনি তৈরি করে থাকেন নজরকাড়া শিল্প। বিশেষ করে ক্ষুদ্র কিংবা সূক্ষ্ম শিল্প। এবার তাঁর তৈরি ১ ইঞ্চির এই প্রতিমা যেন এক পুজোমণ্ডপ -মাদুর্গা ছাড়াও রয়েছেন লক্ষ্মী, সরস্বতী এবং কার্তিক, গণেশ।
দেবী আকারে ক্ষুদ্র তথাপি শিল্প ভাবনার নিরিখে এর ব্যাপ্তি বিশাল। সুদক্ষ, কুশলী হাতে তাঁর শিল্পীসত্ত্বাকে, সুপ্রাচীন শিল্প ঐতিহ্য এবং বাঙালির উৎসব-উদযাপনের মেলবন্ধনের চাবিকাঠি হাতে তুলে নিয়েছেন, তুলে দিতে চান দর্শকদের।
“জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী / অভয়াশক্তি বলপ্রদায়িনী তুমি জাগো।”ভাস্কর্য,স্থাপত্য ললিত কলা, চারুকলা সর্বত্র যে শিল্পের এই সৌন্দর্য্য সৃষ্টি করে সে হচ্ছে শিল্পী । শিল্পী মাত্রই রূপ-বিলাসী এবং তার সৃষ্ট রূপই হল শিল্প। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় যেন জেগে উঠেছেন মা। যেমন টেরাকোটা শিল্পের মাধ্যমে মা দুর্গাকে জাগিয়ে তুলে অর্পিতা দেবীরূপকে করেছেন অপরূপা, দিয়েছেন অনন্য মাত্রা।।
More Stories
Shreya Ghoshal Protest Against RG Kar Case: আরজি কর কাণ্ডে এবার প্রতিবাদী শ্রেয়া ঘোষাল, কনসার্ট বাতিল কলকাতায়
আমাদের কথা, তাহাদের কথা : নৃত্যমের কত্থক অনুষ্ঠান ও মুগ্ধতা
রথযাত্রার উৎসবের রেশ শুরু, মেতে উঠেছে খুদেরা, আশায় কারিগররা