Home » মুকুটমণি কি বিধায়কের মুকুট ফিরে পাবেন?

মুকুটমণি কি বিধায়কের মুকুট ফিরে পাবেন?

পুরন্দর চক্রবর্তী, সময় কলকাতা, ৮ জুলাই :কয়েকটা মাস আগের কথা। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এসে রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থীপদ পান। বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারে খামতি ছিল না তাঁর। লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই তৃণমূলের হয়ে ভোটারদের দরজায় দরজায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রেও হইচই করে ভোটের প্রচার করেছিলেন মুকুটমণি অধিকারী। কোনওদিক থেকেই সুবিধে হয়নি। সদ্য সদ্য বিজেপি থেকে এসে বিজেপির প্রার্থী জগন্নাথ সরকারের কাছে বিরাট ব্যবধানে হেরে যান মুকুটমণি। আবার দলত্যাগ করে লোকসভা ভোটে দাঁড়ানোয় বিধায়ক পদও খারিজ হয়ে যায়। ফলে বিধায়কহীন রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে আবার বিধানসভা উপনির্বাচন। তবে মুকুটমণির সৌভাগ্য যে দল তাঁর ওপরে বিধানসভা উপ নির্বাচনেও আস্থা রেখেছে। পুরনো মসনদ ফিরে পেতে উপনির্বাচনের প্রচারপর্বও শেষ। এখন ভোট এবং ভোট শেষে ১৩ তারিখের দিকে চোখ। তাঁর বিধায়কের মুকুট ফিরে পাবেন কি মুকুটমণি?

জুন মাসের ৪ তারিখে লোকসভা ভোটের যে ফল প্রকাশিত হয়, তা মুকুটমণি অধিকারীকে খুব আশাবাদী করার মত নয়। রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে তিনি ৮৬ হাজারের বেশি ভোট পেলেও বিজেপি এই কেন্দ্রে ১ লক্ষ ২৩ হাজারের বেশি ভোট পায়। অর্থাৎ সদ্য হওয়া লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এই বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে থেকেছে প্রায় ৩৭ হাজার ভোটে। এই ব্যবধান ঘুচিয়ে জেতা খুব সহজ হবে না তাঁর পক্ষে। যতই কয়েকদিন আগে পর্যন্ত তিনি এই কেন্দ্রের বিধায়ক থাকুন, তখন তাঁর দলের নাম ছিল বিজেপি। ২০১১ ও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এখানে তৃণমূল জয়ী হলেও ২০২১ সালে পট পরিবর্তন হয়। মুকুটমণির হাত ধরে বিজেপি রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে জয়ী হলেও বনগাঁ এবং রানাঘাট জুড়ে বিজেপির কর্তৃত্ব কায়েম হয়ে যায় ২০১৯ সালে। মূলত মতুয়া অধ্যুষিত রাজ্যের এই অংশে বিজেপির জয়ের পেছনে ছিল গুরুচাঁদ – হরিচাঁদ ঠাকুরের ধর্মীয় আদর্শ মেনে চলা মানুষদের সমর্থন।

এবার লোকসভা ভোটের আগে সংশয় ছিল। সিএএ ইস্যু ঘিরে মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ হয়তো বিজেপি থেকে মুখ ফেরান কিনা তা নিয়ে দোলাচল ছিল কিন্তু ২০২৪ লোকসভা ভোট প্রমাণ করে দেয় মতুয়া গোষ্ঠী বিজেপির সঙ্গেই আছে। স্বাভাবিকভাবেই বিজেপির মনোজ কুমার বিশ্বাসের সম্ভাবনা কাগজে-কলমে বেশি। এই কেন্দ্র বিজেপি ধরে রাখলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। সিপিআইএমের অরিন্দম বিশ্বাস ভোট যুদ্ধে থাকলেও বামেদের এখানে উপনির্বাচনের দাগ কাটার কোনও ক্ষীণ আলো দেখা যাচ্ছে না। লড়াই মনোজ – মুকুটের। তবে মনোজের অসুবিধে দলীয় কোন্দল। মনোজের বিরুদ্ধে অসন্তুষ্ট ছিল বিজেপির একটি অংশ। তাঁকে বহিরাগত তকমা দিয়ে বিজেপির এক অংশ ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। উভয় দল কেবলমাত্র প্রার্থীদের উপরে ভরসা করছে না। দায়িত্ব বর্তেছে পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় ও শংকর সিংহের ওপরও। ২০২১ সালে দুজনেই রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। এই লড়াইয়ে তৃণমূলের শংকর সিংহকে হারিয়ে দেন বিজেপির পার্থসারথি। তাই রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রের উপনির্বাচন যেন তাঁদেরও লড়াই। এখন দেখার উপনির্বাচনের যুদ্ধে কে জেতেন।

 

রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে একাধিক ইস্যু রয়েছে যার মধ্যে দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা অন্যতম। তৃণমূল বলছে জেতার জন্য তাদের হাতে রয়েছে বেশ কিছু তাস। স্বাভাবিকভাবেই, প্রকল্প ও উন্নয়নকে রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্র আট বছর পরে ফিরে পেতে হাতিয়ার করবে তৃণমূল। তবে বিজেপি আত্মবিশ্বাসী, এরমধ্যেই শুভেন্দু অধিকারী নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। শুভেন্দু ইতিমধ্যেই গর্জন করেছেন, তাঁর অভিযোগ, এখানে ভোট জিততে পুলিশকে কাজে লাগাতে চাইছে শাসক দল। নবান্ন থেকে পুলিশের কাছে বিশেষ নির্দেশ রয়েছে, অভিযোগ রাজ্যের বিরোধী দলনেতার। তবে যাই হোক না কেন, বিধানসভা ও লোকসভা ভোটের প্রেক্ষাপট যতই ভিন্ন হোক, উভয় দলের লড়াই কঠিন। একদিকে লোকসভা ভোটে রাজ্য জুড়ে তৃণমূল হাওয়া, অন্যদিকে দলেও তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিক্ষোভ। বিজেপি প্রার্থী মনোজের জয়ও যেমন সহজ নয়, তৃণমূলের লড়াই আরও কঠিন। সবেমাত্র শেষ হওয়া লোকসভা ভোটে ১২ শতাংশ ভোটের মার্জিনে পিছিয়ে থেকে বিধানসভা উপনির্বাচনে মুকুটমণির মুকুট লাভ করার নিশ্চিত কোনও প্রতিশ্রুতি নেই। সাম্প্রতিক সমীকরণ তেমনটাই বলছে।।

About Post Author