Home » উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে নি বিজেপির বাংলা বনধ

উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে নি বিজেপির বাংলা বনধ

সময় কলকাতা ডেস্ক, ২৮ আগস্ট : আরজি কর চিকিৎসক হত্যা ও ধর্ষণ কাণ্ডে নবান্ন অভিযানে পুলিশি ভূমিকার প্রতিবাদে বিজেপির পক্ষ থেকে ১২ ঘন্টা বাংলা বনধ ডাকা হয়েছিল। পুলিশ ও বনধ সমর্থনকারীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি, পুলিশের হাতে বনধ সমর্থকদের আটক – গ্রেফতার, বাস পরিষেবা ব্যাহত -ট্রেনে কলাপাতা দিয়ে ট্রেন রোখা সহ পরিচিত বনধের ছবি যেমন দেখল বাংলা তেমনই আবার বেশ কিছু রক্তঝরা ছবি দেখল বাংলা। গুলি- বোমা – পুলিশকে বনধ সমর্থকদের কামড় সহ বেশ কিছু বনধের উগ্ররূপ দেখা গিয়েছে। দেখা গিয়েছে দোকান বন্ধ করার নামে দোকান লুঠ করার ছবি। শাসক দলের সমর্থকদের তাড়া খেতে দেখা গিয়েছে বনধ সমর্থক নেতাদের। বিজেপির ডাকা ১২ ঘন্টার বনধ শেষ হওয়ার তিনঘন্টা আগেই বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বললেন, “বাংলার জনগণকে নত মস্তকে প্রণাম জানাই। মানুষ বনধ সফল করেছে। এটা মানুষের বনধ। অনেকের হয়তো ক্ষতি হয়েছে তার জন্য ক্ষমা চাইছি। ধরনার অনুমতির জন্য আদালতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।” পুলিশকে নিশানাও করেছেন তিনি। বনধ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে কুণাল ঘোষ বলেন, বনধ সুপার ফ্লপ। সারা দিনে হয়েছেটা কী?

‘ মহিলাদের উপর অত্যাচার আর বরদাস্ত নয়’ , আরজিকর কাণ্ডে এবার সরব রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু

বুধবার বিজেপির ডাকা বনধের জেরে সকাল থেকেই জেলায় জেলায় বিক্ষিপ্ত গোলমালের ছবি উঠে এসেছে। বেলা বাড়তে তা বড় আকার ধারণ করেছে কোথাও কোথাও। চলেছে গুলিও। সারাদিনে যা হয়েছে তারমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাটপাড়ার গুলি চলার ঘটনা। সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাটপাড়া। বিজেপি কর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ বিজেপি নেতা অর্জুন সিংয়ের। সকাল ছ’টা নাগাদ বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়ার নেতৃত্বে বিজেপির কর্মী সমর্থকেরা আসেন বনগাঁ স্টেশনে। রেল অবরোধ করেন তাঁরা। রেল অবরোধ হয় হুগলি স্টেশনেও। হুগলি স্টেশনে ব্যান্ডেল-হাওড়া লোকাল আটকে দেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। রেললাইনে শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। রায়গঞ্জে ধুন্ধুমার হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। পুলিশকে শাড়ি পরানো হবে, এই দাবি তুলে পথে শাড়ি নিয়েই বিক্ষোভ বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, বাড়ি থেকে লোকজন আনা হচ্ছে, জোর করে দোকান খোলানো হচ্ছে। টালা ব্রিজে অবরোধ করে বিজেপি কর্মীরা। চলে গাড়ি ভাঙচুর। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। এদিকে, বিজেপির ডাকা ১২ ঘন্টা বনধে সকালেই রেল অবরোধ করে বারাসাত জেলা বিজেপি কর্মীরা। রেল লাইনে শুয়ে পড়ে বিজেপি কর্মীরা। বারাসতে চাপাডালি মোড়ে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা জোর করে দোকান বন্ধ করে দেয়। চলে গাড়ি ভাঙচুর। মিছিল চলাকালীন ব্রিজের নিচে বেশকিছু দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্‌ধের দিনে সকাল ১০টা পর্যন্ত কোচবিহারে ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দু’জন বিজেপি বিধায়কও রয়েছেন। তুফানগঞ্জের বিধায়ক মালতী রাভা রায় এবং কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে-কে প্রথমে আটক করে পুলিশ, পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। এদিকে, বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার বনধ সফল করতে তুমুল সংঘর্ষ মালদহে। বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের। দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী। পূর্ব মেদিনীপুরের বনধে্র সমর্থনে বিজেপি কর্মীরা পথ অবরোধ করে অবরোধ সরাতে রেয়াপাড়াতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পাঁচজন বিজেপি কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন। বসিরহাটে বিজেপির রাস্তা অবরোধকে কেন্দ্র করে বচসা হয়। মহিলা কাউন্সিলর সোমা দাস এবং তাঁর অনুগামীরা সেই অবরোধ হটাতে মাঠে নামেন। অভিযোগ, লাথি মেরে সরিয়ে দেওয়া হয় বিজেপির রাখা চেয়ার। কলকাতার চিত্র ছিল বিক্ষিপ্তভাবে অগ্নিগর্ভ। সারাদিনে বনধের জেরে সজল ঘোষ, শমীক ভট্টাচার্য, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পল, লকেট চট্টোপাধ্যায়, রাহুল সিনহা-সহ বেশ কয়েক জন বিজেপি নেতাকে আটক করে পুলিশ। ভাটপাড়ার গুলির ঘটনা ছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যানবাহন পরিষেবা রেল পরিষেবা ব্যাহত হয়। সুকান্ত মজুমদারের সাফল্যের দাবি এবং কুনাল ঘোষের বনধকে সুপার ফ্লপ আখ্যা দেওয়ার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে বন্ধে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার কাহিনী। তবে সামগ্রিকভাবে বন্ধে বিরাট প্রভাব পড়েনি। মানুষজন যাতায়াত অসুবিধায় পড়লেও রাস্তায় লোকজন চলেছে, অফিস গেছেন মানুষ। স্কুল হাসপাতাল ছিল খোলা। সার্বিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বিরাট অবনতির চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়নি।।

About Post Author