Home » বাঁকুড়ার কর্মকারবাড়িতে ৮০ বছর ধরে কুল দেবতার সঙ্গে পুজো হয় নেতাজির স্পর্শ ধন্য চেয়ারের

বাঁকুড়ার কর্মকারবাড়িতে ৮০ বছর ধরে কুল দেবতার সঙ্গে পুজো হয় নেতাজির স্পর্শ ধন্য চেয়ারের

সময় কলকাতা ডেস্কঃ  বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি থানার দেশুড়িয়া গ্রামের কর্মকার পরিবারে গত ৮০ বছর ধরে বাড়ির ঠাকুর ঘরে কুল দেবতার সঙ্গে পুজো হয় নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের স্পর্শ ধন্য কাঠের চেয়ারের। প্রতি বছরের মত রবিবার নেতাজির ১২৬ তম জন্মদিনে সেই কাঠের চেয়ারটি এলাকাবাসীর দর্শনের জন্য ঠাকুর ঘর থেকে বাইরে বের করে উঠোনে রাখা হয়। চেয়ারের বসানো হয় নেতাজির প্রতিকৃতি। প্রথমে তাতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পরিবারের বয়োজ্যাষ্ঠ ব্যক্তি। তারপর সকলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।নেতাজি যখন বাঁকুড়ায় এসেছিলেন, সেই সময় গঙ্গাজলঘাটিতে একটি জনসভা করেন। মঞ্চে নেতাজি এই কাঠের চেযারটিতে বসে ছিলেন।

১৯৪০ সালের এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে নেতাজির পদধুলি পড়ে বাঁকুড়ার মাটিতে। গান্ধীজীর সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় কংগ্রেস ছেড়ে তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেছেন। দলের সংগঠনের কাজে তাঁর সেই সফর ছিল। সেলুলার জেল ফেরৎ বড়জোড়া ব্লকের মালিয়াড়ার বীর বিপ্লবী প্রভাকর বিরুনী এ জেলার একমাত্র সদস্য তাঁর সফর সঙ্গী। বাঁকুড়ার গান্ধী বলে খ্যাত গোবিন্দপ্রসাদ সিংহ নেতাজির চরম পন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন না। নেতাজি তার প্রতিষ্ঠিত অমরকানন আশ্রমে গিয়ে দেখা করতে গেলেও গোবিন্দপ্রসাদ সিংহ মতানৈক্যের কারণে নেতাজির সঙ্গে দেখা করেননি। কিন্তু কংগ্রেসের কর্মীদের দিয়েই নেতাজির বাঁকুড়া সফরের কর্মসূচির সমস্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। সেই রাজনৈতিক সৌজন্যতা বর্তমানে অকল্পনীয়। কর্মকার পরিবারের ৮৯ বছরের নিরঞ্জন কর্মকার বলেন, ‘পরোক্ষভাবে গোবিন্দবাবুই গঙ্গাজলঘাটিতে নেতাজির জনসভার আয়োজন করে দিয়েছিলেন। আমার তখন ৯ বছর বয়স। আমার বাবা প্রয়াত রামরূপ কর্মকার ছিলেন চিকিৎসক। গঙ্গাজলঘাটিতে চেম্বার করে রোগী দেখতেন। তখন কোনো বাড়িতে চেয়ার ছিলনা। নেতাজির বসার জন্য রানীগঞ্জ থেকে একটি সোফা আনা হয়েছিল। আমার বাবা ওই কাঠের চেয়ারে বসে রোগী দেখতেন। ওই চেযারটিও সোফার পাশে বসানো হয়েছিল তাঁর সঙ্গীদের বসার জন্য। নেতাজি মঞ্চে উঠেই ওই কাঠের চেযারটিতে বসেন।’

নিরঞ্জনবাবু বলেন, ‘সভা শেষে বাবা মাথায় করে চেয়ারটি বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেই থেকে বাবার নির্দেশ ছিল এই চেয়ারে কেউ কোনোদিন যেন না বসেন। সেদিন থেকেই চেযারটির স্থান হয় ঠাকুর ঘরে।’ প্রয়াত চিকিৎসক ডা: রামরূপ কর্মকারের বিশ্বাস ছিল ফের নেতাজি ফিরে আসবেন। তার উত্তরসূরিরাও বিশ্বাস করেন তিনি এখনও বেঁচে আছেন। নিরঞ্জনবাবু বলেন, ‘আমি ভাগ্যবান যে, তাঁর দর্শন লাভ করেছি। ওই দিন নেতাজি হুডখোলা গাড়ি করে আমাদের বাড়ির দরজা দিয়ে রামহরিপুর রাস্তা ধরে গিয়েছিলেন। শালবেদিয়া মোড়ে হাজার লোক অপেক্ষা করছিলেন। তাদের অনুরোধে গাড়ির উপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তার ব্যক্তিত্ব ও চেহারার দ্যূতিতে বেশ কয়েকজন মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন।’ কর্মকার পরিবারের গৃহবধূ শিল্পা কর্মকার বলেন, ‘শ্বশুরবাড়িতে আসার পর থেকেই দেখছি, চেয়ারের পুজো হয়। পরিবারের সকলে এই ঐতিহ্যবাহী চেযারকে প্রণাম করে তবেই বাইরে বের হন। নেতাজিকে দেখিনি কিন্তু ওই চেয়ার দেখে নেতাজির অনুভূতি পাই।’

About Post Author