Home » উত্তরবঙ্গে মোদির দূত, বিপর্যয়ের মধ্যেও তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা

উত্তরবঙ্গে মোদির দূত, বিপর্যয়ের মধ্যেও তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা

বৃষ্টি ও ভূমিধসে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের নাগরাকাটা সোমবার রাজনৈতিক সংঘাতের কেন্দ্রেও পরিণত হয়। দুর্যোগ-বিপর্যস্ত জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন সাংসদ খগেন মুর্মু এবং শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। ইটের ঘায়ে রক্তাক্ত হন খগেন। শঙ্করকেও ধাক্কা দিয়ে চড়-ঘুষি মারার চেষ্টা হয়।

 

এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় বাংলা। তেড়েফুঁড়ে ওঠে বিজেপি। এসবের মাঝেই এবার রিপোর্ট চাইলেন স্পিকার। মঙ্গললবার শিলিগুড়ি পৌঁছে কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানান, রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। রিপোর্ট দিতে দেরি হলে পদক্ষেপ করা হবে।
নিয়ম অনুসারেই উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান রিজিজু। একই সঙ্গে খগেন এবং শঙ্করের উপর হামলার ঘটনা নিয়ে রিজিজু বলেন, এটা কেবল সাংসদ-বিধায়কের বিষয় নয়, এটা প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তার বিষয়। রিজিজুর নিশানায় বাংলার শাসকদল তৃণমূলল।
বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে রিজিজু জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে উত্তরবঙ্গে এসেছেন তিনি। পাহাড়ি এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখে তা রিপোর্ট দেবেন।সোমবার রাতে সেই ঘটনাকে কেন্দ্রে করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাপানউতোরও তীব্র হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রীর সাফ কথা, যেভাবে বিজেপির সহকর্মীরা—যাদের মধ্যে একজন বর্তমান সাংসদ ও বিধায়কও রয়েছেন—পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি তৃণমূল কংগ্রেসের অসংবেদনশীলতা ও রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার করুণ অবস্থার প্রতিফলন। যদিও মোদির এ কথা মাটিতে পড়তে না পড়তে, সপাট জবাব দিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কোনও প্রমাণ, তদন্ত বা প্রশাসনিক রিপোর্ট ছাড়াই সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেস এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। এটি শুধু রাজনৈতিক নীচতা নয়, বরং সাংবিধানিক মূল্যবোধের পরিপন্থী, যে মূল্যবোধ রক্ষার শপথ তিনিই নিয়েছিলেন। সাধারণত, এ ধরনের ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও জবাব দেওয়া বকেয়া রাখেন না। সোমবারও তার অন্যথা হয়নি। মমতা সাফ জানিয়েছেন, যে নির্বাচনী কেন্দ্রের মানুষ নিজেরাই একজন বিজেপি বিধায়ককে বেছে নিয়েছেন, সেই কেন্দ্রেই ঘটে যাওয়া এই ঘটনাকে তৃণমূলের তথাকথিত গুণ্ডামি বলে আখ্যা দেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত? এই ধরনের অযথা, অপ্রমাণিত অভিযোগ শুধু অপরিপক্বই নয়, দেশের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত একজন নেতার মর্যাদাকেও খাটো করে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুর নিয়ে খোঁচা দিতেও ছাড়েননি মমতা। মণিপুরে জাতিগত হিংসার ৯৬৪ দিন পর গিয়ে সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন, তাঁর হঠাৎ বাংলার প্রতি এই অতিরিক্ত উদ্বেগ সহমর্মিতা নয়—বরং নিছক রাজনৈতিক নাটক বলেই আখ্যা দেন মমতা। তবে এই তর্জা যে শুধু প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যেই থমকে থেকেছে, তা নায়, আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে শামিল বিজেপি-তৃণমূল দুই শিবিরই। দফায় দফায় তেঁড়েফুঁড়ে আসরে নেমেছে বিজেপি।

About Post Author