সময় কলকাতা ডেস্ক, ২১ জুলাইঃ লোকসভা ভোটে রাজ্যে বিপুল জনাদেশ পেয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। ২৯ টি আসন ও প্রায় দুই কোটি বিরাশি লক্ষ মানুষের আশীর্বাদ পেয়েছে ঘাসফুল শিবির। ঠিক একই রকমভাবে উত্তরপ্রদেশে নজরকাড়া সাফল্য পেয়েছে সমাজবাদী পার্টি। ৩৭ টি আসন ও প্রায় দুই কোটি নব্বই লক্ষ মানুষের ভোট পেয়েছে তারা। কংগ্রেসের পাশাপাশি এই দুই দলের উপর ভিত্তি করেই লোকসভায় নিজেদের জমি শক্ত বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’। বিরোধী জোটের এই দুই শরিক দলের রসায়নের সাক্ষী থাকল এবারের একুশে জুলাই। আগামী দিনে ঘাসফুল ও সাইকেল যে হাতে হাত রেখে চলবে তারও ইঙ্গিত দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অখিলেশ যাদব। একইসঙ্গে দেশের দুই বড় দলকেও বার্তা দিলেন দুজনে।
দুই দলের মধ্যে মিল অনেক। তেমন সম্পর্কের গভীরতা। তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদবের। তাই দিদির আমন্ত্রণ পেয়ে সোজা লখনউ থেকে কলকাতা ছুটে এলেন অখিলেশ। রবিবার সকালে পৌঁছে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি। তখন সভাস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তারপর দুজনে একসঙ্গে পৌঁছে গেলেন সভাস্থলে। দুই দলের দুই নেতার উপস্থিতি সভাস্থলে উপস্থিত জনতার উচ্ছ্বাস আরও বাড়িয়ে দেয়। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে নিজের বক্তব্য রাখার সময় তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন “গোটা দেশে বিজেপির পরাজয়ের পিছনে কৃতিত্ব দুজনের, এক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দুই অখিলেশ যাদব।” একুশের সভামঞ্চের বক্তাদের তালিকায় সাধারণত তৃণমূলের নেতাদের নাম থাকে। কিছুটা ছক ভেঙেই এবার সেই তালিকায় অখিলেশের নাম জুড়ে দেন খোদ তৃণমূলনেত্রী। মমতার আগেই তিনি বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্যের সময় তৃণমূল সুপ্রিমোর আকুন্ঠ প্রশংসা শোনা যায় উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। তিনি বলেন, “এমন নেতা পাওয়া বড় কঠিন। যিনি নিজের জীবনকে বাজি ধরে লড়াই করতে পারেন। দিদি সেই লড়াই করেছেন। আমি ধন্যবাদ জানাই দিদির সহযোদ্ধাদের যারা শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে লড়াই করছেন। এখনকার লড়াই কঠিন। দিল্লিতে ষড়যন্ত্রকারীরা বসে রয়েছেন। সাম্প্রদায়িক শক্তিরা ষড়যন্ত্র করছেন। কিন্তু আপনারা (উপস্থিত কর্মীদের উদ্দেশে) এ লড়াইয়ে দিদির পাশে থাকলে জয় আসবেই। ইনসাফের পাশে থাকলে জয় আসতে বাধ্য।”
কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আর বেশিদিন থাকবে না, কয়েকদিন আগেই দাবি করেছিলেন মমতা। সেই কথাই এবার শোনা গেল অখিলেশের গলায়। তিনি বলেন, “দিল্লির মসনদে যারা রয়েছেন, তারা কয়েকদিনের অতিথি। দিল্লির সরকার আর কিছুদিনের মধ্যে ভেঙে যাবে। আমাদের ও আপনাদের সকলের জন্য খুশির খবর আসা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ইতিবাচক রাজনীতির সময় এসেছে। সবাই মিলে দেশ ও দেশের সংবিধানকে বাঁচাতে হবে। একজোট হতে হবে সকলকে। আপনারা একজন বড় নেত্রী পেয়েছেন। যিনি নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে দলকে আজ এখানে নিয়ে এসেছেন। আরও অনেকটা পথ যাওয়ার বাকি রয়েছে। এই লড়াইয়ে আমরা আপনাদের পাশে রয়েছি।”
পরে বক্তব্য রাখতে উঠে অখিলেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মমতাও। তিনি বলেন, “উত্তরপ্রদেশে খেলা হয়েছে। অখিলেশরা দারুণ খেলেছে। বিজেপি নির্লজ্জ না হলে হারের পর পদত্যাগ করত।” সবমিলিয়ে দেশের তৃতীয় ও চতুর্থ বড় দলের দুই সর্বোচ্চ নেতার বক্তব্যে এদিন বিজেপির বিরুদ্ধে একযোগে পথচলার কথা স্পষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, মমতা, অখিলেশ নিজেদের বক্তব্যে কংগ্রেসের কথা উল্লেখ না করে তাদেরও বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেন, যে শরিকদলের উপর ছরি ঘোরানো বন্ধ করতে হবে হাত শিবিরকেও।
More Stories
বিজেপি সভাপতি নির্বাচন নিয়ে চাপানউতোর , দিল্লি গেলেন শুভেন্দু অধিকারী , সুকান্তর বাড়িতে বৈঠকে শুভেন্দু
এবার একেবারে তৃণমূল কার্যালয়ের ভিতরেই ধর্ষণের অভিযোগ! জল গড়ালো আদালতে
নতুন রাজ্য সভাপতি নির্বাচন নিয়ে মেগা বৈঠকে বঙ্গ বিজেপি