সময় কলকাতা ডেস্ক:- দিঘায় জগন্নাথধাম যাত্রা এবং সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিলীপ ঘোষের সস্ত্রীক ছবি প্রকাশ্যে আসা। বঙ্গ রাজনীতির অধ্যায়ে নিঃসন্দেহে এ এক বড় ঘটনা। একদিকে জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন যেমন একটি বড় ঘটনা। তেমনই, গত ৩০ এপ্রিল থেকে সেই মন্দির উদ্বোধনের থেকেও বড় ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সস্ত্রীক দিলীপ ঘোষের সাক্ষাত্। একপক্ষ শাসক, অন্যপক্ষ বিরোধী। কিন্তু, এটাই কি কারণ হতে পারে বড় আঙিনায় এই সাক্ষাত্ নিয়ে যাওয়ার? সৌজন্যের রাজনীতির কি কোনও ব্যাখ্যা থাকতে পারে না? থাকতে তো অবশ্যই পারে। তবে বাংলার রাজনীতি বর্তমানে যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে, সেখানে এই সাক্ষ্যাত্ হয়তো সত্যিই সৌজন্য সাক্ষাত্ হিসেবে উড়িয়ে দিতে পারছে না কেউই। আর সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘুর রাজনীতিতে মমতা-দিলীপের এই সাক্ষাত্ হয়তো আরওই কারোর হজম হচ্ছে না। ৩০ এপ্রিলের এই সাক্ষাতের পর থেকেই দলের অন্দরে ক্ষোভের মুখে দিলীপ ঘোষ। একেবারে রে রে করে উঠেছে দল। তিনিও দলীয় নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন। সুকান্ত মজুমদার থেকে সৌমিত্র খাঁ, স্পষ্ট কথায় এর সমালোচনা করেছেন।
যদিও, দিলীপ ঘোষও দফায় দফায় পাল্টা আক্রমণ শানাতে ছাড়েননি। রীতিমতো এক বছর আগের ঋণ কড়ায়-গন্ডায় চুকোতে নেমেছেন দিলীপ ঘোষ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর থেকেই বঙ্গ রাজনীতিতে চর্চা শুরু। নিজের দলেরই একাধিক নেতার কোপের মুখে পড়েন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। এসবের মাঝেই বৃহস্পতিবার সকালে দিঘার বিচে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে চাঁচাছোলা ভাষায় যার জবাব দিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। দিলীপ সরাসরি কারও নাম মুখে আনেননি। তবে অনেকের মতে নাম না করে শুভেন্দু-সুকান্তদেরই নিশানা করেছেন তিনি। বিদ্রুপের সুরে এও বলেন, অনেকে অভ্যাসবশত বিতর্ক শুরু করেছেন। এখানেই থেমে থাকেননি দিলীপ ঘোষ।
ধীরে ধীরে কোপ দেওয়ার তালিকায় বাড়তে থাকে বিজেপি নেতাদের নাম। তালিকায় যুক্ত হন অর্জুন সিং, সজল ঘোষ সহ আরও অনেক নেতা। তবে প্রত্যেককেই ধরে ধরে কড়ায় গণ্ডায় মিটিয়েছেন দিলীপ। তবে এই তর্জায় একমাত্র নীরব বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু তিনি কি সত্যিই নীরব ? দিলীপের দিঘা ভ্রমণ নিয়ে শুভেন্দু বাইরে কিছু বলেননি। তবে হয়তো স্রেফ এই কারণেই মনে মনে হাসছেন। কারণ, বিজেপিতে শুভেন্দুর মতই ওজনদার নেতা বলতে দিলীপ ঘোষই ছিলেন।
২০১৬ সালে প্রথম বার বিধানসভা নির্বাচন লড়ে দিলীপ বিধায়ক হন। ২০১৯ সালে প্রথম বার লোকসভা নির্বাচন লড়ে সাংসদ। বলতেন, হারের রেকর্ড নেই। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি হারেন। কিন্তু সেই ম্যাচ দিলীপ ঘরের মাঠে খেলতে পারেননি। তাঁকে মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দিলীপ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠেরা তার জন্য শুভেন্দুকেই দায়ী করেন। তার পর থেকে শুভেন্দুর সঙ্গে দিলীপের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে, এমনকিছু শোনা যায়নি। যদিও সম্প্রতি বিধানসভায় শুভেন্দুর ঘরে এসেছিলেন দিলীপ। সেখানে হাসিমুখে ছবি-টবিও তোলা হয়েছিল। কিন্তু তাল কেটে যায় দিলীপের বিবাহে। আর তারপর প্রথমবার নাম না করে এই শুভেন্দু অধিকারীকে ঝাঁঝালো আক্রমণ শানান দিলীপ ঘোষ। এক্কেবারে যেন সেই পুরনো ঋণ কড়ায় গণ্ডায় শোধ করতে নেমেছেন।
এখন বড় প্রশ্ন হল, দিলীপ ঘোষ কি তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে বাজি রাখলেন? প্রশ্ন হল, যেখানে শুভেন্দু সেভাবে ঝেড়ে কাশছেন না, সেখানে সুকান্ত-সৌমিত্ররা আপত্তি করছেন কেন? দিলীপের বিরুদ্ধে কি তাঁদের ব্যক্তিগত রাগ বা অভিমান রয়েছে?
এর উত্তর সন্ধান করতে গেলে কিছুটা পিছনে হাঁটতে হবে। দেখা যাবে, বাংলায় জ্যোতি বসুর জমানায় সোমেন মিত্র-সুব্রত মুখোপাধ্যায়রা বাম সরকারের সঙ্গে এমনই সৌজন্য বা যোগাযোগ রেখে চলতেন। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তেমন ছিলেন না। বাংলায় বিরোধী রাজনীতির সংজ্ঞাই তিনি বদলে দেন। সে রাজনীতি আপসহীন। সরকার বিরোধিতা বলতে কী বোঝায় বা বিরোধী রাজনীতির সংজ্ঞা কী, তা মমতার কাছেই শিখেছে বর্তমান বাংলা। ভিন্ন রাজনৈতিক দলে থাকলেও সেই বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন নন সুকান্ত-সৌমিত্ররাও। আর শুভেন্দু অধিকারী তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক স্কুলেরই ভালো ফল করা একজন ছাত্র! বঙ্গ রাজনীতিতে গত কয়েকদিন ধরে যা চলছে, তাতে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ দুটোই দেখছে বাংলা। দিলীপ ঘোষ মুখ সামলে রাখার মানুষ নন। তাই দলের মধ্যে থেকে সমালোচনার মুখে পড়ে, দিলীপ যে পাল্টা দিয়েছেন, সেটাই খেলা জমিয়ে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর তাতেই এই প্রশ্নটা বারবার প্রকট হয়ে উঠছে যে দিলীপ কি তাঁর রাজনৈতিক জীবন বাজি রাখছেন? তা বলবে ভবিষ্যত।
More Stories
মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে পুজো চাঁদের হাঁট, কন্যাকে নিয়ে সামিল অভিষেকও
গাড়়ি ঘিরে তৃণমূলের বিক্ষোভ, প্রাণঘাতী হামলার দাবি শুভেন্দুর
কালীপুজো থেকে ভাইফোঁটায় থাকবে স্বস্তি! জানুন আবহাওয়ার আপডেট