সময় কলকাতা, সুমিত চৌধুরী:-হাসদেও জঙ্গল বাঁচানোর লড়াই নিজস্ব প্রতিনিধি: সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের পর ছত্তিশগড়ের হাসদেও বাঁচানোর লড়াইতে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। ছত্তিশগড় রাজ্যের সিডিউল ট্রাইব কমিশন অবশেষে মেনে নিয়েছে যে আদিবাসী এলাকা কান্টে এবং পারস এলাকায় দ্বিতীয় পর্যায়ের কয়লা উত্তোলনের প্রয়োজনে খনি চালু করবার ক্ষেত্রে জনজাতির গ্রাম সভায় সম্মতি আদায়ের ব্যাপারে সরাসরি জালিয়াতি করা হয়েছে। এই জালিয়াতি এতটাই প্রকট যে রাজ্য সরকারের ট্রাইবাল কমিশন সুপারিশ করেছে যে কান্টে এবং পারস এলাকায় দ্বিতীয় পর্যায়ের কয়লা খনি উত্তোলনের জন্য যে অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেটা সরাসরি বাতিল করা হোক।
উল্লেখ্য নভেম্বর মাসের সুপ্রিম কোর্ট একটি জনস্বার্থ মামলায় ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ দিয়েছে। ওই জনস্বার্থ মামলায় বলা হয়েছে হাসদেও এলাকা যেটা মধ্য ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গল ,কয়েক কোটি মানুষের অস্তিত্বের মূল শর্ত হিসেবে যা কাজ করছে, সেখানে বনসৃজন এবং বন সংক্রান্ত ছাড়া অন্যান্য সমস্ত বাণিজ্যিক কাজকর্ম বন্ধ করা হোক। ছত্তিশগড়ের হাসদেব অরণ্য নিয়ে বিতর্ক অনেক পুরনো। ১৭০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়ানো এই হাসদেও বনাঞ্চল এবং হাসদেও নদী কার্যত মহানদীর জলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এই বনাঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে ২৫ টি বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণ, ১২৭ রকমের দুর্লভ মেডিসিন প্লান্টস, এবং ৯২ টি প্রজাতির পাখি। এর আগে কংগ্রেস আমলে কান্টে এবং পারসা এলাকায় প্রথম দফার কয়লা উত্তোলনের জন্য হাসদেও বনাঞ্চল এলাকায় খননের কাজের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তখন থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত।
এই অঞ্চলের বাসিন্দা আদিবাসীরা প্রায় ৩০০ কিলোমিটার লংমার্চ করে রাজধানী রায়পুরে গিয়ে এই খননের অনুমতি দেয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ধারাবাহিক প্রতিবাদের মুখে কংগ্রেস সরকার ২০২২ সালে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে যে এই এলাকায় হাসদেও অরণ্য এবং বনাঞ্চলকে বাঁচানোর স্বার্থে দ্বিতীয় পর্যায়ের আর খননের অনুমতি দেয়া হবে না। সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া হলফনামা তে ছত্রিশগড় রাজ্যের তৎকালীন রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছিল কান্টে এবং পারস ব্লক এলাকায় প্রথম পর্যায়ের খননের এলাকায় যে কয়লার রিজার্ভ রয়েছে, সেটা আগামী কুড়ি বছরের জন্য বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির প্রয়োজনীয় কয়লা সরবরাহের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত। কিন্তু ঘটনা হলো ২০২৩ এর নির্বাচনে ছত্রিশগড়ে বিজেপি রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসবার পরই আদানির মালিকানাধীন কোম্পানিকে এই এলাকায় দ্বিতীয় পর্যায়ে খননের কাজের অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়।
রাজ্যসভায় একটি প্রশ্নের উত্তরে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে চলতি বছরে এই প্রকল্পের কাজের জন্য প্রায় দেড় লক্ষ গাছ কাটতে হবে। এরপরে সুপ্রিম কোর্টে মামলা রুজু হয় আর পাশাপাশি আদিবাসী জনতা সরাসরি প্রতিরোধে নামে। বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে দুজন পুলিশ কর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় ১০ জন আদিবাসী আন্দোলনকারীকে ইতিমধ্যে জেলে পোরা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক অলোক শুক্লা জানিয়েছেন শুধুমাত্র কর্পোরেটের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে মধ্য ভারতের একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য শুধু ধ্বংস হচ্ছে তা নয় মহানদীর সূর্যের উপর নির্ভরশীল কয়েক লক্ষ কৃষকের ভবিষ্যতে অনিশ্চিত করে তোলা হচ্ছে। সংশোধিত পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী আদিবাসী এলাকায় খননের কাজ করতে গেলে গ্রাম সভা ডেকে বাসিন্দাদের অনুমতি নিয়ে আবশ্যক কিন্তু সেই কাজ করা হচ্ছে পুরোপুরি জালিয়াতি করে। একাধিক ক্ষেত্রে পুলিশকে সামনে রেখে জোর করে গ্রাম সভা বসিয়ে অনুমতি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
এইসব অভিযোগ পাওয়ার পরই নড়েচড়ে বসে তদন্ত করতে নেমে রাজ্য সরকারের উপস্থিতি কমিশন আবিষ্কার করেছে যে গ্রাম সভার সম্মতি পাওয়া গেছে বলে যে কাগজ আদানি কোম্পানির তরফে জমা দেয়া হয়েছে তা ভুয়ো। এই লড়াই কেবলমাত্র ওখানকার বাসিন্দা কয়েক হাজার আদিবাসী জনতার একদমই নয়। এ লড়াই প্রকৃতি এবং সভ্যতাকে বাঁচানোর লড়াই।সুপ্রিম কোর্টে যে জনস্বার্থ মামলা হয়েছে সেখানেও এ লড়াই শেষ নয়। মানব সভ্যতাকে বাঁচানোর জন্য এ লড়াই চলতে থাকবে।
মধ্য ভারতের গুরুত্বপূর্ণ এই বনাঞ্চল যদি লুট হয়ে যায় তাহলে সামগ্রিকভাবে আমাদের দেশের যে বাস্তুতন্ত্র সেটার মারাত্মক ক্ষতি হবে। জীব বৈচিত্র্য বিনষ্ট হবে। সামগ্রিকভাবে প্রশ্নের মুখে পড়বে আমাদের যাপিত জীবন।


More Stories
টিম ইন্ডিয়ার আগুন ধুয়ে দিল ক্যানবেরার বৃষ্টি
যোগীরাজ্যে একের পর এক খুন হচ্ছেন সাংবাদিক, এবার খুন প্রয়াগরাজে
ট্রেনে পাথর ছোড়া বন্ধ করতে কোমর বেঁধে নামছে রেল