সময় কলকাতা ডেস্ক :
পুর ভোটের দামামা বেজে গেছে।বারাসাত পুর নির্বাচনে ৩৫ টি ওয়ার্ডে চলবে প্রতিদ্বন্দিতা। সবগুলি আসনেই একাধিক প্রার্থী থাকলেও বারাসাতবাসীর চোখ থাকছে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে।এখানে তুল্যমূল্য লড়াই হবে কিনা তা সময়ই বলবে তথাপি ইতিমধ্যেই প্রার্থী ঘোষণা ও প্রত্যাহার নিয়ে থেকেছে শুধুই চমক। রুদ্ধশ্বাস থ্রিলারকে হার মানিয়েছে এখানের মুহুর্মুহু বদলে যাওয়া প্রার্থী তালিকা।
উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা সদর বারাসাতের অন্যতম প্রাণকেন্দ্রর বিশাল অংশ জুড়ে থাকা ৯ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে কংগ্রেস গতবার জিতলেও প্রার্থী বদলেছে এবার। কংগ্রেসের হয়ে লড়বেন আইনজীবী বিপ্লব রায়। গত পুরনির্বাচনে কংগ্রেসের বিজয়ী প্রার্থী দীপক কুমার দাসগুপ্ত দল পাল্টে ফেলেছেন অতি সম্প্রতি।যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে।তবুও নির্বাচন কমিশন প্রাথমিক ভাবে তাঁর ভোটে দাঁড়ানোর ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তৃণমূলের চূড়ান্ত তালিকায় নাম দেখা যায় সমীর গাঙ্গুলির। শেষ পর্যন্ত কমিশনের নিষেধাজ্ঞা উঠতেই তৃণমূল প্রার্থী পাল্টে ফেলে। দীপক কুমার দাসগুপ্ত (ছানা )তৃণমূলের টিকিট পান। পুরবাসী বিভ্রান্ত হন, সমীর গাঙ্গুলি হন বিক্ষুব্ধ।
সমীর গাঙ্গুলি ততদিনে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করে দিয়েছিলেন,৯ নম্বর ওয়ার্ডে বেশ কয়েকটি দেওয়াল লিখন সেরেও ফেলেছিলেন তিনি ।তৃণমূল থেকে টিকিট না পেয়ে তিনি বিদ্রোহের পথে হাঁটেন। আর এখানেই প্রশ্ন তুলছে পুরবাসী। ভরসা করতে ভয় পাচ্ছেন কাউকে।সাধারণ মানুষ বলছেন,ছানা দাসগুপ্তকে ভোট দিয়ে জিতিয়ে এনেছিলেন তাঁরা অথচ তিনি তৃণমূলের বাড়বাড়ন্ত দেখে কংগ্রেস ছেড়েছেন। অন্যদিকে তৃণমূলের সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দীপক -সমীরে। আর এখানেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিপ্লব রায়ের ভূমিকা। রাজনীতিতে চরম কথা বলা কার্যত অসম্ভব হলেও তাঁর পক্ষে বেশ কয়েকটি প্লাসপয়েন্ট রয়েছে।
লড়াই বিপ্লব রায়ের কাছে নতুন নয়। হেরে যাওয়া বাজী জেতা ও নতুন নয় । ভোটের ময়দানে তিনি নতুন হলেও জেতার অভ্যেস তাঁর রপ্ত। অতীতে মানুষের জন্য আদালতে বহু আইনি লড়াইকে নিজের দিকে টেনে এনেছেন তিনি। সুফল পেয়েছে মানুষ। বারাসাতের পুরনির্বাচনে অন্যতম আগ্রহ জাগানো আসনটিতে তাঁর জেতা বা হারা এমনকি তাঁর লড়াই ও বারাসাত পুরভোটকে এক অন্য মাত্রা দিতে চলেছে। কংগ্রেসের হয়েই এবার পুরভোটে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বারাসাত আদালতের আইনজীবী বিপ্লব রায়ের লড়াই তাৎপর্যপূর্ণ এজন্যই যে মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার একটি বৃহত্তর প্লাটফর্ম তিনি চাইছেন।
বিপ্লব রায় রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলা কামদুনি গণধর্ষণ মামলা, দুষ্কৃতী প্রভাস ঢালীর হাতে নিশ্চিহ্ন হওয়া পরিবারের হত্যা মামলা,মধ্যমগ্রামের ভিনরাজ্যের কিশোরীর গণধর্ষণ মামলা,প্রতিবাদী ছাত্র সৌরভ চৌধুরীর নৃশংস হত্যা মামলা ছাড়াও এমন অনেক মামলা লড়েছেন যেগুলির প্রভাব বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরিসীম। সবগুলিতে বিপক্ষের আইনজীবীকে তিনি পর্যুদস্ত করেছেন।একের পর এক মামলায় সাফল্যের নজির গড়ে তিনি আইন-আদালতের প্রসঙ্গে কার্যত মিথ হয়ে উঠেছেন।আদালতের লড়াইয়ে তাঁর মুকুটে একের পর এক সাফল্যের পালক।তাঁর সাফল্য উল্লেখযোগ্য এজন্যই যে এক বিরাট অংশের আমজনতার ন্যায়বিচারের দাবীর বাস্তবায়ন ঘটানোর কান্ডারি ছিলেন তিনি।
