Home » FIR against Mamata Banerjee: মমতার ‘আগুন জ্বলবে’ মন্তব্যের বিরোধিতায় ৪ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, দিল্লী পুলিশে দায়ের অভিযোগ

FIR against Mamata Banerjee: মমতার ‘আগুন জ্বলবে’ মন্তব্যের বিরোধিতায় ৪ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, দিল্লী পুলিশে দায়ের অভিযোগ

সময় কলকাতা ডেস্ক, ২৯ অগস্ট: কলকাতায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশ থেকে করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ঘিরে শোরগোল জাতীয় রাজনীতিতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্যের বিরোধিতায় বিজেপি শাসিত ৪ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লি পুলিশের কাছে মমতার বিরুদ্ধে দায়ের হল এফআইআর।

বুধবার কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস। মেয়ো রোডের প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশ থেকে কার্যত বিজেপিকে নিশানা করে আক্রমণ শানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু বুধবারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণের ঝাঁঝ ছিল অন্যরকম। অনেকটাই তীব্র আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতেই বিজেপিকে আক্রমণ করেছিলেন তিনি। চলতি শব্দের মঙ্গলবারেই তথাকথিত পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের নামে নবান্ন অভিযানে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয় তিলোত্তমা কলকাতা। প্রথম থেকেই শাসক দল অভিযোগ তুলছিল আদতে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের নামে বিজেপি সংগঠিত করছে নবান্ন অভিযান। ছাত্র সমাজের চার মুখের দুইজনের সংযোগ পাওয়া গিয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সঙ্গে। ফলে শাসক দলের দাবি কিছুটা হলেও মান্যতা আদায় করেছিল। নবান্ন অভিযান ঘিরে ছাত্র পুলিশ সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে ১২ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনে বন্ধের ডাক কার্যত রাজ্যবাসীকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। কারণ গন্ডগোলের আশঙ্কা করেছিল সব মহল। মেয়ো রোডের সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত হুমকির সুরে আক্রমণ করেছিলেন বিজেপিকে। তাঁর নিশানা থেকে বাদ যাননি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।

সভা থেকে মমতা বলেছিলেন, “কেউ-কেউ মনে করছেন, এটা বাংলাদেশ। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। ওরা আমাদের মতো কথা বলে। ওদের সংস্কৃতি, আমাদের সংস্কৃতি এক। কিন্তু মনে রাখবেন, বাংলাদেশ একটা আলাদা রাষ্ট্র। ভাবতবর্ষ একটা আলাদা রাষ্ট্র। মোদিবাবু, আপনার পার্টিকে দিয়ে আগুন লাগাচ্ছেন? মনে রাখবেন, বাংলায় যদি আগুন লাগান, অসমও থেমে থাকবে না। উত্তর-পূর্বও থেমে থাকবে না। উত্তরপ্রদেশও থেমে থাকবে না। বিহারও থেমে থাকবে না। ঝাড়খণ্ডও থেমে থাকবে না। ওড়িশাও থেমে থাকবে না। আর দিল্লিও থেমে থাকবে না। আপনার চেয়ারটা আমরা টলমল করে দেব।”

আরও পড়ুন: আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে এবার আরজিকর হাসপাতালের মর্গে হানা দিল সিবিআই

এই মন্তব্যের পরেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ময়দানে নেমে পড়েন ৪ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “উত্তর-পূর্বকে হুমকি দেওয়ার সাহস কি করে হল দিদি আপনার? এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমি। অবিলম্বে উত্তর-পূর্ব ভারত এবং বাকি জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে আপনাকে।”

অন্যদিকে, মমতার মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, “তৃণমূল সরকারের নারী বিরোধী আচরণ গণতন্ত্রের পক্ষে লজ্জাজনক।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তোপ দেগে এক্স হ্যান্ডেলে বিজেপি শাসিত উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি জানান, “উড়িষ্যা সম্পর্কে আপত্তিজনক মন্তব্য করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? এখানকার মানুষ দায়িত্ববান।”

বিজেপি শাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও এক্স হ্যান্ডেলে আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি লিখেন, “দিদি আপনার এত সাহস কীভাবে হল যে আপনি অসমকে হুমকি দিচ্ছেন? আমাদেরকে রক্তচক্ষু দেখাবেন না। ভারতকে অগ্নিগর্ভ করে তোলার চেষ্টা করবেন না। এই বিভাজনকারী ভাষা আপনার মুখে শোভা পায় না।”

এক কথায় বলা যেতে পারে বিজেপি শাসিত ৪ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তীব্র ভাষায় আক্রমণ জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই এক্স হ্যান্ডেলে মহিলাদের উপর অত্যাচারের তথ্য তুলে ধরে শক্তিশালী আইন প্রণয়ন করার কথা জানিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি।। তিনি জানিয়েছিলেন প্রতিদিন ৯০ টি ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়। প্রতি ১৫ মিনিটে একটি করে ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়। সেই কারণেই শক্তপোক্ত আইন প্রণয়ন করা দরকার। কার্যত উত্তর প্রদেশকে নিশানা করে আম আদমি পার্টির পক্ষ থেকে এক্স হ্যান্ডেলের মাধ্যমে জানানো হয়েছিল, উত্তরপ্রদেশে দৈনিক ১২ টি করে ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়। অন্যান্য রাজ্যের ধর্ষণের ঘটনা নিয়েও সরব হয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং সেক্ষেত্রে রাজ্য বিজেপি কার্যত নীরব ভূমিকা পালন করে সে কথার উল্লেখ করেছিলেন একাধিকবার।

আরজি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে রাজ্য জুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন দেখা দিয়েছিল। সেই আন্দোলন রাজনৈতিক দিকে মোড় নেওয়ায়, সাধারণ মানুষ অনেকটাই থমকে গিয়েছে। ফলে আরজি কর কাণ্ডের বিচার এবং তার প্রতিবাদ এখন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে দেখা দিয়েছে।। তারই ফলশ্রুতি মমতা বনাম ৪ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী লড়াই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ভিনীত জিন্দাল দিল্লী পুলিশের কাছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার দফা অনুযায়ী ১৫২ ,১৯২,১৯৬, এবং ৩৫৩ ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ফলে এটা বলা যেতেই পারে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে জের পৌঁছল আইনের দোরগোরায়।ধর্ষণ নিয়ে এর আগেও তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে উত্তর প্রদেশকে রেপ ক্যাপিটাল অফ ইন্ডিয়া বলেও তোপ দাগা হয়েছিল এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছিল। ফলে আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণের খেলা দীর্ঘ দিন ধরেই চলে আসছে। এখন দেখার এই আক্রমণ আর প্রতি আক্রমণের জল রাজনীতির পথ ধরে কতদূর গড়ায়। আর আরজি কর কাণ্ডের বিচার এবং প্রতিবাদ রাজনীতির মোড়কে পড়ে “বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে” না হয়ে যায়।

About Post Author