নরেন্দ্র মোদির সফরের আগে ফের উত্তপ্ত মণিপুর। ভাঙে ফেলা হল প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর কাঠামো। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষ দুষ্কৃতীদের। এলাকায় আরও সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন।
চার দশক পরে কোনও প্রধানমন্ত্রীর পা পড়তে চলেছে মণিপুরে কুকি অধ্যুষিত এলাকায়। শনিবারই মণিপুর যাওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। এই প্রতীক্ষিত সফরের আগেই ফের অগ্নিগর্ভ পাহাড়ি রাজ্য। বৃহস্পতিবার রাতে, নতুন করে উত্তেজনা ছড়ালো মণিপুরের চুড়াচাঁদপুরে। গভীর রাতে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে দুষ্কৃতীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এমনকী, প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য যে ব্যানার টাঙানো হয়েছিল, সেই ব্যানারও ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার, চুড়াচাঁদপুরের পিস গ্রাউন্ডে সভা করার কথা প্রধানমন্ত্রীর। ওই সভাস্থল থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরে এই ঘটনা ঘটে। প্রধানমন্ত্রীর আসার জন্য হেলিপ্যাড করা হয়েছে পিসনমুন গ্রামে। জানা গিয়েছে, সেখানেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের জন্য নির্মিত সাজসজ্জা ভাঙচুরের চেষ্টা করা হয়। নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দিতে গেলে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এই হামলার ঘটনার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কত জন ওই হামলা চালায় এবং হামলাকারী কারা তা নিয়ে কিছু বলতে চাইছেন না সেখানকার পুলিশ আধিকারিকরা। যদিও বৃহস্পতিবার রাতের এই ঘটনার পরে কর্তৃপক্ষ এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছেন। এলাকায় আরও সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। মণিপুরে শেষবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পা পড়েছিল ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। তারপর ২০২৩ সালের মে মাসে রাজ্যজুড়ে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে জাতিগত দাঙ্গার আগুন। প্রাণ যায় শতাধিক মানুষের, হাজার হাজার পরিবার হারায় ঘরবাড়ি। দুই বছর পেরিয়েও অশান্তির ছায়া কাটেনি উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য থেকে। এই সময়ে বিদেশ সফর কিংবা ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টা, সবেতেই দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু মণিপুরে যাওয়ার সময় বের করতে পারেননি তিনি। এই অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা বারবার। লোকসভা অধিবেশন থেকে শুরু করে সাংবাদিক সম্মেলন, প্রতিবারই এই প্রশ্নে বিঁধতে হয়েছে মোদিকে। এবার বিরোধীদের লাগাতার চাপের পর এবার মণিপুর সফরে প্রধানমন্ত্রী। ২০২৩ সালের মে মাস থেকে জাতি সংঘর্ষে জ্বলছে মণিপুর। কুকি-মেতেই সংঘাতের বলি হয়েছেন বহু মানুষ। শান্তি ফেরাতে লাগাতার চেষ্টা হলেও দফায় দফায় অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যটি। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারান প্রায় ২৫০ জন মানুষ, ঘরছাড়া হয়ে ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ আজও শরণার্থী শিবিরে দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু দু’বছর কেটে গেলেও মণিপুরে পা রাখেননি প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীরা সরব হলেও আশ্চর্যজনকভাবে এই ইস্যুতে কার্যত নীরবই থেকেছেন তিনি। সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একাধিকবার বিবৃতি দিলেও প্রধানমন্ত্রী মোদি সেভাবে উত্তপ্ত রাজ্যটি নিয়ে মুখ খোলেননি। এর মধ্যে আবার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি একাধিকবার মণিপুরে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন। তাতে প্রধানমন্ত্রীর উপর চাপ আরও বেড়েছে। এবার প্রায় ২ বছর ধরে হিংসাদগ্ধ মণিপুরে অবশেষে পা পড়তে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। শনিবার মণিপুরে জোড়া কর্মসূচি রয়েছে মোদির। প্রথম সভাটি হিংসা কবলিত চুড়াচাঁদপুরের পিস গ্রাউন্ডে। চুড়াচাঁদপুরের পরে ইম্ফলের কাংলা ফোর্ট এলাকাতেও সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। দু’টি সভা থেকে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার কথা প্রধানমন্ত্রীর।
নরেন্দ্র মোদির সফরের আগে ফের উত্তপ্ত মণিপুর

More Stories
বিদায় আসরানি, চলে গেলেন কিংবদন্তি কৌতুক-অভিনেতা
জম্মু-কাশ্মীরে নাশকতার ছক ভেস্তে দিল সেনা, গুলির লড়াইয়ে শহিদ এক জওয়ান
ট্রাম্প প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে ব্যঙ্গ রাহুল গান্ধির, ভিসা নীতি নিয়ে প্রচ্ছন্ন বার্তা মোদির