Home » এখনও আসে নি গ্রামে বিদ্যুৎ : অন্ধকারে থাকা হতাশ ও বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের হাতে ঘেরাও বিদ্যুৎকর্মীরা

এখনও আসে নি গ্রামে বিদ্যুৎ : অন্ধকারে থাকা হতাশ ও বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের হাতে ঘেরাও বিদ্যুৎকর্মীরা

সানী রায়,সময় কলকাতা, ৪ অগাস্ট : স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরে এরকম গ্রামও আছে! বিদ্যুৎ ঢোকে নি গ্রামে। যদিও  বিদ্যুৎ পরিষেবা এখন শাঁখের করাত।যেখানে আলো আছে সেখানে বিদ্যুৎ মাশুল এতটাই বেড়েছে যে সাধারণ মানুষ নাকানিচোবানি খাচ্ছেন। আবার, কিছু এলাকায় বছরের পর বছর বিদ্যুতই ঢোকে নি। কোচবিহারের পানিয়ারচর এরকমই একটি অন্ধকারে ডুবে থাকা গ্রাম, ‘আলো’-র আশায় দিন গুনছে ৩০০টি পরিবার । তাই বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা গ্রামে ঢুকতেই গাড়ি আটক করে বিক্ষোভে সামিল হতে দেখা গেল গ্রামবাসীদের ।

কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ ব্লকের নিস্তরক গ্রাম পঞ্চায়েতের পানিয়ারচর গ্রামে আজও পৌঁছয়নি বিদ্যুৎ। ফলে সন্ধ্যা হতেই ঘোর অন্ধকার নেমে আসে গ্রামজুড়ে। গ্রামটি  ভারত – বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থান করায় ভৌগোলিক অবস্থানজনিত অসুবিধা বহুবিধ। অনেক রকম নাগরিক সুযোগ সুবিধার ছিটেফোঁটা পাননা বলেই ক্ষোভ গ্রামবাসীদের । একইসঙ্গে তাদের অভিযোগ, বারংবার প্রশাসনের দরজায় দরজায় কড়া নেড়েও কোনও সুরাহা মেলেনি৷

বাঙালির সর্ববৃহৎ সর্বশ্রেষ্ঠ পূজা দুর্গাপুজো প্রায় চলে এসেছে। বহু ক্লাব ও সংগঠনের খুঁটিপুজো হয়ে গেছে। । হাতেগোনা দুটো মাসও বাকি নেই পুজোর । আর তার জন্য আলো দিয়ে সেজে ওঠার অপেক্ষায় প্রত্যেকটি শহর থেকে শহরতলি । তারও আগে স্বাধীনতার ৭৭ বছর পূর্ণ হয়ে যাবে। পালিত হবে স্বাধীনতা দিবস। ঠিক তখনই এমন একটি গ্রামের খোঁজ মিলেছে, যেখানে বিদ্যুৎই পৌঁছয়নি এখনও! একুশ শতকের দু দশক পার করে আজও বিদ্যুৎহীন একটি গ্রাম।  অথচ এদিকে একটা গোটা গ্রাম ডুবে আছে অন্ধকারে।আজও বিদ্যুতের আলো দেখেনি এই গ্রাম। প্রশাসনের দরজায় দরজায় কড়া নেড়েও মেলেনি সুরাহা। এমনই অভিযোগ গ্রামবাসীদের।

দিনমজুর পরিবারগুলির ঘরে বিদ্যুৎ নেই। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার অসুবিধা, মোবাইল আছে কিন্তু অন্যত্র না গেলে চার্জ দিতে পারেন না। গ্রামের রাস্তাও বেহাল। প্রসূতিদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে সমস্যা হয় বলেও দাবি তাঁদের। কোনও গাড়ি ঢুকতে চায় না। অথচ গ্রামটির প্রাকৃতিক শোভা মনোমুগ্ধকর  দু’দিকে ধান খেত, মাঠ সুন্দর সাজানো গ্রামটি দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। কিন্তু, যথার্থ অর্থে পিছিয়ে পড়া গ্রামে আজও নেই আলো।বছরের পর বছর ধরে অন্ধকারেই দিন কাটে গ্রামবাসীদের। সন্ধ্যা হলেই নেমে আসে ঘোর আঁধার। কেরোসিন ভরসা, মোমবাতির আলোই ভরসা।  কেরোসিনের দাম বেড়েছে অনেকটাই, তাই বিদ্যুতের জন্য বিভিন্ন দফতর এবং প্রশাসনের দরজায় কড়া নেড়েছেন অসহায় ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের পানিয়ারচর গ্রামে।

তবে স্থানীয়রা যেমনটা জানাচ্ছে, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় ঘটা করে লোক দেখানোর বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানো হয়েছিল আশ্বাসও মিলেছিল ভোট মিটলেই গ্রামে বৈদ্যুতিক পরিষেবা চালু হবে। নাম কা ওয়াস্তে খুঁটি বসানোর কাজ হয়েছিল। এরমধ্যে হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা সেই খুঁটি তুলতে গেলে ঘটে বিপত্তি। শুরু হয় গ্রামবাসীদের ক্ষোভ -বিক্ষোভ।

বৈদ্যুতিক বিভাগের কর্মীদের দুটি গাড়ি ঘেরাও করে  গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ চলতে থাকে । এরপরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পম্পা বর্মন গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করে এদিনের বিক্ষোভ তুলে নিতে অনুরোধ করেন গ্রামবাসীদের। অতঃপর কি হবে কেউ জানে না।  আদৌ কি এই গ্রামে আলো পৌঁছাবে? নাকি প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে যেমনটা ছিল সে রকম অন্ধকারেই ডুবে থাকবে পানিয়ারচর গ্রাম,তা সময়ই বলবে।।

আরও পড়ুনছেলের হাতে বাবা খুন

About Post Author