আইনজীবী বিপ্লব রায় এমন প্রচুর মানুষের মুখপাত্র হয়েছেন যাঁরা নিপীড়িত ও বঞ্চিত। তাঁর প্রতিটি লড়াই ছিল হতভাগ্য সাধারণ বা গরিব মানুষের হয়ে। অনেক ক্ষেত্রে লড়াই ছিল প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধেও। তিনি তাঁদের মুখে হাসি এনে দিয়েছেন। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে নি। এবার তিনি জনপ্রতিনিধি হয়ে জনতার মুখপাত্র হতেই পারেন। কিন্তু মানুষ তাঁকে ভরসা করবে কেন? তাঁর উত্তরে বিপ্লব রায় বলছেন, তাঁর লক্ষ্য মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার। তিনি একে প্রতিশ্রুতি নয় অঙ্গীকার হিসেবে দেখছি। ” মানুষ শেষ কথা বলবে, আমি তাঁদের হয়ে কাজ করার সুযোগ চাইছি। এতদিন সুযোগ পেয়েও বিগত কাউন্সিলার কী কী কাজ করেছেন তা এলাকার মানুষকেই জিজ্ঞেস করুন। ”
এলাকার মানুষের ঘোর কিছুতেই কাটছে না। সমীর গাঙ্গুলি না দীপক দাসগুপ্ত কে কোন দলের প্রার্থী তা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অনেকের কাছে গুলিয়ে গেছে। দীপক দাসগুপ্ত কংগ্রেসের থেকে বিজয়ী হয়েও এলাকায় কিছুই করেন নি বলে অনেকের ক্ষোভ আছে। অনেকেই সমীর গাঙ্গুলিকে চেয়েছিলেন প্রার্থী হিসেবে। মুশকিল হল, সমীর গাঙ্গুলি নির্দলের হয়ে দাঁড়ানোয় আদৌ শেষ পর্যন্ত লড়বেন কিনা সে ভরসাও মানুষ পাচ্ছেন না।আর নির্দলীয় প্রার্থী হয়ে লড়লেও সমীর গাঙ্গুলি আদতে তৃণমূলের বিশ্বস্ত হওয়ায় সমীকরণ কী দাঁড়াবে বলা দুরূহ।মানুষ দ্বিধাবিভক্ত।সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর,তৃণমূল কর্মীরাও দীপক কুমার দাসগুপ্ত এবং সমীর গাঙ্গুলি ইস্যুতে দ্বিধাবিভক্ত। চোরাস্রোত তৃণমূলে বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। লড়াই তৃণমূল বনাম কংগ্রেসের হলেও তৃণমূলের ভোট কাটাকাটি হওয়ার প্রমুখ আশঙ্কা রয়েছে তৃণমূলের নেতাদের গলায়।
৯ নম্বর ওয়ার্ড কার্যত বারাসাতে কংগ্রেসের গড়। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলের হয়ে লড়ে জেতেন নি দীপক কুমার দাসগুপ্তের দাদা প্রয়াত অরবিন্দ দাসগুপ্ত ।বিগত নির্বাচনে এই ওয়ার্ডে পুরভোটের দিন দুই ভাইয়ের হাতাহাতিও দেখেছে মানুষ। তবুও জিতেছে কংগ্রেস।তাই পেশায় দুই আইনজীবী -বিপ্লব রায় আর দীপক কুমার দাসগুপ্তের ভোটযুদ্ধে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় দীপক দাসগুপ্ত এগিয়ে থাকলেও ইতিহাস ও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নে তাই সামান্য হলেও অ্যাডভান্টেজ বিপ্লব রায়। রাজনৈতিক নেতাদের দলবদলের মানুষ বীতশ্রদ্ধ যার প্রতিফলন দেখা গেছে বিধানসভা নির্বাচনেও । মানুষ ভরসা হারাচ্ছে চেনা মুখে। বিকল্প চাইছে মানুষ তাদের এলাকার কাজের রূপায়নের জন্য, জনপ্রতিনিধি চাইছে পাশে থাকার জন্য।এমন জনপ্রতিনিধি চাইছে সাধারণ মানুষ যিনি নিজেই মানুষের কাছে ছুটে আসবেন, মানুষকে যেন ছুটে নেতার দরজায় মাথা না ঠুকতে হয়।বিকল্প হিসেবে দুর্নীতি মুক্ত, স্বচ্ছ প্রার্থী হিসেবে বিপ্লব রায় ভরসা হয়ে উঠতেই পারেন।।
More Stories
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ধনকড়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব কংগ্রেসের! কী অভিযোগ হাত শিবিরের?
হাইকোর্টের রায়ে পঞ্চায়েতে ফিরেও ঘর ছাড়া আরাবুল
Mamata Banerjee: “ভাববেন না আমরা বসে ললিপপ খাব…” বাংলা দখল নিয়ে রুজভিকে হুঁশিয়ারি মমতার