Home » Lok Sabha Election 2024: দমদম লোকসভা কেন্দ্রের কুর্সি দখলের লড়াইয়ে আসল ‘দম’-দার কে?

Lok Sabha Election 2024: দমদম লোকসভা কেন্দ্রের কুর্সি দখলের লড়াইয়ে আসল ‘দম’-দার কে?

সময় কলকাতা ডেস্ক, ৩১ মেঃ অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের বাকি আর মাত্র একটি দফা। তারপরেই জানা যাবে, দিল্লিতে আগামী পাঁচ বছরের জন্য কোন দল সরকার গঠন করতে চলেছে। সপ্তম বা শেষ দফায় রাজ্যের মোট নয়টি আসনে রয়েছে ভোটগ্রহণ। তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র দমদম। উত্তর ২৪ পরগনার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে এই লোকসভা কেন্দ্রটি গঠিত হয়েছে।  কেন্দ্র গুলি হল:

  • খড়দহ
  • দমদম উত্তর
  • পানিহাটি
  • কামারহাটি
  • বরাহনগর
  • দমদম 
  • রাজারহাট-গোপালপুর

কেন্দ্রগুলি বেশিরভাগ শহরকেন্দ্রিক। কামারহাটি বিধানসভায় সংখ্যালঘু ভোটারদের একটা প্রভাব থাকলেও এই কেন্দ্রে ৯০-৯৫ শতাংশ ভোটার সংখ্যাগুরু। উল্লেখযোগ্য ভাবে এই কেন্দ্রে পুরুষদের থেকে মহিলা ভোটারের সংখ্যা বেশি। বর্তমানে এই লোকসভা কেন্দ্রটি রয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে। চব্বিশের নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তাদের প্রার্থী বিদায়ী সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর লড়াই বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত এবং সিপিএম প্রার্থী ডক্টর সুজন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। বিটি রোডের দুই ধারে অবস্থিত জনপদের রায় এবার কোন দিকে যাবে, তাই নিয়ে জল্পনা চলছে রাজনৈতিক মহলে।

 ডিলিমিটেশনের পর এই কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। দেশজুড়ে থাকা কংগ্রেস বিরোধী আবহের মধ্যে প্রথমবার দমদম পেয়েছিল জনতা পার্টির সাংসদ। দমদম কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে দেশের আইনসভায় গিয়েছিলেন অশোক কৃষ্ণ দত্ত। ১৯৮০ সালে এই কেন্দ্রটি দখল করে বামেরা। সিপিআইএম দলের প্রতীকে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন নীরেন ঘোষ। ১৯৮৪ সালে এই কেন্দ্রটি যায় কংগ্রেসের হাতে। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির মৃত্যুর পর দেশ জুড়ে বিপুল জনসমর্থন আদায় করে কংগ্রেস। সেই আবহে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন আশুতোষ লাহা। ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এই কেন্দ্রটি আবার চলে যায় বামেদের দখলে। ১৯৯৮ সালে এই কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন তপন শিকদার। ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। যদিও শোনা যায়, সিপিএমের মধ্যে অন্তর্ঘাতের জন্য এই কেন্দ্রে বিজেপিকে জিততে সাহায্য করেছিলেন সিপিএমের দাপুটে নেতা সুভাষ চক্রবর্তী। যদিও এই বক্তব্যের কোনও প্রমাণ কেউ দিতে পারেননি। ২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে নজরুল মঞ্চ থেকে এক সভায় রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “মৃত্যুর আগে আমি দমদম পুনরুদ্ধার দেখতে চাই।” যাকে উদ্দ্যেশ্য করে তিনি এই কথা বলেছিলেন, তিনি সুভাষ চক্রবর্তী। নিজের রাজনৈতিক গুরুর কথা রেখেছিলেন সুভাষও। সেই বার তপন শিকদারকে হারিয়ে সিপিএমের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন অমিতাভ নন্দী। ২০০৯ সালে তৃণমূলের সমর্থন ছাড়া এই কেন্দ্রে প্রায় ৩৬ শতাংশ ভোট কমেছিল বিজেপির। সেই বছর এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে জয়লাভ করেন সৌগত রায়। তারপর পরপর তিনবার এই কেন্দ্র থেকে তিনি জয়ী হয়েছেন।

রাজ্যে পরিবর্তনের হাওয়ায় একদা সুভাষ গড় পরিণত হয়েছে তৃণমূল গড়ে। ২০১৪ সালে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন সৌগত। হারিয়ে দেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তকে। সেই ভোটে এই কেন্দ্রে পদ্ম শিবিরের ভোট বৃদ্ধি ছিল চোখে পড়ার মত। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কখনও দুইয়ে, আবার কখনও তিন নম্বরে শেষ করলেও দমদমে প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি বিজেপি। মূলত বাম ভোটের একটা বড় অংশ চলে যায় তাদের পক্ষে। গত লোকসভা নির্বাচনে সৌগতকে ভাল বেগ দিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য। তবে মাত্র ৫৩ হাজার ব্যবধানে এই কেন্দ্রটি ধরে রাখে তৃণমূল। তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ৪২.৫১ শতাংশ ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ৩৮.১১ শতাংশ ভোট। সিপিএমের ভোট গিয়ে দাঁড়ায় ১৪ শতাংশের আশেপাশে।

