Home » জবরদখল বনগাঁর ইতিহাসঘেরা নীলকুঠির ভুসম্পত্তি

জবরদখল বনগাঁর ইতিহাসঘেরা নীলকুঠির ভুসম্পত্তি

তমশ্রী রুদ্র ,সময় কলকাতা ডেস্ক :

দীর্ঘদিনের অত্যাচারে জর্জরিত হওয়ার পরে নীলকর সাহেবদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিদ্রোহী হয়েছিলেন নীলচাষীরা। আর এই বিদ্রোহের পটভূমি হিসেবে দেখা দিয়েছিল অধুনা উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁ মহকুমা সংলগ্ন একাংশ। নীলচাষীদের দুর্দশার বিবরণ সমৃদ্ধ ‘নীলদর্পন’ গ্রন্থের লেখক দিনবন্ধু মিত্রের জন্মস্থানও বনগাঁ মহকুমার চৌবেড়িয়া। তাঁর জন্মস্থানের অদূরে মোল্লাহাটি গ্রাম। মোল্লাহাটি অষ্টাদশ শতকে ও ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগ অব্দি হয়ে উঠেছিল নীলচাষের বীজতলা। নীলকর সাহেবরা এসে আস্তানা গেড়েছিলেন মোল্লাহাটিতে।নীলচাষীদের রক্ত নিংড়ে ইংরেজ নীলকর সাহেবদের ধনভান্ডার ফুলেফেঁপে উঠেছিল।সেদিনের মোল্লাহাটি সাক্ষী ছিল কৃষক নিপীড়নের সেই দিনগুলির। আজ নীলচাষীদের রক্তঘাম মাখা ইতিহাসের স্মৃতি বিজড়িত নীলকুঠির ভুসম্পত্তি দখল করা হচ্ছে অবলীলায়।অবহেলায় পড়ে থাকা ঐতিহাসিক স্থানের মাটি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে প্রকাশ্য দিবালোকে ।এলাকাবাসীরা মুষ্টিমেয় মানুষের জবর দখলের বিরুদ্ধে মুখর।ঐতিহ্যবাহী নীলকুঠি এলাকা দখলমুক্ত করে স্থানটিতে পর্যটন কেন্দ্রের দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গোপালনগর থানার মোল্লাহাটি গ্রামের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তাৎপর্যপূর্ণ।ইংরেজ আমলের নীলকুঠিটির সামান্য কিছু ভগ্নাবশেষ যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে বিক্ষিপ্তভাবে । আগে আসতেন পর্যটকরা। এখন তাও কমে গেছে জমিমাফিয়াদের নজর নীলকুঠি এলাকায় পড়ায়।যে যখন পেরেছে ঐতিহাসিক স্থানের ইঁটকাঠ তুলে নিয়ে যাওয়ায় বড়ই বিবর্ণ বর্তমান মোল্লাহাটি।

পুরাস্মৃতি বিজড়িত জমির এক অংশে বসবাস করেন তারক সরদার ও নমিতা সরদার। স্থানীয়রা তাজ্জব, তাঁরা জানতে চান -কিকরে দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহ্যবাহী জায়গায় দখলদারী নিয়েছেন তাঁরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, জমির মাটিও কেটে বিক্রি করছে জবরদখলকারীরা।স্থানীয় বাসিন্দারা ওই নীলকুঠি এলাকায় যান এবং বিক্ষোভ করেছেন ।স্থানীয় মানুষেরা নীলকুঠি এলাকা পরিষ্কার করলেও প্রশাসনের নজরদারি চাইছেন।বাসিন্দাদের।

অভিযোগ, নীলকুঠি এলাকার প্রায় সাড়ে সাত বিঘা জমির উপর থাকা বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্মৃতি সরদার পরিবার নষ্ট করে ফেলেছে । নীল পচানোর চাতাল ,চৌবাচ্চার পাঁচিল আজ তার প্রায় কোনো অস্তিত্বই নেই ৷অথচ কয়েকবছর আগেও সামান্য ভগ্ন অবস্থায় বিরাজ করত চাতাল। বাগানের মধ্যে নীলকর সাহেবদের সমাধির খুঁড়ে ধ্বংস করা হয়েছে।জেমস ফারলং সহ নীলকর সাহেবদের বিশেষ কোনো স্মৃতি অবশিষ্ট নেই।শুধু রয়েছে ডাকবাংলাটি।নীলের আবাদ, নীলকর সাহেবের সেরেস্তা আজ আর নেই। সেকালের পাকা ঘর, বা সামান্য কালের গর্ভে বিলীন হওয়ার আগে প্রশাসনিক উদাসীনতায় আর এক শ্রেণীর লোভী মানুষের হাতে পড়ে চিরবিস্মরণের পথে।

স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ, বারবার প্রশাসনের জানিয়েও ফল হয় নি।প্রতিশ্রুতি সার।শিবু সর্দারের মত স্থানীয় মানুষ চান প্রশাসনিক তৎপরতা।এখন দেখার প্রশাসন কতটা কার্যকরী ভূমিকা নেয়।

এবিষয়ে দিনবন্ধু মিত্রের বংশধর সঞ্জিত মিত্র জানিয়েছেন, যা চলছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তিনি জানিয়েছেন,মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উপরে তাঁদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বছর দশেক আগে রাজ্যের ঐতিহ্য বা হেরিটেজ হিসেবে ঠাঁই পাওয়া দীনবন্ধু মিত্রের বাড়িটি এখনও সংস্কারের অপেক্ষায়। নীলকুঠির অবস্থা আরও করুণ। বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।ইতিহাস আর ঐতিহ্য সংরক্ষণ করার আকুতি মিশ্রিত ক্ষোভ স্থানীয় মানুষদের ।।

About Post Author