সময় কলকাতা ডেস্ক:- ১৯৫০ সালে নিজের জন্মভিটে ছেড়ে চলে এসেছিলেন এপার বাংলায়। বাবা ছিলেন দরিদ্র স্কুল মাস্টার। ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। বাবার রোজগারপাতি তেমন ছিল না। সংসারে অনটন লেগেই থাকত। কিন্তু তাতে দমে যাননি মেধাবী ছাত্রটি। ১৯৫০ সালে চলে আসেন হুগলির চুঁচুড়ায় দাদার কাছে। দাদা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে হুগলির মহসিন কলেজে ভর্তি হন। এরপর ১৯৫৩ সালে শিবপুর বিই কলেজে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। শিবপুর বি ই কলেজে পড়াশোনা শেষ করে যোগ দেন অধ্যাপনার কাজে। কর্মসূত্রে বর্তমানে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়াতে থাকেন। কিন্তু আজও ভুলতে পারেননি তাঁর পুরোনো কলেজকে। ছাত্রদের গবেষণার জন্য নিজের কষ্টার্জিত রোজগার থেকে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা দান করলেন বিই কলেজের প্রাক্তনী অরুণ দেব।
বিই কলেজের অরুণবাবুর সহপাঠী ছিলেন সুধাংশুশেখর চক্রবর্তী।
এখন তিনি দিল্লিতে থাকেন। একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসাল্টেন্সি সার্ভিস কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। বিভিন্ন আইআইটির ভিজিটিং প্রফেসরও ছিলেন। তিনিও এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ১০ কোটি টাকা দান করেছেন। তা দিয়ে ‘চিরশ্রী সেন্টার অফ সাসটেনেবেল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি গবেষণাগার তৈরি হবে। শিবপুর আইআইইএসটি তে এক অনুষ্ঠানে দু’জনেই দানের অর্থ তুলে দেন। সেখানে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার।
অরুণ দেব বর্তমানে আমেরিকার পেন্সিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
বছরের ৬ মাস আমেরিকায় থাকলেও বাকি ৬ মাস কলকাতার সন্তোষপুরে থাকেন। তাঁর কথায়, ‘বিই কলেজের সঙ্গে আমার নাড়ির যোগ। এখনও বছরে দু’বার আমি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসি।’ তাঁর দেওয়া অর্থে শিবপুর আইআইইএসটিতে যে নতুন গবেষণা কেন্দ্র তৈরি হবে তার নাম হবে ‘অরুণ অ্যান্ড ধৃতি দেব সেন্টার ফর ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রমেন্টাল স্টাডিজ’। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা জল এবং পরিবেশ নিয়ে উন্নত মানের গবেষণা করতে পারবেন।
অরুণ বাবু জানিয়েছেন, ১৯৯৬ সালে তিনি শিবপুর আইআইইএসটি–তে একটি প্রকল্পে পানীয় জল নিয়ে কাজ করতে আসেন। তারই সূত্রে গ্রামবাসীরা যাতে সামান্য খরচায় আর্সেনিক মুক্ত জল পান তার জন্য একটি নতুন মডেল তৈরি করেন। নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদা এবং মুর্শিদাবাদের প্রায় ২০০ গ্রামে এই প্রকল্প চালু করেন। এর মাধ্যমে কী ভাবে ডিপ টিউবওয়েল থেকে জল তোলার পর সেটাকে শোধন করতে হবে, সে বিষয়ে গ্রামবাসীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।
অরুণ বাবু ১৯৫৭ সালে প্রিন্সিপালের অনুরোধে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন। ১২ বছর শিক্ষকতা করার পর চলে যান লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে তিন বছর অধ্যাপনা করার পর আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর পড়ান। পরে তিনি একটি কনসাল্টেন্সি ফার্মে যোগ দেন। সেখান থেকে ২০০৩ সালে অবসর নেন। তবে তাঁর কাজের কোনও বিরাম নেই। গ্রামের মানুষ যাতে আর্সেনিক মুক্ত জল পান তার জন্য এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
More Stories
মুর্শিদাবাদে কত বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত?দ্রুত সমীক্ষার কাজ শেষ করার নির্দেশ মুখ্য সচিবের
রাজ্যবাসীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর খোলা চিঠি
ডুয়ার্সের পর্যটন শিল্পে নতুন পালক! খুলে গেল পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান