Home » Bangladesh: অবশেষে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ শেখ হাসিনার, রাজপথে বিজয় মিছিল বিক্ষোভকারীদের, কোন পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ?

Bangladesh: অবশেষে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ শেখ হাসিনার, রাজপথে বিজয় মিছিল বিক্ষোভকারীদের, কোন পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ?

বিশ্বজিৎ হীরা, সময় কলকাতা, ৫ অগষ্টঃ অবশেষে পদত্যাগ করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)। সোমবার বোন রেহানাকে সঙ্গী করে হেলিকপ্টারে চড়ে দেশ ছাড়েন। দেশ ছাড়ার জন্য তাঁকে সেনাবাহিনীর তরফে ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল। এমনকি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, সে সুযোগও তাঁকে দেয়নি সেনাবাহিনী। অবশেষে হেলিকপ্টার করে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান সাংবাদিক সম্মেলন করে অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার কথা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি, দেশের জনগণকে সেনাবাহিনীর উপর ভরসা রাখার আহ্বানও করেন তিনি। দুপুর তিনটে নাগাদ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সেনাদপ্তরে দীর্ঘ বৈঠক করেন সেনাপ্রধান। বৈঠকে  উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। অন্যদিকে, ঢাকার রাজপথে উচ্ছ্বাসে বিজয় মিছিল শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। শুধুমাত্র ঢাকার রাজপথ নয়, পড়শি দেশের বিভিন্ন জেলায়, উপজেলায়ও শুরু হয় বিজয় মিছিল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল কাণ্ডারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মূর্তি ভেঙে ফেলেন বিক্ষোভকারীরা। একদিন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকার পর, অবশেষে সোমবার তিনটে নাগাদ দেশের সর্বত্র চালু করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা।

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে বিক্ষোভ দানা বেঁধেছিল তারই ফলশ্রুতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীদের এই পদত্যাগ। কিন্তু কিছু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যে আন্দোলন ছিল সীমাবদ্ধ ছাত্রদের মধ্যে সেই আন্দোলন এত ব্যাপ্তি পেল কীভাবে? তাহলে কি এই আন্দোলনের পিছনে ছিল অন্য কোন মদত? কোটা আন্দোলনকে সামনে রেখে তাহলে কি সরকার ফেলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল আগে থেকেই? এই সমস্ত প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনের ফলস্বরূপ কতটা উপকৃত হতে পারে বাংলাদেশ আর কতটাই বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশ, সেই লাভ ক্ষতির খতিয়ান নিয়ে ইতিমধ্যেই কাটাছেঁড়া বিশ্লেষণ শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক মহল।

আপাতদৃষ্টিতে দেখলে বাংলাদেশে শান্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রবল। উত্তাপের যে ধিকি ধিকি আগুন এখনও জ্বলছে, সেই আগুন নিভতে হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু ইতিমধ্যেই বহু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা এই আন্দোলনের পিছনে বিদেশি শক্তির প্রভাব রয়েছে। কোটা আন্দোলনের যৌক্তিকতা ও প্রাসঙ্গিকতা ছিল যথেষ্ট। যে কারণে ছাত্র বিক্ষোভের আগুন অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল শহর থেকে শহরতলী এবং গ্রাম থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। কিন্তু কোটা দাবি মেটার পরও রবিবার থেকে পুনরায় রক্ত ঝরা শুরু হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা সরকার পতনের এক দফা দাবি জানায়। পাশাপাশি জাতীয় সরকার গঠনের ডাকও দেয়। ফলে পুনরায় দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়।। এখানেই উঠতে থাকে প্রশ্ন। যে ছাত্র আন্দোলন ছিল কোটা বিরোধী সেই আন্দোলন কেন সরকার বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হল? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত সপ্তাহের মঙ্গলবার এক সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, আসলে এই আন্দোলন হচ্ছে কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে সরকার বিরোধী আন্দোলন। এবং এর পিছনে রয়েছে বিএনপি এবং জামাত। যদিও তৎকালীন সময় বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান পাল্টা যুক্তি সাজিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ যদি একথাই বলে তাহলে সেক্ষেত্রে মানতে হয় বিএনপি’র যথেষ্টই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ সেনাবাহিনীর ৪৫ মিনিটের নির্দেশ, দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা

