তমশ্রী রুদ্র, সময় কলকাতাঃ বাংলায় ফাল্গুন মাস মানে মধুমাস, আর ইংরেজিতে ফেব্রুয়ারি মানেই প্রেমের মাস। হাতে গোলাপ, মনে বসন্তের ছোঁয়া। এসবকে সঙ্গে করেই শুরু হয়ে গেছে এবছরের প্রেম পার্বণ। ফেব্রুয়ারির ৭ থেকে ১৪ এই এক সপ্তাহ জুড়ে পালিত হয় ভালবাসার সপ্তাহ বা ভ্যলেন্টাইন উইক । প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ভ্যালেন্টাইন্স ডে। এই দিনটিতে প্রত্যেকেই তাদের প্রিয়জনের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করে। তবে, বেশিরভাগ মানুষই এটা মনে করেন যে, এই দিনটি কেবল মাত্র প্রেমিক-প্রেমিকা ও দম্পতিদের জন্য। একদমই ভুল ধারনা । যে কেউ এই দিনে তাদের প্রিয়জনকে ভালবাসা জানাতে পারেন। সে যে কেউ হোক। যেমন – পরিবারের সদস্য, বন্ধু, ভাই-বোন এবং অন্যান্য ব্যক্তি, যারা আপনার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতি বছর ৭ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি আপামর বিশ্ববাসী প্রেমের উৎসবে মেতে ওঠেন । কিন্তু জানেন কি! কেন ভ্যলেন্টাইন ডে পালন করা হয় ? এই দিনটির নামকরণ করা হয়েছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে। পঞ্চম শতাব্দীর শেষের দিকে পোপ গেলাসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। জানা যায়, তৃতীয় শতাব্দীর সময় রোমের বাসিন্দা, পুরোহিত ও চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের স্মরণে উদযাপিত হয়েছিল এই দিনটি। যিনি একজন ধর্ম প্রচারকও ছিলেন । পাশাপাশি তিনি রোমান সৈন্যদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য বিবাহের অনুষ্ঠানও করতেন। দ্বিতীয় ক্লডিয়াস নামে একজন রোমান সম্রাট ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, অবিবাহিত সৈন্যরা বিবাহিতদের চেয়ে বেশি দক্ষ। তাই তাদের বিয়ে করতে নিষেধ করতেন এই সম্রাট । তিনি একটি আইন তৈরি করেন যাতে বলা হয়, সেনাবাহিনীতে চাকরি করা যুবকেরা বিয়ে করতে পারবেনা। ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন যখন এই আইন সম্পর্কে জানতে পারেন তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই আইনটি অন্যায়। তাই যে সকল সৈন্যরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চান তাদের জন্য গোপনে বিবাহের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। পাশাপাশি তিনি অন্যান্যদের মধ্যেও ভালবাসা জাগিয়ে তুলতে তৎপর হন । কিন্তু, কিছুদিনের মধ্যেই দ্বিতীয় ক্লডিয়াস সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের এই কাজ সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। যিনি প্রেমের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন, সেই সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে সেখানকার মানুষরা তাঁকে একটা দিন উৎসর্গ করার কথা ভাবে। এর থেকেই ভ্যালেন্টাইন ডে প্রচলন হয় ।
ভ্যলেন্টাইন ডে নিয়ে আরও একটি তথ্য লোক মুখে শোনা যায় । সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ধর্ম প্রচারের মামলায় অভিযুক্ত করে কারাবাসে পাঠানো হয়। কারাবাসে থাকার সময় তাঁর চিকিৎসার জাদুতে একজন কারারক্ষীর অন্ধ মেয়ের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন তিনি। এরপরেই সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে মেয়েটির পরিবারসহ অনেকেই খ্রীস্টধর্ম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে মেয়েটির সঙ্গে ভ্যালেন্টাইনের একটি সম্পর্ক তৈরি হয় । সেখানকার রাজার কানে এই খবর পৌঁছোনো মাত্রই, আইনকে অমান্য করে ধর্ম প্রচারের অপরাধের জন্য ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি লেখেন, যাতে চিঠির শেষে লেখা ছিল ‘লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’। সেই থেকে মানুষ তাঁর নামটিকে ভালবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে। পরে পোপ গেলাসিয়াস প্রথম এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে ঘোষণা করেন।
এই দিনটির প্রধান উদ্দেশ্য হল, প্রিয়জনকে একটা দিন উৎসর্গ করা। যারা আপনার জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাছের মানুষ কে আপনার জীবনে তার গুরুত্ব বোঝাতে এবং তাকে খুশি রাখতে আপনিও পালন করতে ভ্যলেন্টাইন ডে।
More Stories
২০২৪ সালের সেরা একডজন ভয়ের সিনেমা
মহাভারতের অশ্বথামা আজও ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে!
Diljit Dosanjh: ‘হিন্দুস্থান কারও বাপের নয়..’ কনসার্ট থেকে কাদের নিশানা করলেন দিলজিৎ?