Home » হানসার বুরুশো জনগোষ্ঠীর রূপসীদের দীর্ঘ যৌনজীবনের কারণ কী?

হানসার বুরুশো জনগোষ্ঠীর রূপসীদের দীর্ঘ যৌনজীবনের কারণ কী?

পুরন্দর চক্রবর্তী, সময় কলকাতা :

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে পাকিস্তান শাসিত গিলগিট- বালিস্তানের অন্যতম জেলা হানসা উপত্যকার মানুষদের গড় আয়ু ১০০ বছর। ব্রুশো সম্প্রদায়ের মানুষদের অনেকেই শতাধিক বছর বাঁচেন, কেউ বা বাঁচেন ১২০ বছর।হানসার জনজাতি বিশেষত ব্রুশো নারীদের সৌন্দর্য অনন্য। পাশাপাশি তাঁরা দীর্ঘ যৌন জীবন যাপন করেন। বুরুশো নারীদের ৬৫ বছর বয়সে মা হওয়ার দৃষ্টান্ত একাধিক। সত্তর বছর ছাড়িয়ে যাওয়ার পরেও পিতা হন পুরুষেরা।এখানের প্রায় ২ লক্ষ ৪৩ হাজার অধিবাসীর সৌন্দর্য, দীর্ঘ যৌন জীবন আর দীর্ঘায়ু হওয়ার গভীরে রয়েছে বিশেষ কিছু কারণ।

সুখের দেশ, অনন্ত জীবন ও যৌবনের দেশ হানসা। ভারতীয়দের গড় আয়ু ৭০ এবং পাকিস্তানের অধিবাসীদের গড় আয়ু ৬৭। পাকিস্তানের হানসা প্রদেশের মানুষদের গড় আয়ু ১০০ হওয়ার পেছনে রহস্য তাহলে কী? কী তাঁদের অনন্ত যৌবনের চাবিকাঠি?

হানসা ভৌগোলিক অবস্থান কারাকোরাম পর্বতমালার কাছে। প্রাকৃতিক দৃশ্য মুগ্ধতা আনে। মুগ্ধতা আনে হানসা নারীদের ভুবনমোহিনী রূপ। হানসার বুরুশো সম্প্রদায়ের মানুষ দাবী করেন গ্রিসের সাথে তাঁদের নাড়ির যোগ রয়েছে। গ্রিসের মানুষদের গড় আয়ু প্রায় ৮৩। পৃথিবীতে যে দেশ গুলিতে মানুষের গড় আয়ু বেশি সেই তালিকায় অন্যতম গ্রিস। আলেকসান্দার ৩২৭ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ভারত আক্রমণ করেন। সৈন্যদের অনেকে কারাকোরাম পর্বতমালার কাছে অবস্থানকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁরা থেকে যান এখানেই। হানসা জনজাতির দাবী, তাঁদের অনেকেরই পূর্বপুরুষ ম্যাসিডোনিয় তথা গ্রিক। তাঁদের ধমনীতে রয়েছে গ্রেকো রোমান রক্ত।

তবে গবেষণা করে দেখা গেছে, গ্রিকদের সাথে হানসা প্রদেশের ব্রুশো জনজাতির চেহারার সাদৃশ্য থাকলেও তাঁদের অনন্ত যৌবনের মুলে আছে তাঁদের জীবনধারা,খাদ্যাভাস ও তাঁদের নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন।

দেখা গেছে, নব্বই শতাংশের ওপরে ব্রুশো জনজাতির মানুষ নিরামিষাশী। তৈলাক্ত বা চর্বি জাতীয় খাদ্য এড়িয়ে চলে হানসা-র মানুষ । সারাদিনে নিয়ম করে তাঁরা খাওয়া দাওয়া করেন । তাঁরা চব্বিশ ঘন্টায় দুবারের বেশি খাদ্য গ্রহণ করেন না। সকালে ও সন্ধ্যার পরে খাওয়া- দাওয়া করেন তাঁরা। দিনে নিয়ম করে তাঁরা করেন শারীরিক কসরৎ। সারাদিনে অনেকটাই সময় ব্যায়াম ও যোগাভ্যাসে কাটান তাঁরা। দীর্ঘ সময় প্রাণায়াম তাঁরা করেন যা তাদের শ্বাসক্রিয়াকে সচল রাখে।

বুরুশো সম্প্রদায়ের সম্বন্ধে বলা হয় তাঁরা পরিশ্রমী জাতি।সময় অহেতুক না কাটিয়ে কঠোর পরিশ্রমে নিজেদের ডুবিয়ে রাখেন তাঁরা। শিক্ষাক্ষেত্রেও সফল তাঁরা। দুশ্চিন্তা যুক্ত কাজের মধ্যে থাকায় অবসাদ গ্রাস করে না হানসা জেলার মানুষদের।

হানসা-র বুরুশো জনজাতির মধ্যে রোগের হার কম। সাধারণ ভাবে ক্যান্সার বা টিউমার তাঁদের প্রায় হয় না।তাঁদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে মূলত বাদাম ও দুগ্ধজাত খাদ্য। এর সাথে এমন দুটি ফল ও ভেষজ নির্যাস তাঁরা খেয়ে থাকেন ও পান করেন যা পুষ্টি ও ভিটামিনে ভরপুর।এর অন্যতম হল এপিক্রট ফল। এপিক্রট বহু রোগ নাশক। হার্টের ও স্কিনের জন্য এই ফল অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া রয়েছে তুমব্রু পাতা সহ পানীয় গ্রহণ। তুমব্রু শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ দূর করে।

কারাকোরাম পর্বতমালার পায়ের তলায় বাস হানসার বুরুশো জনগোষ্ঠী হিমবাহের জলে স্নান করে বলে তাঁদের উজ্জ্বলতা আরও বাড়ে বলে মনে করা হয়।

নিয়ম মেনে জীবনযাপনের শৈলী তাঁরা হাতের মুঠোয় এনেছেন, খাদ্যাভাসে সংযমী তাঁরা – হানসার বুরুশো সম্প্রদায় তাই পেয়েছেন অনন্ত জীবন-যৌবনের জাদুকাঠি।।

About Post Author