পুরন্দর চক্রবর্তী,সময় কলকাতা, ১০ অগাস্ট : মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও তাঁর উপদেষ্টারা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার মুহাম্মদ ইউনুস সহ ১৪ জন উপদেষ্টা এবং দুই শিক্ষার্থী উপদেষ্টা সরকারি অতিথি ভবন যমুনাতে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেছেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কিন্তু এখনও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সার্বিকভাবে যেমন শান্ত নয়, তেমনই একাধিক প্রশ্ন উঠতে আরম্ভ করেছে দেশের মধ্যেই। এরমধ্যে শপথ গ্রহণে কেবলমাত্র কোরান পাঠ ঘিরে যেমন অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, তেমনই সুপ্রদীপ চাকমার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা থাকা নিয়ে আপত্তি তুলে যমুনার বাইরে মানববন্ধন গড়ে তোলেন একদল ছাত্র-ছাত্রী। বৈষম্য বিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে গোড়াতেই উঠছে বৈষম্যের অভিযোগ। প্রশ্ন, কতটা সফল হতে পারবেন ইউনুস ও তাঁর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার? এ নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই মুহাম্মদ ইউনুসের প্রশাসক হিসেবে সাফল্যের উপরই নির্ভর করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাফল্য। অর্থাৎ স্বাভাবিক প্রশ্ন, সফল হতে পারবেন কি মুহাম্মদ ইউনস?
প্রথমেই বলা ভালো, মুহাম্মদ ইউনুস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ২৭ টি মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, কৃষি,খাদ্যের মতই সশস্ত্র বাহিনী এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রক। উল্লেখযোগ্যভাবেই অর্থ মন্ত্রক তিনি হাতে রাখেন নি। এই মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিদেশ মন্তব্যের দায়িত্ব পেয়েছেন তৌহিদ হোসেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রয়েছে এম সাখাওয়াত হোসেনের হাতে। এঁদের মধ্যে এম সাখাওয়াত হোসেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। তিনি প্রাক্তন বিদেশ সচিব। একদা কলকাতায় কর্মরত ছিলেন। আর সালেউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর।২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। এতো গেল দফতরের কথা। কিন্তু ইউনুসের সামনে লক্ষ্য মূলত দ্বিবিধ। একে তিনি সাংবিধানিক সংকটের সামনে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব নিয়েছেন। কারণ সাত মাসের মধ্যে বিগত সরকারের প্রধান পদত্যাগ করেছেন, ভেঙে গিয়েছে নির্বাচিত সরকার। এখন তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্য দেশের মানুষের মনে আস্তা ফিরিয়ে আনা ও স্থিতিশীল সরকারের মাধ্যমে উন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়া। দ্বিতীয় এবং অন্য লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভারসাম্য রাখা।
প্রথম লক্ষটি কতদূর সফল হবে বলা মুশকিল কারণ হিসেবে জ্যোতিকা জ্যোতির মূল্যায়ন কে একটি তত্ত্বগত দিক হিসাবে ধরা যেতে পারে। আর বাস্তব পরিস্থিতির কথা বিচার করলে, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে বাংলাদেশ। প্রাণভয়ে পুলিশরা কাজে আসছেন না। চোর ডাকাতের বাড়বাড়ন্ত ঢাকা সহ বাংলাদেশের সর্বত্র। বাণিজ্যিকভাবেও কাজে প্রবল বাধা থাকায় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্প ।বাংলাদেশের পোশাক রফতানির মত ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভারত সহ অন্য দেশগুলি লাভবান হবে। উল্লেখ্য, পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়।অর্থাৎ মানুষের মনে আস্থা যোগানো এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ।
আর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে? সফল হতে পারবেন ইউনুস? কী বলছেন বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা? ইতিমধ্যেই সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মুহাম্মদ ইউনুস-ই ছিলেন সবচেয়ে ভালো বিকল্প। তবে সবাই খোলাখুলি মত প্রকাশ করছেন না। সার্বিক গতি প্রকৃতি দেখে তবেই মন্তব্য করতে চাইছেন।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন রিভা গঙ্গোপাধ্যায় দাস। তাঁর মতে, ”আমি ব্যক্তিগতভাবে ড. ইউনূসকে চিনি না। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশের বাইরে ছিলেন। আর ভারতের মনোভাবের কথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বিবৃতি দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন।”
ওপি জিন্দাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ইউনুস সম্পর্কে বলেছেন,”ছাত্রছাত্রীদের কাছে তিনি হলেন অনুপ্রেরণামূলক ব্যক্তিত্ব , তাকে দেখে তারা উদ্বুদ্ধ হয়।” তাঁর মতে, ইউনুসকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছিলেন হাসিনা এবং হাসিনার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে ইউনুসই সবচেয়ে ভালো বিকল্প।
কিন্তু ইউনুস কী সত্যি সবচেয়ে ভালো বিকল্প, নাকি বাধ্য হয়ে তাঁকে প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে মানা ছাড়া উপায় ছিল না বাংলাদেশের? একথা ঠিক যে,শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ ছিল। শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ইউনূসের ৬ মাসের কারাদণ্ড হয়েছিল। শেখ হাসিনা তাঁকে “গরিবের রক্তচোষা ” আখ্যা দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর নাহয় সম্পর্ক খারাপ ছিল। ইউনুসের সম্পর্কে আরও অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের অর্থ তহবিলের থেকে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। ইউনুস অবশ্য এসব দাবি বারবার অস্বীকার করেছেন।পাশাপাশি তাঁকে আমেরিকার হাতের পুতুল বলেও মনে করেছে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। কিন্তু কেন?
