হেমা মঙ্গেশকর নামে ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ইন্দোরে জন্মেছিল যে মেয়েটি,বয়স বাড়তেই তিনি পরিচিত হয় মেলোডি কুইন আর ভারতের নাইটিঙ্গেল নামে ।১৯৪২ থেকে শুরু করে আমৃত্যু সুরের মায়ায় আর কোকিলকন্ঠী জাদুতে ভারত ছাড়িয়ে বিশ্বকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন তিনি।লতা ভারত ও ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী গায়িকা।সাত দশকের কর্মজীবনে ভারতীয় সঙ্গীত শিল্পে তাঁর অবদানের কারণে তিনি অজস্র খেতাব পেয়েছিলেন।সবচেয়ে বেশি যা পেয়েছিলেন তা হল মানুষের ভালোবাসা আর সম্মান।তাই রবিবার সকালে তাঁকে হারিয়ে আজ শোকে আচ্ছন্ন গোটা দেশ।
৯২ বছর বয়সে তিনি পাড়িদিলেন পরলোকে। ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৯ সালে ইন্দোরে জন্মেছিলেন। আর, মৃত্যু হল মুম্বাইয়ে। করোনা নিয়ে প্রায় একমাস আগে ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অবস্থার অবনতি হয় শুক্রবার। ভেন্টিলেশনে যমে মানুষে যুদ্ধ চলছিল ।অবশেষে অসম যুদ্ধে পরাজিত হন লতার। রবিবার সকালে জীবনাবসান হয় তাঁর। তিনি থাকবেন না, তাঁর অমর সৃষ্টি থেকেই যাবে।
১৯৪৫ সালে লতা মুম্বইতে চলে আসেন। তিনি ওস্তাদ আমান আলি খানের কাছে হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাঠ নিতে শুরু করেন। বসন্ত জোগলেকারের হিন্দি-ভাষার ছবি আপ কি সেবা মে (১৯৪৬) -এর জন্য ‘পা লাগুন কার জোরি’ গান গেয়েছিলেন তিনি ৷ এর আগে লতা এবং তাঁর বোন আশা বিনায়কের প্রথম হিন্দি ভাষার সিনেমা বাদি মা (১৯৪৫) -এ ছোট একটি ভূমিকায় অভিনয় করেন। সেই সিনেমায় লতা একটি ভজনও গেয়েছিলেন, ‘মাতা তেরে চরন মে’।লতা তাঁর দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে বিভিন্ন সংগীতকার ও সুরকারের তৈরি গান গেয়েছেন ৷ যাঁদের মধ্যে ছিলেন অনিল বিশ্বাস, শংকর জয়কিশান, নৌশাদ আলী, শচীনদেব বর্মন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী, খৈয়াম, রবি, রোশন, কল্যাণজি-আনন্দজি, মদন মোহন, এবং উষা খান্না প্রমুখ। আবার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কিশোর কুমার, মুকেশ মহম্মদ, রফি প্রমুখ গায়কদের সঙ্গেও দ্বৈত সঙ্গীতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি ৷
সুর সম্রাজ্ঞী বাংলা ভাষায় মোট ১৮৫টি গান গেয়েছেন ৷ ১৯৫৬ সালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুর করা ‘প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে’ গানের মাধ্যমে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। একই বছরে তিনি ভূপেন হাজারিকার সুর করা ‘রঙ্গিলা বাঁশিতে’ রেকর্ড করেন। যা ব্যাপক হিট হয়। পাঁচের দশকের শেষের দিকে, তিনি ‘যারে উড়ে যারে পাখি’, ‘না যেওনা’ এবং ‘ওগো আর কিছু তো নয়’ -এর মতো হিট গান রেকর্ড করেছেন। সবক’টি গানই সলিল চৌধুরী রচিত ৷ ১৯৬০ সালে, তিনি ‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে’ রেকর্ড করেছিলেন। যা আজও সুপারহিট। পরবর্তীতে দশকগুলিতে তিনি গেয়েছেন আরও বহু কালজয়ী গান৷ভারতের এই স্বনামধন্য গায়িকা এক হাজারেরও বেশি ভারতীয় ছবিতে গান করেছেন। ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষাতে ও বিদেশি ভাষায় গান গাওয়ার একমাত্র রেকর্ডটি তাঁরই রয়েছে। ১৯৮৯ সালে ভারত সরকার তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করে। ২০০১ সালে তাঁকে ভারতরত্নে ভূষিত করা হয়।
সুর সম্রাজ্ঞীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও।পাশাপাশি কোকিলকন্ঠী শিল্পীকে হারানোর খবরে শোকস্তব্ধ শিল্পী মহল।রাষ্ট্রপতিও তাঁর শোকবার্তায় তাঁর আন্তরিক দুঃখপ্রকাশ করেছেন।প্রধানমন্ত্রী তাঁর শোকবার্তায় জানিয়েছেন,
মুখ্যমন্ত্রীতাঁর শোকবার্তায় জানিয়েছেন, “কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে আমি গভীরতম শোক প্রকাশ করছি।””তাঁর প্রয়াণে সঙ্গীতজগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল।” আমরা এক কিংবদন্তীকে হারালাম।
More Stories
কাশ্মীরের বিজেপি নেতা মুশতাখ বুখারি প্রয়াত , শোক দলমত নির্বিশেষে
RG Kar Incident: মহালয়ার দিন অভয়ার বাড়িতে সিবিআই, কেন?
Banshdroni Accident: মহালয়ায় মহানগরীতে পথ দুর্ঘটনা বাঁশদ্রোণীতে জেসিবির চাকায় পিষ্ট ছাত্র