সময় কলকাতা ডেস্ক:হঠাৎ বিকট শব্দে আওয়াজ। রেললাইনের অনেকটা দূর পর্যন্তই কেঁপে উঠেছিল আওয়াজে। পড়িমড়ি করে নিমেষে মাঝের মাঠ পার করে দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিল হারু ,মইদুলরা। এমন বীভৎস দুর্ঘটনা কোনদিন দেখেনি তারা। আশেপাশের গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে এসেছে দুর্ঘটনাস্থলে। ট্রেনের কামরা থেকে তখন শুধু আর্তনাদের শব্দ ভেসে আসছে। মুহূর্তে হাত লাগিয়েছে উদ্ধারকার্যে গ্রামের সমস্ত মানুষ। কেউ তখন আহতদের ধরে নিয়ে আসছে রেললাইনের পাশে ,কেউবা তখন কামরার ভেতর ঢুকে উদ্ধার করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ঘটনার ভয়াবহতা দেখে যেকোনো মানুষের বুক কেঁপে উঠবে। প্রতিটা দুর্ঘটনা ক্ষেত্রেই দেখা যায় স্থানীয় মানুষেই তৎপরতা ।প্রাথমিক উদ্ধারকার্য তারাই করে। এক্ষেত্রেও দোমহনির গ্রামবাসীরা উদ্ধার কাজে হাত লাগিয়েছে তৎপরতার সাথে।
জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির দোমহনিতে লাইনচ্যুত হয়েছে পাটনা থেকে গুয়াহাটিগামি 15633 আপ বিকানের গুয়াহাটি এক্সপ্রেস । বৃহস্পতিবার পাঁচটা পনেরো নাগাদ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় ট্রেনটির চারটি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে যায়। চার-পাঁচটি কামরা একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। দুর্ঘটনায় একটি কামরা আরেকটি কামরার উপরে উঠে যায়। দুটি কামরা রেললাইনের পাশে গড়িয়ে পরে এবং একটি কামরা পাশের জলাতে গিয়ে পরে। ট্রেনটির প্রায় 12 টি কামরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । যার মধ্যে চারটি কামরা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ এবং সাতটি কামরা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে 50 জনকে উদ্ধার করে স্থানীয় ময়নাগুড়ি হাসপাতাল জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল এবং উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যার মধ্যে 16 জনকে ময়নাগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তার মধ্যে পাঁচজনকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে। আহতদের মধ্যে 25 জনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক ।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী 8 জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পরপরই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটের মাধ্যমে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ময়নাগুড়ির বিধায়ক সহ একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে। প্রায় 47 টি আম্বুলান্স দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার কার্যে নেমেছে। প্রাথমিকভাবে জলপাইগুড়ি জেলা শাসক মৌমিতা গোদারা বসু তিনজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিলেন। তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেই মত স্থানীয়দের। এখনো উদ্ধার কার্য চলছে ঘটনাস্থলে। উদ্ধার চলাকালীন অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় ঘটনাস্থলে জেনারেটর এর ব্যবস্থা করা হয়েছে পাশাপাশি গ্রামের মানুষ যে যেমন পেরেছে হ্যাজাক ,লন্ঠন নিয়ে উপস্থিত হয়েছে ঘটনাস্থলে।
রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধারকার্যে তদারকিসহ দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণে নেমে পড়েছেন। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সংযোগ আধিকারিক নীলাঞ্জন দেব জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে ইতিমধ্যে রিলিফ ভ্যান পৌঁছে গিয়েছে একাধিক ডি আরএম পৌঁছেছেন ঘটনাস্থলে, দুর্ঘটনার কারণ খোঁজা হচ্ছে। পাশাপাশি পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী জানিয়েছেন”রিলের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন এখন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য উদ্ধার কার্য” । নিউ আলিপুরের ডিআরএম জানিয়েছেন “প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে চারটি কামরা উলটে গিয়েছে উদ্ধারের জন্য আলাদা আলাদা দল পাঠানো হয়েছে ঘটনাস্থলে উদ্ধারকার্য এখন প্রাথমিক কর্তব্য” । রেলের পদস্থ আধিকারিকদের অনুমান ট্রেনের গতিবেগ আনুমানিক 40 কিলোমিটার ছিল। তবে কি কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে দুর্ঘটনার কারণ এখনো পরিষ্কার নয় রেলের আধিকারিকদের কাছে।
More Stories
হাইকোর্টের রায়ে পঞ্চায়েতে ফিরেও ঘর ছাড়া আরাবুল
জাঁকিয়ে শীত আসবে, গরম কাপড় কেনাকাটার ধুম
Mamata Banerjee: “ভাববেন না আমরা বসে ললিপপ খাব…” বাংলা দখল নিয়ে রুজভিকে হুঁশিয়ারি মমতার