‘আদি নব্য দ্বন্দ্বের’ মধ্যে এই কেন্দ্রে বিদায়ী সাংসদকে ফের প্রার্থী করা হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় ছিল তৃণমূলের অন্দরে। জানা গিয়েছে সৌগত রায়কে ফের প্রার্থী করতে চাননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বৃদ্ধ সৈনিকে’ ভরসা রেখেছেন। শেষ পর্যন্ত দমদম কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিট পেয়েছেন বিদায়ী সাংসদই। সৌগতও বয়সকে হার মানিয়ে, জনতার রায় নিতে নেমে পড়েছেন ময়দানে। তাঁর সুবিধে অনেক। এই কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের, সব কটিতেই একুশে জিতেছিল তৃণমূল প্রার্থীরা। গত পুরসভা নির্বাচনেও মানুষের বিপুল জনসমর্থন পেয়েছিল ঘাসফুল শিবির। পাশাপাশি, এই কেন্দ্রে তৃণমূলের শক্তিশালী বুথভিত্তিক সংগঠন রয়েছে। এছাড়াও শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র, নির্মল ঘোষ, ব্রাত্য বসুর মত শাসক দলের হেভিওয়েট বিধায়করা রয়েছেন। তাই এই কেন্দ্র থেকে টানা চতুর্থবার সাংসদ হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী সৌগত।

তবে অসুবিধেও রয়েছে অনেক। প্রথমত, দলের মধ্যে অন্তর্ঘাত। দ্বিতীয়ত, দলের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ। তৃতীয়ত, বৃদ্ধ সাংসদের বিরুদ্ধে একটা অংশের মানুষের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সেই গুলিকে পুঁজি করতে চাইছে বিরোধীরা। এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে শীলভদ্র দত্তকে। যিনি একটা সময় তৃণমূলের বিধায়ক ছিলেন। পরে দলবদল করে নাম লেখান বিজেপিতে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে দমদম লোকসভার অন্তর্গত খরদহ বিধানসভা থেকে বিজেপির প্রতীকে প্রার্থীও হয়েছিলেন। কিন্তু জিততে পারেননি। তবে চব্বিশের নির্বাচনে জয়লাভের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। গত দশবছর এই কেন্দ্রে গেরুয়া শিবিরের ভোট শতাংশের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। তার উপর দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে দীর্ঘ র‍্যালি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সব মিলিয়ে দমদম কেন্দ্রটি আবার দখল করতে মরিয়া বিজেপি।

আরও পড়ুনঃ Lok Sabha Election 2024: কলকাতা উত্তরের কুর্সি দখলের মেগা লড়াইয়ে মুখোমুখি কংগ্রেসি ঘরানার তিন প্রার্থী, এগিয়ে কে?

রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে এই কেন্দ্রে এ বার লড়াইয়ে রয়েছে বামেরাও। যাদবপুর কেন্দ্রের প্রাক্তন সংসদ সুজন চক্রবর্তীকে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে সিপিএম। প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর থেকে তিনিও দমদমে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন। বামপ্রার্থীর সমর্থনে প্রচার করছে তাদের জোটসঙ্গী কংগ্রেসও। প্রচারে ভাল সাড়া পাচ্ছেন বলে দাবি করছেন সুজন। রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গত এক দশকে বামেদের ভোটেই এই কেন্দ্রে শক্তিশালী হয়েছে বিজেপি। সেই ভোট আবার নিজেদের দিকে ফিরিয়ে আনাই লক্ষ সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতার। তবে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করছেন এই কেন্দ্রে ‘বাম-বিজেপি’ আঁতাতের অভিযোগ তুলেছেন।

সব মিলিয়ে তিন হেভিওয়েট প্রার্থীর লড়াই হতে চলেছে দমদম কেন্দ্রে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা এই কেন্দ্রে এবারের লড়াই খুব সহজ হবে না। খুব বড় ব্যবধানে যে এখানে বিজয়ী প্রার্থী জিতবেন না তাও একপ্রকার নিশ্চিত। এই কেন্দ্রে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি চাইছে বিজেপি। অন্যদিকে হারানো জমি পুনরুদ্ধার লক্ষ বামেদের। আর এই দুই ফ্যাক্টরের উপর এখন ঝুলে রয়েছে তৃনমূলের বৃদ্ধ সৈনিকের ভবিষ্যৎ।

 

About Post Author