সময় কলকাতা ডেস্ক, ৪ ডিসেম্বর : সিরাজউদ্দৌলা সম্মান দেখানোর পরেও, মীরজাফর কথা রাখে নি। বক্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্থান বহরমপুরের সভা। হঠাৎ মীরজাফরের প্রসঙ্গই বা কেন? মুখ্যমন্ত্রী ও হুমায়ুন কবীর এবং মীরজাফর বিষয়টি রাজ্য রাজনীতির কোন দিককে তুলে ধরছে?
বহরমপুরের সভা থেকে হুমায়ুন কবীরকেই আধুনিক মীরজাফর আখ্যা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের মতে, মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার করে দিয়েছেন হুমায়ুন কবীর ভালোবাসে দাঙ্গার রাজনীতি যা সফল হতে দেবে না মুর্শিদাবাদের মানুষ। নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী হুমায়ুনকে কবীরকে আক্রমণ করলেও তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছে হুমায়ুন কবীরকে বার্তা দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বেছে নিয়েছিলেন বহরমপুরের সভা। হুমায়ুন কবীর বৃহস্পতিবার বহরমপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় এসে জানতে পারেন তাকে সাসপেন্ড করেছে দল। অতঃপর তাঁর ঘোষণা, অবিলম্বে দল ছেড়ে ২২ তারিখে তিনি নতুন দলের ঘোষণা করবেন।
পাশাপাশি, বহরমপুরের সভা থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া মুখ্যমন্ত্রী হুমায়ুন কবীরকে নাম না করে মীরজাফর বলার পরেই হুমায়ুন কবীর আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। হুমায়ুন কবীর বলেছেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি স্বাগত জানাবেন। ঠিক কী বলেছেন মমতা?
বহরমপুরের সভা থেকে সাসপেন্ড হওয়া বিধায়ককে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেছেন, ” সিরাজউদ্দৌলা মীরজাফরের মাথায় মুকুট পরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, তুমি স্বাধীনতাকে চলে যেতে দিও না। সম্মান রক্ষা করো। আমি আমার মুকুট তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি। কিন্তু তুমি আমাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করো। কিন্তু সেদিন সিরাজউদ্দৌলা এত বড় সম্মান দেখানোর পরেও, মীরজাফর সেটা করতে দেননি।” মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ” সিরাজউদ্দৌলার নাম আজও ঘরে ঘরে পূজিত হয়। তার কারণ, তিনি চেয়েছিলেন দেশটা ভাল থাকুক। সেটাই ইতিহাস।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা আরও বলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষ দাঙ্গা পছন্দ করে না। অনেক সময় আমরা অনেক বড় বড় দাঙ্গা দেখলেও, মর্শিদাবাদের মানুষ কিন্তু দাঙ্গার রাজনীতি করেন না। এমনকী ২০০৬ সালে ৬ ডিসেম্বর যে দিনটা আমরা সম্প্রীতি দিবস হিসাবে আজ ৩৩ বছর ধরে পালন করে আসছি, মনে রাখবেন…আমরা সবাই মিলে করি সর্ব ধর্মের মানুষকে নিয়ে। সেদিনও কিন্তু মুর্শিদাবাদে দাঙ্গা হয়নি। মাঝে ধূলিয়ানে একটা ঘটনা ঘটেছিল। আমি নিজে এসেছিলাম। জঙ্গিপুরে একটা ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল। কিন্তু আমি সংখ্যালঘু ভাইদের ফোন করেছিলাম। পুরসভার চেয়ারম্যানকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে সংখ্যালঘু ভাই-বোনদের বলেছিলাম, তোমরা হিন্দুদের ওপর কোনও অত্যাচার না হয় তাদের রক্ষা কোরো। নিয়ম তো এটাই। মেজোরিটি যাঁরা আছেন, তাঁরা মাইনোরিটিদের রক্ষা করবেন। আর যাঁরা মাইনোরিটি আছেন, তাঁরা মেজোরিটিদের রক্ষা করবেন। এটাই সর্ব ধর্ম সমন্বয়। সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। এক একটা ধর্মের এক একটা ধর্মীয় আচরণ। সব ধর্মকে আমরা শ্রদ্ধা করি। কিন্তু, আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সম্মান জানাই না। আমরা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। সে যে-ই হোক। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমরা রক্ষা করতে চাই। এটা আমাদের শিখিয়েছে সংবিধান। ” মুখ্যমন্ত্রী যে বাবরি মসজিদ বিতর্ক চান না তা পরিষ্কার। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তৃণমূল দলের কোন ও নেতাকে কেন্দ্র করে এরকম বিতর্ক বাড়লে সরাসরি সুবিধা পাবে বিজেপি।
হুমায়ুন কবীর পাল্টা বলেছেন, এরকম আরএসএস মার্কা মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ে সরাসরি বিজেপির কেউ মুখ্যমন্ত্রী হলে আমি তাকে স্বাগত জনাব। সবমিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল বনাম হুমায়ুন কবীর তরজায় ধর্মভিত্তিক রাজনীতির রং ও গন্ধ। ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক সমীকরণ ও নয়া মোড় নিচ্ছে।।
মুখ্যমন্ত্রী ও হুমায়ুন কবীর এবং মীরজাফর #মুখ্যমন্ত্রী ও হুমায়ুন কবীর এবং মীরজাফর


More Stories
মূর্তি পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকশূন্য, মূর্তির মনখারাপ
সাসপেন্ড হুমায়ুন কবীরের চ্যালেঞ্জ, কী করবেন তিনি
পুলিশের বাপ-বাপান্ত করে মেখলিগঞ্জের ওসিকে হুঙ্কার বিজেপি জেলা সাধারণ সম্পাদকের