Home » পৃথিবীকে সুন্দর ও নিরাপদ গড়ে তোলার শপথ যে চিত্রশিল্পীর

পৃথিবীকে সুন্দর ও নিরাপদ গড়ে তোলার শপথ যে চিত্রশিল্পীর

সময় কলকাতা ডেস্ক :

রাজ্য সড়কের পাশবরাবর পাঁজকোলা করে এক তরুণকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটছেন একজন মানুষ। তরুণটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে রাস্তায় রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে, কেউ তাকে তুলছে না দেখে মানুষটির মরিয়া প্রচেষ্টা আহতকে বাঁচানোর। মানুষটির নাম তারক দাস। তিনি পেশায় চিত্রশিল্পী, নেশা তাঁর মানবিকতা।

সেদিনের ঘটনা চোখ খুলে দেয় মানবদরদী শিল্পীর । নিউটাউনে আহত তরুণকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেও বাঁচানো যায় নি আর এই দুঃখ পীড়া দিয়েছে তাঁকে।তারচেয়েও তাঁকে বেশি পীড়া দিয়েছে সর্বব্যাপী মানবিকতার অভাব।সেদিন মৃতের পাশে দাঁড়িয়ে শিল্পী তারক দাস স্থির করে ফেলেন, তিনি মানবিকতার কথা বলবেন রং তুলির মধ্যে দিয়ে। মানুষের বাঁচার কথা বলবেন, তাঁর শিল্পের মধ্যে দিয়ে বার্তা দেবেন জীবনে। সেই চেতনা-ই প্রতিনিয়ত প্রকাশ পাচ্ছে তাঁর শিল্পকর্মের মধ্যে দিয়ে।সম্প্রতি নিউটাউনে স্মার্ট গ্যালারির প্রদর্শনী তাঁর শিল্পকর্মের প্রকাশ।

“মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য ” শব্দবন্ধ চিত্রশিল্পী তারক দাসের জীবনে জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। সমকালীন চিত্রের শিল্পী তারক দাসের চিত্রে বাস্তবায়িত হয়ে উঠেছে জীবনের বিভিন্ন দিক।কখনও তিনি তাই পথ-নিরাপত্তার বার্তাবাহী শিল্পী, কখনও তিনি শিল্পী হয়েও করোনাযোদ্ধা।নিজের বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে তাঁর তুলিতে প্রাণ পায় ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইভ’ বার্তা। পাশাপাশি তারক দাস নিজের স্কুটারেও শিল্পকর্মের মাধ্যমে সচেতনতা ছড়িয়ে দেন মানুষের মধ্যে। তাঁর জীবন ছড়িয়ে আছে শিল্পে , শিল্প ছড়িয়ে আছে জীবনে।

৩৭ বছর বয়সে তারক দাসের বাড়ি মধ্যমগ্রামের উদয়রাজপুরে । কলাক্ষেত্রে তাঁর স্নাতকোত্তর শিক্ষা রবীন্দ্রভারতীর বিশ্ববিদ্যালয়ে।তাঁর বিষয় ও আঙ্গিক সমকালীন চিত্রকলা।তাঁর ছাত্রদেরও তিনি উদ্বুদ্ধ করেন সমকালীন জীবনের ছবি তুলে ধরতে।স্বভাবতই,তাঁর প্রথাগত শিক্ষা মিশে গেছে তাঁর পেশার সঙ্গে যেখানে জীবনের ছবি ফুটে উঠেছে।২০০৬ সালে পেশাদারী ক্ষেত্রে প্রবেশের পর থেকে তাঁর পেন্টিং,বাস্তব জীবনের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। জীবনের পরতে পরতে জুড়ে থেকে সমস্যা থেকে ছবির মধ্যে দিয়ে উত্তরণের দিশা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ শিল্পী তারক দাস।

এক অনন্য জীবনবোধের শিল্পী তারক দাস শিল্পক্ষেত্রে হয়ে উঠেছেন বহুমুখী। যা তাঁকে মানবিকতার ছবি তুলতে ধরতে উদ্যোগী করেছিল সেই পথ নিরাপত্তার জন্য তিনি অংশ নেন বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে। তিনি নিরাপদ জীবনের বার্তা দেন ছবির মাধ্যমে। সেই তিনি-ই আবার জীবনদায়ী জলের গুরুত্ব ছবিতে ফুটিয়ে তোলেন।অ্যাম্বুলেন্সের ছবি ধরা পড়ে তাঁর বিষয়বস্তু হয়ে।আবার করোনা যখন মরণ দাঁত ফোটাচ্ছে দিকে দিকে -তখন শিল্পী তাঁর স্কুটারে করোনা যুদ্ধের আঁকিবুকি দেখে উপকৃত হয়েছেন মানুষ। করোনার বিরুদ্ধে তাঁর অভিনব প্রচার দেখে সাধারণ মানুষ হয়েছেন প্রভাবিত । সহসা রাস্তার মধ্যে করোনার ছবি ও স্বাস্থ্যবিধি লেখা প্রচার সহ একটি স্কুটার দেখে বহু মানুষ থমকে যেতেন।মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা তারক দাসের স্কুটিতে সফর চলেছে করোনার থাবা দেশে পড়ার সময় থেকে। করোনা সংক্রমণ স্তব্ধ করার দিশা তাঁর শিল্পকর্মে।লকডাউনের ছবি জীবনযাত্রাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে আর তাকে শিল্প নৈপুণ্য দিয়ে রূপ দিয়েছেন তারক দাস।শিল্পীর শিল্পের মিশেল ঘটছে মানুষের উপকারের ব্রতর সঙ্গে ।

মধ্যমগ্রামের শিল্পী তারক দাস তাঁর শিল্পকে তাঁর জীবনযাপন ও তাঁর ব্যবহারিক জীবনের মাধ্যমে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছেন।কখনও বাড়ির দেওয়াল, কখনও স্কুটার,কখনও গাছ, কখনও শুধুই ক্যানভাস বয়ে নিয়ে চলে তার শৈল্পিক সত্ত্বার নিদর্শন। তাঁর শিল্পচেতনা হয়ে উঠেছে শাশ্বত।

চিত্রশিল্পী তারক দাস জীবনের শিল্পী। তাঁর লক্ষ্য, মানুষ যেন ভালো থাকে আর একে অন্যের হাত ধরে এগিয়ে চলে মানবিক হয়ে । জীবনের জয়গান তাঁর শিল্প চেতনার অন্যতম এবং অপরিহার্য আঙ্গিক। তাঁর অঙ্গীকার, পৃথিবীকে আরও বাসযোগ্য করে তোলা আগামীর জন্য।।

About Post Author