- সময় কলকাতা ডেস্ক:আপনি হয়তো কোন চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন বাইকটা দোকানের সামনে দাঁড় করানো। কখনো কোন দোকানে কেনাকাটা করতে গিয়েছেন ,দোকানের সামনে বাইকটা লক করে আপনি গেলেন। ভাবলেন বাইক তো লক , তাহলে নিশ্চিন্ত। হয়তো কোথাও যুবক-যুবতী রাস্তার ধারে বসে গল্পে মগ্ন, বাইক লক করে রাখা আছে একটু দূরে। কিছুক্ষণ বাদে দেখা গেল বাইক নেই। চোখের নিমেষে বাইক চুরি করে বাইক চোরেরা চলে গিয়েছে। এমন ঘটনা হামেশাই ঘটছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। বাইক চোরেদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ।
লকডাউন কালে বাইক চোরেদের দৌরাত্ম্য আরো বেড়েছে। কিন্তু এখানে উঠে প্রশ্ন এই সমস্ত চুরির বাইক যায় কোথায়? এর কি কোনো নির্দিষ্ট মার্কেট আছে ,যেখানে চুরির বাইক বিক্রি হয়? অথবা কোন শোরুম আছে চুরির বাইক বিক্রির? নাকি এই সমস্ত চুরির বাইক পাচার হয়ে যায় অন্য রাজ্যে ,অন্য দেশে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এই লেখনীর অবতারণা ।
প্রথমেই আসি বাইক চুরি হয় কিভাবে? অর্থাৎ আপনার গাড়ি লক করা ছিল তা সত্ত্বেও চোরেরা চুরি করলো কিভাবে? বাইকের লক ভাঙ্গার জন্য চোরেরা ব্যবহার করে এক বিশেষ ধরনের যন্ত্র যাকে বলা হয় “টি” । এই “টি”কোন অত্যাধুনিক যন্ত্র নয় ,দুটো লোহার পাত কে ঝালাই করে”টি”মত তৈরি করা হয়। গাড়ির যেখানে লক সেখানে লাগিয়ে একটু চাপ দিলেই লক ভেঙ্গে যায়। তারপরেই গাড়ি নিয়ে চম্পট দেয় চোরেরা।
এরপরেই প্রশ্ন আসে চোরাই গাড়ি বিক্রি হয় কোথায় ?আর যায় কোথায় ।
এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে জানতে হবে কোন কোন নেটওয়ার্ক গাড়ি চুরির সঙ্গে যুক্ত। গাড়ি চুরিতে যুক্ত রাজ্যের একাধিক জায়গার অপরাধী দল। উত্তর 24 পরগনা ব্যারাকপুর এর একটি গাড়ি চোরের দল রয়েছে যে দলের একজন পান্ডার নাম রাজ সিং। আসানসোলে ও রয়েছে আরেকটি গাড়ি চোরের গ্যাং। হাবরা ,অশোকনগর, বসিরহাট ,মসলন্দপুর ,বনগাঁর জামনগর, রয়েছে অসংখ্য ছোটখাটো গাড়ি চোরের গ্যাং। মুর্শিদাবাদের ডোমকল, জলঙ্গি এই অঞ্চলে তিন-চারটি আছে গাড়ি চোরের গ্যাং রয়েছে,যাদের মাথা শাহজাহান বলে একজন। আসানসোল সংলগ্ন ঝাড়খণ্ডের চন্দ্রপুরা ,ভাগা, ঝরিয়া অঞ্চলে আছে অসংখ্য ছোট ছোট গ্যাং। যারা মূলত পশ্চিমবঙ্গ থেকে গাড়ি চুরি করে ঝাড়খন্ডের রাস্তা ধরে বিহার সহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করে। জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়ি অঞ্চলেও ছোটকা বলে এক গাড়ি চোরের নেতৃত্বে একটি দল অপারেশন চালায়। এদের দ্বারা চুরি হওয়া গাড়ি ত্রিপুরা ,নেপালে পাচার হয়ে যায়।
চুরির গাড়ি কি হয়? অর্থাৎ বিক্রি হয়ে যায় ,না অন্য রাজ্য বা দেশে পাচার হয় ।
প্রথমত বুলেট জাতীয় গাড়ি চুরি হলে সেই গাড়ির ইঞ্জিন এবং সকার খুলে আলাদাভাবে বিক্রি হয়। মূলত প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের যে ইঞ্জিন ভ্যান চলে সেই ইঞ্জিনভ্যান এর ক্ষেত্রে এই চোরাই পার্টস ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য ছোট বাইক যদি চুরি হয় সেই ক্ষেত্রে সেই বাইকের পার্টস খুলে বাজারে বিভিন্ন ছোট খাটো মেকানিকের দোকানে বিক্রি হয়। তবে উত্তর 24 পরগনা, দক্ষিণ 24 পরগনা, নদীয়া, মালদা ,মুর্শিদাবাদ জেলার কোন জায়গা থেকে গাড়ি চুরি হলে সেই গাড়ি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পাচার হয়। এর কারণ হলো বাংলাদেশে যে সকল বাইক শোরুম থেকে বিক্রি হয় ,সেই সকল বাইকের দাম ভারতীয় বাইকের দাম এর থেকে দ্বিগুণ। ভারতীয় কোন নতুন বাইকের দাম যদি 1 লক্ষ টাকা হয় ,সেই বাইকের বাংলাদেশে দাম আড়াই লক্ষ টাকা।
কিন্তু এই চোরাই বাইক কি বাংলাদেশে আইনত সিদ্ধ?
