সময় কলকাতা ডেস্ক, ১ ডিসেম্বর : সম্প্রতি ১০০ বছর বয়সে মার্কিন কূটনীতিবিদ হেনরি কিসিঞ্জারের জীবনাবসান হয়েছে। হেনরি কিসিঞ্জার (#henrykissinger) বারবার বিতর্ক জন্ম দিয়েছেন ভারত ও ভারতীয় উপমহাদেশে। সত্তরের দশক থেকে হেনরি কিসিঞ্জারকে ভারতের কূটনীতির ইতিহাসে এক বিতর্কিত ও ঘৃণ্য ব্যক্তিত্ব বলে ধরা হলেও মোদীর প্রধানমন্ত্রীত্বর আমলে এসে তিনি মোদীর চোখে রাতারাতি মহান হয়ে ওঠায় নতুন বিতর্ক দানা বাঁধে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে স্বাধীন করার সহযোগিতা দিতে চাওয়া ভারত ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সময় সরাসরি সংঘাত বাঁধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খোলাখুলি পাকিস্তানকে সমর্থন জানালেও কৌশলী ও বাগ্মী ইন্দিরা গান্ধীর ব্যক্তিত্ব, কূটনৈতিক কুশলতা, বাকনৈপুন্যের কাছে থেমে যেতে হয় নিক্সন – কিসিঞ্জারকে। বিতর্কিত নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী হেনরি কিসিঞ্জারকে “সুপার সেক্রেটারি অফ স্টেট” হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। কিসিঞ্জার ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৭ সালের মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন এবং জেরাল্ড ফোর্ডের অধীনে বিশ্বব্যাপী নীতিকে রূপ দিয়েছিলেন, স্নায়ুযুদ্ধের সময় ভারতীয়দের এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বিচ্ছিন্ন করতে তৎপর ছিলেন। তবে ইন্দিরা গান্ধীকে দমিয়ে রাখতে পারেননি নিক্সন-কিসিঞ্জার। তবে শেষ বয়সে এসে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভক্ত হয়ে ওঠেন বলে জানা যায়। তাঁর সম্পর্কে মোদীকেও বেশ চমৎকার কিছু বিশেষণ ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে কিসিঞ্জার চিরকালই ছিলেন বিতর্কিত। উল্লেখ্য,ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসানে প্যারিস শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছিলেন, অন্যদিকে, চিলিতে নির্বাচিত সরকারের পতন বা কম্বোডিয়ার ওপরে হামলায় তাঁর ভূমিকা সামনে এসেছিল। একথাও প্রকাশ পায় পাকিস্তানকে সমর্থন করতে চিনকে উৎসাহিত করতে তিনি চিন সফরও করেছিলেন। চিন ও পাক -ভারত যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেয় নি, অন্যদিকে বাংলাদেশও স্বাধীন হয়ে যায়।
বুধবার ১০০ বছর বয়সে কিসিঞ্জার মারা যান।
আঠারো বছর আগে, কিছু টেপ প্রকাশ করা হয়েছিল, যেখানে তিনি এবং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে এবং ১৯৭১ সালে ভারত সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য ব্যবহার করতে শোনা যায়।ডিক্লাসিফাইড টেপ অনুসারে, ১৯৭১ সালের নভেম্বরে ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করার একদিন পর, যখন ভারত পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ছিল, রিচার্ড নিক্সন তাকে “পুরনো ডাইনি” বলে অভিহিত করেছিলেন, কিসিঞ্জার তাকে “একটি মেয়ে কুকুর ” বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং ভারতীয়দের “বেজন্মা ” বলা হয়। টেপগুলি প্রকাশের পর, যদিও কিসিঞ্জার পরবর্তীতে অনুশোচনা প্রকাশ করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, এই মন্তব্যগুলি “ঠান্ডা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে” করা হয়েছিল এবং ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি তার উচ্চ শ্রদ্ধা ছিল। তবে দীর্ঘদিন ভারতে তাঁকে ঘৃণার চোখেই দেখা হয়েছে। ২০১৯ সালে এই কিসিঞ্জার ভারতে আসেন, মোদীকে তাঁর সম্পর্কে উল্লসিত হতে দেখা যায়। মোদী সেসময় বলেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতিতে কিসিঞ্জারের অবদান একজন পথিকৃতের! তখন প্রশ্ন উঠেছিল, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে কি কেউ পুরোনো ইতিহাস স্মরণ করায় নি? যাই হোক, চলে গেলেন কিসিঞ্জার, রয়ে গেল ভারতীয় উপমহাদেশে তাঁকে ঘিরে একরাশ বিতর্ক এবং উস্মা।।
#henrykissinger
More Stories
বাংলাকে করিডর করে কাশ্মীর যাওয়ার পরিকল্পনা! কারা করছে?
আগামী সোমবার ঝটিকা সফরে মুর্শিদাবাদ যাবেন মমতা, কী বার্তা দেবেন সভা থেকে?
সদস্য সংগ্রহে রেকর্ড বৃদ্ধি, বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল DYFI!