পুরন্দর চক্রবর্তী, সময় কলকাতা : সিরিয়াল কিলার চার্লস শোভরাজের অপরাধের ইতিহাস আদিঅন্তহীন।খলনায়ক শোভরাজের দুস্কর্মের খতিয়ানেরও যেন শেষ নেই। অথচ শোভরাজের জীবন কল্পজগতের রূপকথা হয়ে উঠেছে। তার অপরাধের আলোচনায় পাতার পর পাতা লেখা হয়েছে। সিরিয়াল কিলার, সার্পেন্ট, বিকিনি কিলার নামে পরিচিত চার্লস শোভরাজ অন্তত বারো থেকে কুড়িটি খুন করে। মূলত সত্তরের দশকেই অধিকাংশ হত্যালীলা সংঘটিত করে শোভরাজ ও তার বাহিনী।একাজে ছিল তার একাধিক সঙ্গী যার মধ্যে নৃশংসতার কারণে উল্লেখযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত অজয় চৌধুরী।
মূলত এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হত্যালীলা চালানো শোভরাজের পরিচিতি ছিল বিকিনি কিলার হিসেবেও । সুদর্শন শোভরাজের রক্তে ছিল অপরাধ। মহিলাদের আকর্ষণ করার সাবলীল ক্ষমতা ছিল তার। ‘ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড’ রুপী শোভরাজ মহিলা ও বিদেশী পর্যটকদের সর্বস্বান্ত করে অবলীলায় খুন করত । হিপিদের দিকেও তার নজর পড়ত প্রায়শই। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে সিদ্ধহস্ত ছিল এই ডাকাবুকো অপরাধী।টাকা, পাসপোর্ট ছিনতাই করে শিকারকে প্রাণে বাঁচিয়ে রাখত না শোভরাজ। ৭৮ বছর বয়সী শোভরাজ অশক্ত শরীরে এখন নেপালের জেলে যাবজ্জ্বীবন কারাবাসের সাজা গুনছে।কিন্তু কি হল তাঁর অতীতের দুস্কর্মের সঙ্গীদের?
হাতচাঁদ ভাবনানি গুরমুখ শোভরাজের পিতা ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত , মা থাইল্যান্ডের অধিবাসী। বাবা মার অশান্ত দাম্পত্য জীবন তাকে অল্প বয়সেই বহির্মুখী করে তোলে। ফরাসি নাগরিকত্বর অধিকারী চার্লস কালক্রমে অপরাধের পাকেচক্রে জড়ায় ।অজস্র কাহিনী জন্ম নিয়েছে চার্লস কে ঘিরে। কিন্তু তার দুস্কর্মের সঙ্গীদের সম্পর্কে রয়েছে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব।সেভাবে কেউ সেভাবে কিছুই জানে না। শত্তরের দশকে শোভরাজের অধিকাংশ খুনকে যে বাস্তবে রূপ দিত সেই সঙ্গী অজয় চৌধুরী আচমকাই যেন উবে যায়। অজয় চৌধুরীর সম্পর্কে শোনাও যায় না আর কিছু। কোথায় গেল সেসময় শোভরাজের সঙ্গে থেকে নৃশংস হত্যাকান্ডে জল্লাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ অজয় চৌধুরী?
সাপের মত গতিবিধি ছিল নায়কোচিত চেহারার শোভরাজের,তাই তাকে দি সার্পেন্ট বলা হত। কিন্তু বলা হয় শোভরাজ নিজে অপরাধ করত না, শোভরাজ তৈরি করত যাবতীয় ব্লু প্রিন্ট আর অপরাধের রূপায়ণ ঘটাত অন্যরা। জেল ভেঙে পালানো যেন তার কাছে ছিল জলভাত। ১৯৮৬সালে সঙ্গীর জন্মদিন পালন করার নাম করে মিষ্টি ও ফলে চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে কারারক্ষীদের অচেতন করে তিহার জেল থেকে সে পালায়।এখানেও এক বিদেশি অভিযুক্ত ছিল শোভরাজের যাকে সামনে রেখে সে পালায়। ফেলিক্স ডেসকোয়েনকে নিয়ে অল্প বয়সে ছোটমাপের অপরাধ সংগঠিত করত শোভরাজ। তার প্রথমা স্ত্রী চান্তাল ও তার অপরাধ কর্মে সঙ্গিনী ছিল। নেটফ্লিক্স সিরিজ ‘দ্যা সারপেন্ট’-এ দেখা গেছে ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া সহ তার সঙ্গী ছিল মারি আন্দ্রে লেকলর্ক ও অজয় চৌধুরী। এদের বাস্তবেও অস্তিত্ব ছিল বলে মনে করা হয়। ক্যান্সারে ১৯৮৪ সালে মারির মৃত্যু হয়। অজয় চৌধুরীর ইতিহাস আজও রহস্যাবৃত।
অজয় চৌধুরীর কি বাস্তবে অস্তিত্ব ছিল? শোভরাজ ভারতের জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ৯৭ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরলেও নেপালে গিয়ে ধরা পড়ে। সেখানে তার নামে ছিল একাধিক খুনের অভিযোগ। আমৃত্যু কারাবাসের সাজা হয় শোভরাজের। তদন্তের সময় নেপাল থেকে সেসময় তল্লাশি শুরু হয় এক ভারতীয়র সন্ধানে।শোভরাজের সে সময়ের সঙ্গী হওয়ায় মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত ছিল সে। প্রকৃত অর্থেই সত্তরের দশকে শোভরাজের ডান হাত ছিল অজয়।
জানা গেছে দিল্লির বাসিন্দা ছিল অজয় চৌধুরী। ভারতে তার সঙ্গে শোভরাজের আলাপ হয়েছিল বলা হলেও তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। তবে তথ্য- অনুসন্ধান করে এবং গার্ডিয়ান সহ বিদেশী বহু পত্র পত্রিকার গবেষণার ভিত্তিতে বলা যায় শোভরাজ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড চূড়ান্ত রূপায়ণ ঘটাত অজয় চৌধুরী । তথ্য প্রমাণ লোপাট করতে হত্যার পরে নিহতকে পুড়িয়ে বিকৃত করে দিত অজয় চৌধুরী।
সম্প্রতি ওয়েব সিরিয়ালে অজয় চৌধুরীকে মালয়েশিয়াতে চার্লস শোভরাজ ছেড়ে চলে যায় এরকমটাই দেখালেও তার পরে বিদেশে দেখা যায় নির্মম ও নিষ্ঠুর অজয় চৌধুরীকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী,১৯৭৬ সালে দেখা গেছিল অজয় চৌধুরীকে। সেবছর শেষবার জার্মানির ফ্রাঙ্কফুটে দেখা যায় শিহরণ জাগানো এই খুনেকে । তারপরে কর্পূরের মত উবে যায় চার্লস শোভরাজের সঙ্গী জল্লাদ অজয় চৌধুরী।তার শেষ ইতিহাস আজও অজানা।।
More Stories
শুধুমাত্র জিনিয়াসরা পেরেছেন নীচের দেওয়া ছবি দুটি থেকে ৪৫ সেকেন্ডে ৩ টি পার্থক্য খুঁজে বের করতে, আপনিও চেষ্টা করে দেখুন
আমজাদ খান : সাহিত্য-অনুরাগী গব্বর চায়ের নেশায় মোষ কিনে ফেলেছিলেন
OPTICAL ILLUSION: হাতে সময় ৫৫ সেকেন্ড, নিচের ছবি দুটি থেকে ৩ টি অমিল খুঁজে ধাঁধার সমাধান করুন