মোটেও না, এই চোরাই বাইক বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামে ব্যবহৃত হয় । যেসকল গ্রামে আজও মেঠো রাস্তা আছে এবং শহর থেকে বহুদূরে সেইসব গ্রামে ভারতীয় চোরাই বাইক এর কদর রয়েছে। এখানে একটি প্রশ্ন উত্থাপন হয়, যে এই চোরাই বাইক সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে কিভাবে বাংলাদেশে পৌঁছায়?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে এই চোরাই বাইক আলাদা আলাদা ভাবে খুলে বস্তায় করে কখনো স্থলপথে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছায় ,আবার অনেক সময় দেখা গিয়েছে সম্পূর্ণ আস্ত বাইক নদীপথে সীমান্ত দিয়ে পাচার হচ্ছে। এই নদীপথে বাইক পাচার এর পদ্ধতি এক কথায় বলা যেতে পারে অভূতপূর্ব। যে সকল স্থানে নদীই হল সীমান্ত রেখা। সেইসব স্থান দিয়ে মূলত পাচারকারীরা বাইক পাচার করে। ছোট ছোট নদীর এপার থেকে ওপার পর্যন্ত নদীর জলের লেভেল ধরে কপিকল সিস্টেম করে নেয় পাচারকারীরা। বাইক একটি হূকের সাহায্যে ওই কপিকলের দড়িতে লাগিয়ে জলে ডুবিয়ে দেয় পাচারকারীরা। তারপর এপার থেকে ওপারে টেনে নিয়ে চলে যাওয়া হয়। এক্ষেত্রে সীমান্তে মোতায়েন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজর সহজেই এড়ানো যায়। বাংলাদেশের বাইক পাচার চক্রের অন্যতম মাথা সাহেব। এই সাহেব বিগত কয়েক বছর আগেও ধরা পড়েছিল গাইঘাটা থানার পুলিশের হাতে। উত্তর 24 পরগনার গাইঘাটা থানা ,বনগাঁ থানা ,মসলন্দপুর, গোবরডাঙ্গা থানায় একাধিক বাইক পাচারকারীর নামে অভিযোগ দায়ের রয়েছে। পাশাপাশি নদীয়া, মুর্শিদাবাদ মালদা, কোচবিহার এর ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একাধিক থানায় বহু অভিযোগ দায়ের রয়েছে এই বাইক পাচার নিয়ে।
বহু সময় প্রশাসনের হাতে বহু পাচারকারী ধরাও যেমন পড়েছে, তেমনি বহুবার বহু বাইক উদ্ধার হয়েছে প্রশাসনের দ্বারা। এক কথায় বলা যেতে পারে এই বাইক চোরেদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ রয়েছে দুশ্চিন্তায় তেমনি প্রশাসনের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে এই বাইক চোরেরা।
More Stories
Arpita Mukhopadhayay: জেল থেকে বাড়ি ফিরছে পার্থ-বান্ধবী অর্পিতা, অবশেষে মুক্তি?
Lord of Drugs: লর্ড অব ড্রাগস ওরফে হাজী সেলিমের ডেরায় হানা দিয়ে হাজার হাজার কেজি মাদক বাজেয়াপ্ত করল এনসিবি
Mukundapur: খাস কলকাতায় সোনার দোকানে ডাকাতির চেষ্টা, বাধা পেতেই ব্যবসায়ীকে কোপাল দুষ্কৃতিরা