ইউনুসকে আমেরিকার হাতের পুতুল ভাবার একাধিক কারণ সামনেই রয়েছে। ইউনূসের সঙ্গে ডিপ স্টেটের গভীর সম্পর্ক রয়েছে এমনটাই অনুমান করা হয়। আর এখানেই চলে আসে সিআইএ -র নাম। খোদ হাসিনার পরিবার থেকে অভিযোগ,সিআইএ ও আমেরিকার সঙ্গে তথাকথিত ছাত্র আন্দোলনের যোগসাজস থাকার মধ্যবিন্দু হয়ে ওঠে ডিপ স্টেট। কেন ডিপ স্টেটের খুব কাছের মানুষ ইউনুস?
যতদূর জানা যায় অর্থ ইউনুস ও ক্লিন্টন দম্পতির মধ্যে প্রধান যোগসূত্র। হিলারি ক্লিনটন ডিপ স্টেটের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে একজন এবং সিআইএ-এর অনানুষ্ঠানিক প্রভাবক। ৮৪ বছর বয়সী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস হিলারির ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের সবচেয়ে বড় অর্থদাতাদের একজন।অর্থাৎ অর্থের মজবুত বনিয়াদ দীর্ঘকাল ধরে দুপক্ষের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
আর্থিক ভাবে ইউনুস যেমন ডিপ স্টেটের প্রিয়, স্বাভাবিকভাবেই একই সুতোয় গ্রন্থির বন্ধন সিআইএ-র। সিআইএ (CIA) যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে পুষ্টি দেয় সন্দেহের অবকাশ নেই। সিআইএ যাকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তথা প্রধান হিসেবে চায় তাদেরই পুরস্কৃত করে – এরকম উদাহরণ ভুরিভুরি।
এরকম ও বলা হয়,নোবেল শান্তি পুরস্কার যে ডিপ স্টেট দ্বারা পরিচালিত। উদাহরণ হিসেবে বারাক ওবামার কথা ধরা যেতে পারে।ওবামা সেই ব্যক্তি যিনি গণতন্ত্রের নামে মোট ১৭টি দেশে বোমা মেরেছিলেন।তিনি রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন মার্কিন সামরিক বাহিনী সমগ্র যুদ্ধে সর্বোচ্চ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে তিনিই নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।ডিপ স্টেটের অনুকূল শাসনব্যবস্থা নিয়ে আসা ব্যক্তিদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়, এই অভিযোগ বারবার উঠেছে।ইউনূস যুক্তরাষ্ট্র থেকে সর্বোচ্চ ২টি পদকও পেয়েছেন যা প্রমাণ করে তিনি ডিপ স্টেটের অত্যন্ত পছন্দের একজন। এখন তাঁকে আমেরিকার হাতের পুতুল বলা যে হচ্ছে তার যৌক্তিকতা ফেলে দেওয়ার নয়।
এতো গেল, তাঁর পেছনে থাকা শক্তির সম্ভাবনা। কিন্তু ইউনুসের লক্ষ্য অর্থাৎ বৈষম্যবাদের অবসান কীভাবে সফল হবে? তাঁর বিরুদ্ধে বিরাট যে যুক্তি কাজ করে তা হ’ল তিনি যদি অ-পুঁজিবাদী উপায়ে বিশ্বাসী হন তবে তার উচিত ছিল সুদ প্রদান না করে বিনামূল্যে অর্থ প্রদান করা। “শূন্য বৈষম্য এবং দারিদ্র্যের নতুন অর্থনীতি, শূন্য বেকারত্ব”- সম্পর্কে বলা যায় যখন সমস্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যর্থ হয়েছে তখন তিনি কীভাবে তা অর্জন করবেন তা দেখার বিষয়।
এবার প্রশ্ন এবং দেখার আমেরিকার প্রভাব ইউনুস আদৌ কাটিয়ে উঠতে পারেন কিনা অথবা ইউনুস আদৌ কাটিয়ে উঠতে চাইবেন কিনা। ভারত এখনও বুঝেশুনে পদক্ষেপ ফেলতে চাইছে। পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ইতিমধ্যেই সহযোগিতার কথা বলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো নিবিড় করার ডাক দিয়েছেন। বিদেশ মন্ত্রকের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলছেন, ” সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই আমরা, বড় দেশগুলির সঙ্গে ভারসাম্য রেখে এগোতে চায় বাংলাদেশ। ” এখন দেখার এই চাওয়াটুকুকে বাস্তবায়িত করতে ইউনুস প্রশাসন কীভাবে পা ফেলেন? আগামী পদক্ষেপের মধ্যেই উত্তর রয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের সাফল্য ও ব্যর্থতার।।
আরও পড়ুনহেনরি কিসিঞ্জার : ইন্দিরার ভারতের শত্রু, মোদীর প্ৰিয় ব্যক্তিত্ব!
More Stories
OPTICAL ILLUSION: একমাত্র জিনিয়াসরা পেরেছেন নিচের ছবি দুটি থেকে ৪০ সেকেন্ডে ৩ টি পার্থক্য খুঁজে বের করতে, আপনি পারবেন?
OPTICAL ILLUSION: জিনিয়াসদের মত দৃষ্টিশক্তি থাকলে নিচের ছবি দুটি থেকে ৪৫ সেকেন্ডে ৩ টি পার্থক্য খুঁজে বের করুন
OPTICAL ILLUSION: মাত্র ১ শতাংশ নীচের দেওয়া ছবি দুটির মধ্যে ৩৫ সেকেন্ডে ৩ টি পার্থক্য খুঁজে বের করতে পেরেছেন, আপনিও চেষ্টা করে দেখুন