সময় কলকাতা ডেস্ক:- মুসলিম বিধায়কদের ‘চ্যাংদোলা’ করে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলার হুমকি। এই হুমকি দিয়েছেন স্বয়ং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মন্তব্য শুভেন্দুর, কিন্তু ফাঁপড়ে পড়েছে দল। মুখে কেউ কিছু না বললেও ধীরে ধীরে বুলি ফুঁটছে দলের একাধিক নেতার মুখে। শুভেন্দুর মন্তব্যে দলেরই ক্ষতির আশঙ্কায় বিক্ষোভ বিজেপিতে। তুঙ্গে তর্জা।বিরোধী দলনেতার চ্যাংদোলা মন্তব্যে হতাশ দলেরই নেতা-কর্মীরা। দেরীতে হলেও ধীরে ধীরে ক্ষোভপ্রকাশ করছেন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই বঙ্গ বিজেপিতে বিধানসভা ভোটের আগে এই হতাশা প্রকাশে খানিকটা অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির। ঘটনার সূত্রপাত গত ১১ মার্চ। সেদিন বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সামনেই তৃণমূলের সংখ্যালঘু বিধায়কদের প্রত্যক্ষ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বলেছিলেন, ক্ষমতায় আসার পর তাদের চ্যাংদোলা করে রাস্তায় ফেলবেন!
শুভেন্দুর মন্তব্য ছিল
প্রাথমিকভাবে পদ্মশিবির ক্রমাগত শুভেন্দুর মন্তব্যকে সমর্থন করেছে। ড্যামেজ কন্ট্রোল করার চেষ্টা চালিয়েছে।তবে ধীরে ধীরে শুভেন্দুর এই মুসলিম বিধায়কদের চ্যাংদোলা করে রাস্তায় ফেলে দেওয়ার যে হুঙ্কার নিয়ে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হতে শুরু করেছে পদ্ম শিবিরের সংখ্যালঘু নেতা-কর্মীদের মধ্যেই। শুভেন্দুর মন্তব্য ছিল, বিজেপি ক্ষমতায় এলে তৃণমূলের যে কজন মুসলিম বিধায়ক জিতে আসবে, তাদের চ্যাংদোলা করে রাস্তায় ছুড়ে ফেলবেন। নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে বিরোধী দলনেতার এমন মন্তব্যে হতাশ তাঁরা। কার্যত শুভেন্দুর এমন হুঁশিয়ারিতে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ বিজেপির সংখ্যালঘু নেতাদের। বিধানসভার সামনে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলনেতার চ্যাংদোলা মন্তব্যে বসিরহাটের স্বরূপনগরের বিজেপি মণ্ডল সভাপতি তারক সাহার বক্তব্য, বিরোধী দলনেতা বলছেন সংখ্যালঘু ভোটের প্রয়োজন নেই। কোনও রাজনৈতিক নেতা এধরনের কথা বলতে পারেন না। তারক সাহার প্রশ্ন, তাহলে তাঁরা দলের হয়ে সংখ্যালঘু কর্মীরা কেন খেটেছেন?
তবে শুধু তারক সাহাই নন, একে একে মুখ খুলেছেন বিজেপি একাধিক কর্মীও।স্বাভাবিকভাবেই শুভেন্দুর এই মন্তব্যে দলের রাজ্যস্তরের নেতা-নেত্রীরা ক্ষোভপ্রকাশ না করলেও ধীরে ধীরে শুভেন্দুর মন্তব্যের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে বিজেপির সংখ্যালঘু সেলেই। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে দলেরই নানা মহলে ক্ষোভ ছড়ানোর প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ একধাপ এগিয়েছে বলেছেন, তাহলে বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চা তুলে দিক। বলে রাখা ভালো, বিরোধী দলনেতার এমন মন্তব্য কাঙ্খিত নয় বলে জানিয়েছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বাংলায় বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির অভিযোগ থাকলেও কখনও তা এভাবে প্রকট হয়নি। বিধানসভায় হিন্দু হিন্দু বলে গলা ফাটানোর নজিরও বোধহয় নেই। তবে এমন কী হল যে ছাব্বিশের ভোটের আগে হঠাৎ করে বিজেপির এই ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি প্রকট হয়ে উঠল ! আসলে, এই কড়া পাকের হিন্দুত্বের রাজনীতি কৌশলগতভাবেই করছেন শুভেন্দুরা।
অনেকের মতে
বিধানসভা ভোট পর্যন্ত এই হিন্দু হিন্দু বুলি চলবে। কারণ, শুভেন্দুরা বুঝে গিয়েছেন, হিন্দু ভোটের আরও মেরুকরণ না ঘটলে তাঁরা ৪০ শতাংশ ভোটের বেড়া টপকাতে পারবেন না। আবার তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্ক সমৃদ্ধ রয়েছে সংখ্যালঘু ভোটে। সুতরাং শুভেন্দুদের কৌশল ও স্বার্থ এখানে জলের মতই স্বচ্ছ। তবে বিজেপির এই রণকৌশল সুকৌশলে প্রথম থেকেই লুপে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও ছাব্বিশের আগে বিজেপির রণকৌশলের পাল্টা চাল দেওয়া শুরু করে দিয়েছেন। তবে এসবের মাঝেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, বিজেপির এই যে নাটকীয়তা, পাগড়ি পরা, গেরুয়া বসন, হিন্দু স্লোগান—তার মোড়কে সরকার প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার বিষয় আ শয় গুলো আদৌ দেখা যাচ্ছে নাকি হারিয়ে যাচ্ছে? বিজেপির চাল বুঝে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাত দেওয়ার কৌশল খুঁজে ফেলবেন না তো? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে সেখানেও। তবে এসবের মাঝেই শুভেন্দুর চ্যাংদোলা মন্তব্যে এবার শাসক শিবিরই সরব হয়, সরব বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের নেতা-কর্মীরাই।
More Stories
মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে পুজো চাঁদের হাঁট, কন্যাকে নিয়ে সামিল অভিষেকও
গাড়়ি ঘিরে তৃণমূলের বিক্ষোভ, প্রাণঘাতী হামলার দাবি শুভেন্দুর
কালীপুজো থেকে ভাইফোঁটায় থাকবে স্বস্তি! জানুন আবহাওয়ার আপডেট