সরকারি এক সূত্রের দাবি, বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তান রাষ্ট্রদূতের দপ্তর থেকেই মদত দেওয়া হচ্ছিল এই আন্দোলনকে। অন্যদিকে, আরেক গোষ্ঠীর দাবি ছিল প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে চীনের মদত রয়েছে এই আন্দোলনের পিছনে। যদিও এর বাস্তব কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রথম দিকে কোটা আন্দোলন খুব ধীমে গতিতে এগোলেও, চীন সফর সেরে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরতেই আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একশ্রেণীর বিশ্লেষণ, হাসিনা সরকারের এই পতনের পিছনে অনেকাংশেই দায়ী আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের অপদার্থতা। আন্দোলন যখন সম্পূর্ণরূপে দানা বাধেনি তখনই সরকার যদি সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করত এবং ছাত্র ক্ষোভ প্রশমনে ব্যবস্থা নিত সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত। সরকারের ব্যর্থতা আর আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝানোর অক্ষমতাই সরকার পতনের অন্যতম কারণ। ছাত্র আন্দোলন দানা বাধার প্রাক মুহূর্তেই অনেকাংশে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে ছাত্র আন্দোলনের পিছনে বিএনপি ,জামাত এবং বিদেশী রাষ্ট্রের মদত রয়েছে।

কোটা আন্দোলনকে সামনে রেখে প্রকারান্তে হাসিনা সরকার পতনের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছিল আগেই। সোমবার হাসিনার দেশ ছাড়া যে দৃশ্য দেখা গিয়েছে অনেকাংশেই সাদৃশ্য রয়েছে ২০২২ সালে ঘটা শ্রীলঙ্কার সরকার পতনের দৃশ্যের। গোটাবায়া রাজাপক্ষে ঠিক এমনভাবে সেদিন দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাষ্ট্রপতি ভবনে ঢুকে পড়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল। এদিন ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ঢুকে তাণ্ডব চালায় বিক্ষোভকারীরা।

ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বাংলাদেশের এই সরকার পতন কি আসলে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা? বিএনপি জামাত এবং কিছু বিদেশী শক্তি দীর্ঘদিন ধরেই সচেষ্ট ছিল হাসিনা সরকারের পতনের। কিন্তু সুযোগ এবং সময় সঠিক না হওয়ায় উদ্দেশ্য কার্যকর হচ্ছিল না। কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কার্যত হাতিয়ার করেই সেই উদ্দেশ্য কার্যকর করা হল বলে মনে করছেন বহু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ।

কিছুটা কাকতালীয়ভাবে হলেও এই অগস্ট মাস কালো মাস হিসেবে পরিগণিত হবে মুজিব পরিবারে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিজের বাসভবনে সপরিবারে খুন হতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানকে। তার ঠিক ৪৯ বছর পর এই অগস্ট মাসেই বাংলাদেশ ছেড়ে কার্যত পালাতে বাধ্য হলেন মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা। আর পাকিস্তানের সঙ্গে কিছুটা হলেও সাদৃশ্য রয়েছে বাংলাদেশের। পাকিস্তানে যেমন বারবার সেনাবাহিনীর ক্ষমতায় চলে যায় দেশ। ঠিক তেমনি আবারও বাংলাদেশের ক্ষমতার অলিন্দে চলে এল সেদেশের সেনাবাহিনী। ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি বাংলাদেশের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের তত্ত্বাবধানে গঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইস্তফা এবং দেশত্যাগের পর আবারও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের তত্ত্বাবধানে গঠিত হতে চলেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

ফলে আবারও কিছু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সরকার পতনের পর যেভাবে শ্রীলঙ্কা আবারও বিশ্বমঞ্চে নিজেদের উত্থান ঘটিয়েছে। বাংলাদেশ কি পারবে নিজেদের অগ্রগতিকে ধরে রাখতে? নাকি, চলে যাবে অবনমনে? পাকিস্তানের মতন সেনাপ্রধান এবং সেনার প্রাধান্যের কারণে সরকার ও সেনার যে সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি হয়ে রয়েছে, যার কারণে আজ সমস্ত দিক থেকে মন্দার সম্মুখীন পাকিস্তানবাসী, তেমন পরিস্থিতি সম্মুখীন হতে হবে নাতো বাংলাদেশবাসীকে? এ প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে কিছু মানুষের মনে। এখন দেখার এই সংকটজনক পরিস্থিতি কাটিয়ে কতটা এবং কীভাবে কাটিয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ।

About Post Author