সময় কলকাতা ডেস্ক, ৪ অগাস্ট : মহিলা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বিরুদ্ধে অশোভন ও আপত্তিকর মন্তব্য করলেও এবার সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে কুমন্তব্য করে রেহাই পেলেন না অখিল গিরি। সাধারণ চোখে বার্তা অত্যন্ত পরিষ্কার। যত বড়ই নেতা হয়ে থাকুন তিনি, কোনও রকম বেয়াদপি সহ্য করা হবে না। কোনও রকম অভব্যতা বরদাস্ত করা হবে না। এছাড়াও একটি বিশেষ বার্তা অখিল গিরির পদত্যাগের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিতে চেয়েছেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। রবিবার কী বার্তা দিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়? পদত্যাগের নেপথ্যেই বা রয়েছে কোন সমীকরণ? জানতে হলে ফিরে যেতে হবে অন্তত ঠিক দুমাস আগে।
মহিলা রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে অখিল গিরি যে সময় কুমন্তব্য করেছিলেন তার থেকে বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঠিক দুমাস আগে ৪ জুন লোকসভার নির্বাচনের পরে তৃণমূল মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছে, মহিলাদের পাশে থাকা কত জরুরি। ডিভিডেন্ট কতটা তাও তারা বুঝে গিয়েছে। এই উপলব্ধি এভাবে আরও আগে এলে আরও আগেই গর্দান যেত অখিল গিরির। এখন তৃণমূলের চোখ ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের দিকে।বিষয়টির গভীরে যাওয়ার আগে বর্তমান ঘটনার প্রেক্ষাপট জেনে নেওয়া যাক।
মহিলা রেঞ্জারের বিরুদ্ধে কু-কথা বলায়, মহিলার বিরুদ্ধে তাঁর বক্তব্যে অশিষ্টতা প্রকাশ পাওয়ায় মন্ত্রিত্ব গেছে তাঁর।তবুও অনুত্তপ্ত নন তিনি। আর এটাই নতুন করে প্রশ্ন, তাহলে দল কি ভবিষ্যতে আরও কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে বরখাস্ত হওয়া কারা মন্ত্রী অখিল গিরির বিরুদ্ধে? নিতে পারে কিনা তার চেয়েও বড় কথা কেন মুখ্যমন্ত্রী এবার এত খড়্গহস্ত হলেন অখিল গিরির উপরে? অখিল গিরিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক শর্ত বা শর্ত পূরণের দায়বদ্ধতা?
উল্লেখ্য, গোটা রবিবাসরীয় রাজ্য রাজনীতির কেন্দ্রে ছিলেন কারামন্ত্রী হিসেবে কার্যত সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া অখিল গিরি। কার্যত গত কয়েকদিন ধরেই অখিল গিরির কু-মন্তব্যের জেরে রাজ্য রাজনীতি সরগরম।একটি ভাইরাল ভিডিওতে তাঁকে রেঞ্জ অফিসার মনীষা সাউকে হুমকি-শাসানি দিতে দেখা গিয়েছিল। ভিডিওটি ভাইরাল হতেই বিভিন্ন মহলে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে।সূত্রের খবর, এরপরেই তৃণমূলের তরফে তাঁর কাজের নিন্দা করা হয়। অখিল গিরি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও সুব্রত বক্সী তাকে জানান, এতেই হবে না, পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তখনই অখিল গিরির ভাগ্য লিখন পরিষ্কার হয়ে যায়। সুস্পষ্ট হয়ে যায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই অখিল গিরিকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান না, পাশাপাশি অখিল গিরিকে সরিয়ে সুস্পষ্ট বার্তা দিতে চান। লিখিত পদত্যাগ পত্র সোমবার জমা দিচ্ছেন অখিল গিরি।
“আমার কাজে হয়তো দলের ক্ষতি হচ্ছে। মন্ত্রিত্ব ছাড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমি মেনে নিলাম। মন্ত্রিত্ব ছাড়া আমার কাছে কোনও ব্যাপার নয়, “জানিয়েছেন অখিল গিরি। অন্যদিকে আবার তিনি জানিয়েছেন তিনি অনুতপ্ত নন। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অখিল গিরির উপরে যারপরনাই অসন্তুষ্ট। মহিলাদের বিরুদ্ধে একের পর এক আপত্তিকর মন্তব্য করায় অখিল গিরির কারণে দলের ও তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি মূল বিষয়টি বিশেষ একটি কেন্দ্রে লুকিয়ে রয়েছে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। কী সেই বিষয়? কেন এবং কী বার্তা দিলেন মমতা? এই বার্তার গভীরে যেতে হলে ফ্ল্যাশব্যাকে যেতে হবে বিগত কয়েক মাসের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূল আশানুরূপ ফল করতে পারেনি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন থেকে তৃণমূল আবার নিজেদের পায়ের তলায় মাটি মজবুত করতে থাকে। ২০২৪ সালের ভোটে কার্যত সাম্প্রতিক সময়ের অভূতপূর্ব সাফল্য আসে তৃণমূলের। তৃণমূল যে কয়েকটি বিষয়ের উপরে নির্ভর করে পায়ের তলায় মাটি ফিরে পেতে চেয়েছিল তার মধ্যে মহিলাদের আর্থিক তথা সার্বিক উন্নয়ন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সাফল্যের পেছনে দেখা গিয়েছে অন্যতম কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছে মহিলা ভোটব্যাঙ্ক। ভোটে শতাংশগত নিরিখেও বিগত নির্বাচন গুলির চেয়ে তৃণমূলের ভালো ফল করার পেছনে কারণ হিসাবে দেখা হচ্ছে মহিলা ভোটব্যাঙ্ককে। এরকম রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মহিলাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হলে বা মহিলাদের মর্যাদা নষ্ট হলে তৃণমূলের রাজনৈতিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ষোল আনার উপরে আঠেরো আনা । একথা উল্লেখ্য, শতাংশগত হিসাবে সংখ্যালঘু ভোটারের চেয়েও বেশি রয়েছেন মহিলা ভোটার। আর তাই মহিলাদের বিপক্ষে অশোভন আচরণ করলে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব যে রেয়াত করবে না তার প্রকৃষ্ট ও জলজ্যান্ত উদাহরণ অখিল গিরির পদত্যাগ ।।
More Stories
Kunal Ghosh: একদা মাদক কাণ্ডে ধৃত পামেলাকে অবস্থানরত চিকিৎসকদের মঞ্চে দেখে কটাক্ষ কুণালের, পাল্টা দিলেন বিজেপি নেত্রীও
US Presidential Election: একে অন্যের বিরুদ্ধে তোপ, ট্রাম্প-কমলা বিতর্কসভায় উঠে এল কী কী বিষয়?
Mamata Banerjee: টলিপাড়ায় নারী নির্যাতন নিয়ে সরব অভিনেত্রী ঋতাভরী, নবান্নে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর সাথে