Home » হালখাতার খাওয়াদাওয়া ও হালখাতার ইতিহাস

হালখাতার খাওয়াদাওয়া ও হালখাতার ইতিহাস

পুরন্দর চক্রবর্তী, সময় কলকাতা ডেস্ক,১৪ এপ্রিল : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের  পটলডাঙ্গার টেনিদার গল্পের সঙ্গে কে না পরিচিত! “হালখাতার খাওয়াদাওয়া” গল্পে নতুন বছরের প্রথম দিনে হালখাতার আয়োজন করে, অসামান্য খাদ্য তালিকার কথায় প্রলুব্ধ করে অনেকদিনের বাকি থাকা টাকা পয়সা আদায়ের গল্প জমজমাট  হাস্য পরিহাসে বর্ণনা করা হয়েছে। হালখাতা যতই নববর্ষের সংস্কৃতির সঙ্গে,উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকুক হালখাতার গভীরে রয়েছে টেনিদার গল্পের মতই রহস্য। নববর্ষের হালখাতার খাওয়াদাওয়া বা প্রথা উদযাপনের মূল তত্ত্বকথা লুকিয়ে আছে  পাওনা গন্ডা আদায়ের মধ্যে অথবা ব্যবসায়িক সম্পর্ক কায়েমের মধ্যে। বর্তমানে নববর্ষে  অমৃতযোগে পালিত হওয়া হালখাতা পর্বের সূচনা কবে হয়েছিল?

কথিত আছে,  মহামতি আকবরের সময় থেকে, সম্রাটের নির্দেশবলে, চালু হয়েছিল হালখাতার রেওয়াজ। অর্থাৎ ষোড়শ শতকের শেষ ভাগে চালু হয় হালখাতার রেওয়াজ।  এও বলা হয় মোঘল আমলে বাংলা বছরের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে প্রজাদের খাজনা পরিশোধ করতে হত। রাজস্ব আদায়ের লগ্ন ছিল নতুন বছর, হালখাতার প্রচলন তখনও ছিল। বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন  জমিদার-ভুস্বামীরা। আকবর আজ থেকে প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগে হালখাতা ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন দিনক্ষণ, মেনেই। বলা হয়, বর্ষপঞ্জি মেনে এই প্রথা উদ্ভব ঘটিয়েছিলেন আকবর। ঐতিহাসিকদের একটি অংশ দাবি করেন  ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলা নববর্ষের প্রচলন করেছিলেন মহামতি আকবর। আবার অপর একদল ঐতিহাসিক এর মতে নববর্ষের প্রচলন তারও প্রায় ১০০০ বছর আগে। ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে  শশাঙ্ক প্রথম নববর্ষের প্রচলন করেছিলেন। সে যাই হোক, নববর্ষের প্রাক মুহূর্তে খাজনা আদায়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হালখাতা। ঐতিহাসিকদের  একাংশ এও দাবি করেন, বঙ্গে সুনির্দিষ্ট ভাবে আকবরের আমলের  শতাধিক বছর পরে, মুর্শিদকুলি খাঁ-র আমল থেকেই হালখাতার প্রচলন হয়েছিল। যাইহোক, হালখাতার রেওয়াজ আজকের নয় বরং বহু প্রাচীন এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই।

হালখাতা নামটি এল কীভাবে, এলই বা কোথা থেকে তা নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। একদিকে বলা হয়, আকবরের সময় থেকে হাল শব্দটি প্রয়োগ হত ফারসি শব্দ যার অর্থ নতুন । পুরনো বছরের যাবতীয় চুকিয়ে ফেলার ফেলার লগ্ন ছিল হালখাতার প্রহর। যাবতীয় হিসাব লেখার খাতা ছিল হালখাতা। আবার হাল কথাটি লাঙল যা কিনা কৃষি সঙ্গে জড়িত, সেজন্যই কৃষিতে বিনিয়োগের হিসাব লেখার খাতাই ছিল হালখাতা। সারা বছরের রাজস্ব বা খাজনা আদায়ের জন্য হালখাতার ব্যবহার। মুর্শিদকুলি খাঁর আমল থেকে যে হালখাতার প্রচলন হয় সেখানে হালখাতা বলতে খেরোর খাতা কেও বোঝানো হত। মোটা খাতায় স্বস্তিকা চিহ্ন দিয়ে হিসেব লিখে রাখা হত। হালখাতা সুপ্রাচীন ইতিহাস এখন বঙ্গ জীবনের রন্ধে রন্ধ্রে জড়িয়ে গিয়েছে। হালখাতা এখন উৎসব উদযাপনের সমার্থক। গণেশ লক্ষীর পুজো হয়। অনেকক্ষেত্রে হালখাতা, ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর। তারজন্য আয়োজন হয় ভোজের  যাকে বলা হয় হালখাতার খাওয়াদাওয়া।।

আরও পড়ুন সাংবাদিকের চোখে নতুন বাংলা বছর : পঞ্জিকা ও বাঙালির নস্টালজিয়া

About Post Author