Home » শুক্লা পঞ্চমী তিথি,ভারতের বিভিন্ন অংশে সরস্বতী জয়ন্তী নামেও পরিচিত, জেনে নিন কিছু অজানা তথ্য

শুক্লা পঞ্চমী তিথি,ভারতের বিভিন্ন অংশে সরস্বতী জয়ন্তী নামেও পরিচিত, জেনে নিন কিছু অজানা তথ্য

তমশ্রী রুদ্র, সময় কলকাতাঃ দেবী সরস্বতী হলেন  সংগীত, শিল্পকলা, বাক্য, প্রজ্ঞা ও বিদ্যার্জনের দেবী । হিন্দু ধর্মে সরস্বতী, লক্ষ্মী ও দুর্গা ‘ত্রিদেবী’ নামে পরিচিত । দেবী রূপে সরস্বতীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে । বৈদিক যুগ থেকেই বাগ দেবী হিসেবে পূজিত হয়ে আসছেন দেবী সরস্বতী । সরস্বতী সাধারণত দ্বিভূজা বা চতুর্ভূজা মূর্তিতে পূজিতা হন । দ্বিভূজা মূর্তিতে তাঁর হাতে থাকে বীণা ও পুস্তক । চতুর্ভূজা মূর্তিতে থাকে পুস্তক, অক্ষমালা, কলস ও বীণা । হিন্দুধর্মে এই প্রত্যেকটি বস্তুরই প্রতীকী অর্থ রয়েছে । হিন্দুদের একাংশ সরস্বতীর পূজা করেন শ্রীপঞ্চমী বা বসন্তপঞ্চমী তিথিতে । মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথি, এই দিনটি ভারতের বিভিন্ন অংশে সরস্বতী পূজা বা সরস্বতী জয়ন্তী নামেও পরিচিত । পশ্চিম ও মধ্য ভারতে জৈন ধর্মাবলম্বীরাও সরস্বতীর পূজা করেন । এছাড়াও বৌদ্ধদের কোনও কোনও সম্প্রদায়ও সরস্বতী পূজার প্রচলন আছে ।

ধ্যানমন্ত্রে বর্ণিত প্রতিমাকল্পটিতে দেবী সরস্বতী কে শ্বেতবর্ণা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, মুক্তা হারে ভূষিতা, পদ্মলোচনা ও বীণাপুস্তকধারিণী এক দিব্য নারীমূর্তিরূপে কল্পনা করা হয়েছে । “ওঁ তরুণশকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ কুচভরনমিতাঙ্গী সন্নিষণ্ণা সিতাব্জে। নিজকরকমলোদ্যল্লেখনীপুস্তকশ্রীঃ সকলবিভবসিদ্ধৈ পাতু বাগ্দেবতা নঃ।।” যার অর্থ “চন্দ্রের নূতন কলাধারিণী, শুভ্রকান্তি, কুচভরনমিতাঙ্গী, শ্বেতপদ্মাসনে আসীনা, হস্তে ধৃত লেখনী ও পুস্তকের দ্বারা শোভিত বাগ্‌দেবী সকল বিভব প্রাপ্তির জন্য আমাদিগকে রক্ষা করুন।”

আবার পদ্মপুরাণ-এ উল্লিখিত সরস্বতীস্তোত্রম্-এ বর্ণিত হয়েছে, “শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেতপুষ্পোপশোভিতা । শ্বেতাম্বরধরা নিত্যা শ্বেতগন্ধানুলেপনা। শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চিতা। শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারভূষিতা। ” অর্থাৎ, “দেবী সরস্বতী আদ্যন্তবিহীনা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, শ্বেতপুষ্পে শোভিতা, শ্বেতবস্ত্র-পরিহিতা এবং শ্বেতগন্ধে অনুলিপ্তা । অধিকন্তু তাঁহার হস্তে শ্বেত রুদ্রাক্ষের মালা; তিনি শ্বেতচন্দনে চর্চিতা, শ্বেতবীণাধারিণী, শুভ্রবর্ণা এবং শ্বেত অলঙ্কারে ভূষিতা ।” ধ্যান বা স্তোত্রবন্দনায় উল্লেখ না থাকলেও সরস্বতী দেবী ক্ষেত্রভেদে দ্বিভূজা অথবা চতুর্ভূজা এবং হংসবাহনা অথবা ময়ূরবাহনা রূপে পূজিতা হন । উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সাধারণত ময়ূরবাহনা চতুর্ভূজা সরস্বতী প্রতিমার পূজো করা হয় । ইনি অক্ষমালা, কমণ্ডলু, বীণা ও বেদপুস্তকধারিণী । বাংলা তথা পূর্বভারতে সরস্বতী দ্বিভূজা ও রাজহংসের পৃষ্ঠে আসীনা ।

দেবীভাগবত পুরাণ অনুসারে, পরম কুস্মন্দেরে প্ৰথম অংশে দেবী সরস্বতীর জন্ম । তিনি বিষ্ণুর জিহ্বাগ্র থেকে উৎপন্ন হয়েছেন । সরস্বতী বাক্, বুদ্ধি, বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সকল সংশয় ছেদকারিণী ও সর্বসিদ্ধিপ্রদায়িনী এবং বিশ্বের উপজীবিকা স্বরূপিনী । ব্রহ্মা তাঁকে প্রথম পূজো করেন । পরে জগতে তাঁর পূজো প্রতিষ্ঠিত হয় । সরস্বতী শুক্লাবর্ণা, পীতবস্ত্রধারিণী এবং বীণা ও পুস্তকহস্তা । তিনি নারায়ণ এর থেকে সৃষ্ট হন তাই তিনি তাঁকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেন । পরে তিনি গঙ্গার দ্বারা অভিশপ্ত হয়ে এক অংশে পুনরায় শিবের চতুর্থ মুখ থেকে সৃষ্ট হন ও ব্রহ্মাকে পতি রূপে গ্রহণ করেন । তারপর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণ দেবী সরস্বতীর পূজো প্রবর্তন  করেন। তাই পৌরাণিক তথ্য ও রীতি মেনে শ্রী পঞ্চমীর দিন হিন্দু ধর্মে দেবী সরস্বতীর আরাধনা করা হয় ।

About Post Author