Home » যোগীরাজ্যে একের পর এক খুন হচ্ছেন সাংবাদিক, এবার খুন প্রয়াগরাজে

যোগীরাজ্যে একের পর এক খুন হচ্ছেন সাংবাদিক, এবার খুন প্রয়াগরাজে

Oplus_131072

সময় কলকাতা ডেস্ক, ২৪ অক্টোবর : যোগীরাজ্যে আবার সাংবাদিক খুন। এবার খুন প্রয়াগরাজে। গত পাঁচবছরে শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশেই এ নিয়ে খুন হয়ে গেলেন ৫ জন সাংবাদিক এবং গত দশ বছর ধরেই সাংবাদিক হত্যায় শীর্ষস্থানে উত্তর প্রদেশ। প্রয়াগরাজে নিহত সাংবাদিকের নাম লক্ষীনারায়ণ সিং, তিনি বৃহস্পতিবার রাতে খুন হয়ে যান। বইছে নিন্দার ঝড়, উঠছে প্রশ্ন।

যোগী রাজ্যে সাংবাদিক খুন সংক্রান্ত হাড় হিমকরা ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, ৪৮ বছর বয়সী প্রবীণ সাংবাদিক লক্ষ্মী নারায়ণ সিং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খুন হয়েছেন প্রয়াগরাজের হর্ষ হোটেলের কাছে। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এই ঘটনার পরেই পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে গভীররাতেই বিশাল কুমার নামে প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। ঘটনাস্থলের পাশেই পুলিশ এনকাউন্টারের পরে বিশালকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের এনকাউন্টারের দু পায়ে গুলি লাগে বিশালের এবং তাকে পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

পুলিশ এই খুনের কারণ নিয়ে কি বলছে? জানা গিয়েছে, লক্ষ্মীনারায়ণ সিং একজন ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট ছিলেন এবং অতীতে প্রধান অভিযুক্ত বিশাল কুমারের সঙ্গে তার বিবাদ ছিল। ঠিক কি নিয়ে বিবাদ তা পুলিশ এখনো সুস্পষ্ট না করলেও প্রয়াগ রাজের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার অজয় পাল জানিয়েছেন যে তদন্তে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন বিশাল কুমার একটি ধারালো ছুরি বার করে একের পর এক আঘাত হানে লক্ষ্মীনারায়ণ সিং এর উপরে। অজয় পাল আরও জানিয়েছেন, এই ঘটনায় অন্য কেউ যুক্ত আছে কিনা সেই বিষয় পুলিশ বিশালকে জেরা করে দেখছে। পুলিশ সূত্রেও জানা গিয়েছে লক্ষীনারায়ণ সিং আদতে বালিয়ার বাসিন্দা। বালিয়া থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে এসে প্রয়াগরাজে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার আগে তিনি কেবল নেটওয়ার্ক অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। সেই সময় থেকেই কি বিবাদ? পুলিশ স্পষ্ট করেনি। তবে সিভিল লাইনস পুলিশ স্টেশনের স্টেশন হাউজ অফিসার রাম আশ্রয় যাদবের সূত্র ধরে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যায় সিভিল লাইন্সে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন লক্ষ্মীনারায়ণ সিং এবং বিশাল সেখানে আসার পরে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। পরিণতিতে ঘটে হত্যাকাণ্ড। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ এনকাউন্টারে গ্রেফতার করে বিশালকে।

তথাপি গণতন্ত্রর চতুর্থ স্তম্ভকে  আঘাত করার পরে বিভিন্ন দিক থেকে পাওয়া যাচ্ছে প্রতিক্রিয়া। লক্ষ্মী নারায়ণ সিংয়ের হত্যাকাণ্ড প্রয়াগরাজ শুধু নয়,  প্রয়াগ রাজ ছাড়িয়ে এবং রাজ্যের বাইরেও শোক ও নিন্দার জন্ম দিয়েছে। জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, তাঁর সহযোগী সংবাদদাতা ও সংবাদ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিকরা এবং আইন পেশাজীবীরা কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত ও স্বচ্ছ পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন। সাংবাদিক লক্ষী নারায়ণ সিংকে একজন সাহসী প্রতিবেদক হিসেবে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তিনি নির্ভয়ে সত্য ও ন্যায়বিচার সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা এবং কর্মীরা হাসপাতালে এবং অকুস্থলের ( ঘটনার স্থানের ) কাছাকাছি একত্রিত হয়ে এই অঞ্চলে কর্মরত মিডিয়াকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য অবিলম্বে ন্যায়বিচার এবং নিরাপত্তার আশ্বাসের দাবি জানায়। ঘটনাটি বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সাংবাদিকদের নিউজ কভারেজ করার সময় যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়, বিশেষ করে জটিল সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিচারে সেই প্রতিকূলতা কি বাড়ছে? নতুন বিতর্ক জন্ম নিয়েছে যোগী রাজ্যে  সাংবাদিকের হত্যাকান্ড ঘিরে। রাজ্য সরকার পুলিশকে তদন্ত ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দিয়েছে এবং এই অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে।তবুও বিতর্ক থামছে না। কারণ সাংবাদিক হত্যার বিষয় এই প্রথম নয় যোগী রাজ্যে। ২০২১ সালে প্রতাপগড়ে এবিপি নিউজের সাংবাদিক খুন এবং তারপরে লখিমপুর খেরিতে সাধনা প্রাইম নিউজের সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের পরে আবার সাংবাদিক খুনের ঘটনা। যোগী রাজ্যে কি সাংবাদিকরাই তাহলে নিরাপদ নয়? তাহ’লে সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপদ তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

 

About Post Author