সময় কলকাতার ডেস্ক :রুনা চক্রবর্তী
বছর দুই আগের কথা। সেইবার আমরা বসন্তোৎসব অর্গানাইজ্ করেছিলাম পুরুলিয়ার মুরগুমা তে। ওখানে দুদিন ধরে প্রচুর গান, আড্ডা, ছৌ নাচ, অযোধ্যা পাহাড় ঘুরে বেড়ানো হলো। ফেরার সময় আমাদের ট্রেন ছিল বিকেলে পুরুলিয়া স্টেশন থেকে। চটজলদি দুপুরের খাবার খেয়ে গ্রুপ নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম একটু তাড়াতাড়িই। উদ্দেশ্য পুরুলিয়া ঢোকার আগে দেউলঘাটা ঘুরে যাবো।
মুরগুমা থেকে দেউলঘাটা প্রায় ১৫ কিলোমিটার। পুরো রাস্তায় দুদিকে পলাশ ফুলের বিস্তর সমারোহ। দোলের পরের দিন। রাস্তায় খুব একটা ভীড় চোখে পড়লো না। আমাদের গাড়িগুলো দুপাশের সবুজ আর লাল প্রকৃতির বুক চিরে চলা কালো পিচ রাস্তা ধরে বেশ দ্রুতই এগোতে লাগলো। মিনিট চল্লিশের মধ্যে আমরা পৌঁছেও গেলাম। যেখানে গাড়ি থেকে নামতে হবে তার একটু আগে থেকেই দেউলঘাটার মন্দিরের চূড়াগুলো চোখে পড়েছিলো। সবার সব গল্পের আগ্রহ যেন হঠাৎ শেষ হয়ে গেল। দূরের দিকে তাকিয়ে চোখ সরছিলো না কারোরই।
গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে কয়েক পা এগিয়ে যেতেই পাওয়া গেল ইতিউতি ছড়ানো ইতিহাসের স্পর্শ। পাশ দিয়ে নীরবে বয়ে চলেছে কংসাবতী বা কাঁসাই নদী, অনেককাল আগে ঘটা বহু বহু ঘটনার কথা বুকে নিয়ে।
মানভূম অঞ্চলের পানিতভূমি অর্থাৎ আজকের পুরুলিয়ায় ২৪তম ও শেষ জৈন তীর্থংকর মহাবীর বর্ধমান কাঁসাই নদীপাড়ে তাঁর জীবনের কিছুটা সময় কাটান। সময়টা একাদশ ও দ্বাদশ শতকের মাঝামাঝি। উড়িষ্যার রাজা অনন্তবর্মন এই সময় তার জৈনধর্মের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতার এক সুমহান উদাহরণ রাখেন। তিনি এই রাঢ়ভূমিতে কংসাবতীর পাড়ে মন্দির নগরী গড়ে তোলেন। নাম হয় দেউলঘাট যা আজ লোকমুখে দেউলঘাটা। এইসময় এখানে থেকেই তিনি তৎকালীন উরিষ্যা, মানভূম ও অবিভক্ত বাংলায় জৈনধর্ম প্রচার করতে থাকেন। সাথে সাথে অঞ্চলটি বাণিজ্যিক দিক থেকেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। দ্বাদশ শতকের পরবর্তীতে হিন্দু ধর্মের বাড়বারন্ত কালে দেউলঘাটা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। সমস্ত জৈনমন্দিরগুলি রাতারাতি হিন্দুমন্দিরে রূপান্তরিত হয়। এখন অবশ্য সবটাই ইতিহাস। ভাঙামন্দিরপ্রান্তে কাঁসাই নদীপাড়ে নির্জনে কান পাতলে বয়ে যাওয়া হাওয়ায় গল্পে এখনও সেসব কথা শোনা যায়।
ইতিউতি ছড়ানো ভাঙা প্রাচীণ দেবমূর্তি। অযত্নে অবহেলায় সম্পুর্ন বিলীন হবার মুখে দেউলঘাটার ইতিহাস। দেউলঘাটা ঘুরে আসতে যোগাযোগ করুন দ্য ট্রাভেলার এর সঙ্গে 7003579018।পুরুলিয়া সদর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দুরত্বে দেউলঘাটা। অযোধ্যা থেকে ৫ কিলোমিটার। যারা পুরুলিয়া বেড়াতে এসে অযোধ্যা পাহাড় ঘুরে ফিরে যান, যদি দেউলঘাটার জন্য কিছুটা সময় তারা রাখেন পুরুলিয়া বেড়ানোর সৌন্দর্য্য তাদের উৎসাহ বেড়ে যাবে বহুগুণে।
More Stories
Border-Gavaskar Trophy 2024-25: কোহলি ব্যর্থ, পার্থে টেস্টে পেসারদের দাপট, ভারতের ১৫০ রানের জবাবে প্রথম দিনের শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে অস্ট্রেলিয়া
Tea Garden Workers Bonus: চা শ্রমিকদের ১৬ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়া হোক, বাগান মালিকদের আবেদন রাজ্যের
স্বপ্নপুরী পাশাবং : আগামীর গ্রামীণ পর্যটনের মডেল