সময় কলকাতা ডেস্ক, ১৮ জুলাই : মহাত্মা গান্ধী এবং মার্টিন লুথার কিংয়ের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখে একসঙ্গে নেলসন ম্যান্ডেলা নামটি উচ্চারিত হয়। নেলসন ম্যান্ডেলা নোবেল শান্তি পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। অথচ তাঁর আদর্শ ছিল মহাত্মা গান্ধী বা মার্টিন লুথার কিংয়ের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা । তিনি গান্ধীজির মত সত্য আর অহিংসাকে অবিচ্ছেদ্য বলেন নি। মার্টিন লুথার কিংয়ের মত হিংসাকে অনৈতিক বলেও ঘোষণা করেনি। তবুও তিনি শান্তির প্রতীক। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন শান্তি আসবে মানুষের অধিকারের সমতার মধ্যে দিয়ে। ১৮ জুলাই তিনি হয়তো প্রাসঙ্গিক, তবে প্রতিদিনই প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে তার আদর্শের জন্য।
১৮ জুলাই নেলসন ম্যান্ডেলা আন্তর্জাতিক দিবস। দিনটি নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিন আর ২০০৯ সালে নেলসন ম্যান্ডেলা দিবস পালনের কথা ঘোষণা করে আর ২০১০ সালের ১৮ জুলাই থেকে পালিত হচ্ছে নেলসন ম্যান্ডেলা আন্তর্জাতিক দিবস। নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি। তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন কিন্তু এর বাইরে তার সম্পর্কে আমরা কতটুকুই বা জানি। যা আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা তাও তো কম নয়।
নেলসন তাঁর নামই ছিল না। তাঁর প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক তাঁর নাম রেখেছিলেন নেলসন কারণ তাঁর নাম ঘোসা উপজাতিতে যা ছিল তার একাধিক অর্থ ছিল এবং এই অর্থগুলির মধ্যে একটি ছিল সমস্যা সৃষ্টিকারী। সত্যি সমস্যা তৈরি হয়েছিল তার নাম উচ্চারণের ক্ষেত্রে। তার শিক্ষক বিপাকে পড়ে গিয়েছিলেন প্রথমবার তার নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে। কারণ তার নাম ছিল রোলিহলাহলা। শিক্ষক সংকটমোচন করতে গিয়ে তার নাম রেখে দেন নেলসন। সেই থেকেই চালু নেলসন নামটি। সারা জীবন বৃহত্তর অর্থে মানবজাতির সংকটমোচন করে গিয়েছেন ম্যান্ডেলা। ১৯৯৩ সালের শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন আর ১৯৯৪ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন।১৯৬৪ সালে ২৭ বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর । কারণ দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনকে উৎখাত করার জন্য তিনি ষড়যন্ত্র করেছিলেন,অভিযোগ ছিল এমনটাই। কারাগারে বসে আইনের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। অথচ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ব্ল্যাক ল ফার্ম করেছিলেন তিনি ম্যান্ডেলা এন্ড ট্যাম্বো সংস্থা বর্ণবাদী আইনের আওতায় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের স্বার্থ রক্ষা করত। অল্প বয়সে দুর্দান্ত বক্সার ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। লড়াই ছিল তার রক্তে। নোবেল শান্তি পুরস্কারে পুরস্কৃত হলেও দক্ষিণ আফ্রিকায় সশস্ত্র সংগ্রামে তাঁর অবিশ্বাস কখনও দেখা যায়নি। তিনি বিশ্বাস করতেন, বর্ণ বৈষম্য মুছে দেওয়ার জন্য সহিংস আন্দোলনের পথ অন্যায্য নয়। তিনি ইথিওপিয়া গিয়ে পিস্তল মরটার বোমা ব্যবহার করতে শেখেন। আলজেরিয়া গিয়ে গিরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা।
আর এখানেই ম্যান্ডেলা তাৎপর্যপূর্ণভাবে গান্ধী বা মার্টিন লুথার কিংয়ের চেয়ে আলাদা। তিনি সবাইকে বর্ণবাদের অবসানে ও স্বাধীনতার সংগ্রামে পাশে পেয়ে ছিলেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর মত কখনই চরমপন্থীদের বিরোধিতা করেননি , চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে গান্ধীর মত কঠোর মতাদর্শও আরোপ করার চেষ্টা করেননি। মার্টিন লুথার কিংয়ের মত চরমপন্থী ভাবধারাকে নৈতিকতার বন্ধনীর বাইরে রাখেন নি।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে বহুবার গ্রেফতার বরণ করতে হয়েছে তবে তাঁর কারবাস ম্যান্ডেলার মত একটানা প্রলম্বিত হয়নি । ২৭ বছর কারাজীবনে দন্ডিত ম্যান্ডেলা স্বাধীনতার সংগ্রাম ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেছিলেন। ম্যান্ডেলা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন,অবশ্যই আরও বড় এক লক্ষ্যে তিনি লড়াই করছিলেন। তিনি যে বিশ্বের স্বপ্ন দেখেছিলেন সেখানে চরমপন্থী পথও একটি মত ছিল।তিনি চেয়েছিলেন একটি উন্নত বিশ্ব, যেখানে সকলের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং মর্যাদা সম্মানিত। সেই স্বপ্ন সফল হয়েছে কিনা সে প্রশ্ন ভিন্ন। আজ অনেকেই মনে করে থাকেন আংশিক হিংসার পথে তার আন্দোলন না হলে বর্ণ বৈষম্যর বৃহত্তর ক্ষেত্রে অবসান হওয়া অসম্ভব ছিল।।
More Stories
ফের বিতর্কে রাহুল গান্ধীর বিদেশ সফর, বিদেশের মাটিতে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মন্তব্য
ভারত সফরে মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট। নৈশভোজের আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী
প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস, মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮: ভ্যাটিকান