Home » বিচারের বাণী নীরবে….আরজিকর ও কামদুনি

বিচারের বাণী নীরবে….আরজিকর ও কামদুনি

পুরন্দর চক্রবর্তী ও চুমকী সূত্রধর,সময় কলকাতা,১ সেপ্টেম্বর : তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুন। আরজি কর কাণ্ড নিয়ে সুবিচার চেয়ে প্রতিবাদের ঝড় রাজ্য ছাড়িয়ে সারা দেশে। প্রতিবাদে বারবার বলা হয়েছে, ধর্ষণ ও খুনে রাজ্য বা দেশে নির্যাতিতা ও ধর্ষিতা সুবিচার পান না। প্রতিবাদ মিছিলে হেঁটে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুবিচার চেয়েছেন। তিনি চেয়েছেন দোষীদের মৃত্যুদণ্ড। তিনি আইনের সীমাবদ্ধতার উল্লেখ করে কেন্দ্রের কাছে বিশেষ আইন আনার কথা বলেছেন। স্বাধীনতা দিবসের পরের দিন প্রতিবাদ মিছিল করার পাশাপাশি একাধিক ঘটনার কথা মুখ্যমন্ত্রী সামনে তুলে এনেছেন, যেখানে নির্যাতিতা নারী সুবিচার পাননি। তিনি উল্লেখ করেছেন একাধিক ঘটনা। এর মধ্যে তৃণমূলের শাসনকালে হওয়া কামদুনি ধর্ষণকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন নিম্ন আদালত মৃত্যুদণ্ড দিলেও তা বহাল থাকেনি।

কী হয়েছিল কামদুনিতে? বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে সত্যি কি কেঁদেছিল?

প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষভাগে কলকাতা হাইকোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায় দেয়। নিম্ন আদালতের রায় কার্যত খারিজ করে ২০১৩ সালের কামদুনি কাণ্ড নিয়ে রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। পর্বতের শেষ পর্যন্ত মুসিকপ্রসব হয়েছিল, মনে করেছিলেন কামদুনি কাণ্ডের সঙ্গে একদশক ধরে জড়িয়ে থাকা বিশেষজ্ঞ মহল। সবকিছু হাতছাড়া হয়ে আন্দোলনকারীদের হাতে স্রেফ পড়ে ছিল পেন্সিল, প্রাপ্তিযোগ শূন্য, এমনটাই মনে করা হয়। শীর্ষ আদালতে গিয়েও রায় বদল হয়নি। হাইকোর্ট কামদুনি কাণ্ডে কী রায় দিয়েছিল অথবা নিম্নতর আদালত কী রায় দিয়েছিল, তা জানার আগে বহুলচর্চিত কামদুনি খুন ও ধর্ষণকাণ্ডের আলোচনায় কামদুনিতে কী হয়েছিল সেই ফ্ল্যাশব্যাকে আরও একবার যাওয়া যাক।

কামদুনি – ৭ জুন রাত, ২০১৩

রাত বাড়ছে। উত্তর চব্বিশ পরগনায় অন্ধকারে মোড়া একটি গ্রাম। আগুন জ্বলছে গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে। যদিও গ্রামের একটি বাড়িতেও উনুন জ্বলেনি, রান্না হয়নি, অভুক্ত গ্রামের প্রতিটি মানুষ। গ্রামবাসীরা রাস্তায়। তারা বিচার চায়। তারা ফাঁসি চায়। ফাঁসি চায় পিশাচদের। নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি চায় তারা। সেই পিশাচদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আনতে হবে, তবেই পুলিশ নিয়ে যেতে পারবে তাদের গ্রামের নির্যাতিতা মেয়ের দেহ। পুলিশকে তাই তাদের মেয়ে, তাদের গ্রামের মেয়ের দেহ ছুঁতে দিচ্ছে না তারা। ভেড়ি লাগোয়া এক কোম্পানির লিজ নেওয়া জমিতে পড়ে রয়েছে গামছা দিয়ে ঢাকা তাদের গ্রামের মেয়ের নগ্নদেহ। যে সেখানে নির্যাতিতা হয়ে মারা গেছে কয়েক ঘন্টা আগেই, যে কলেজ পড়ুয়া মেয়েটি অমানুষিক, বর্বরোচিত ধর্ষণ ও হত্যার শিকার। যার দেহ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না কয়েকঘন্টা ধরেই। দেহ পেতেই গ্রামবাসীদের নজরে আসে মানুষরূপী চিল, শকুনেরা যেন কুরে কুরে খেয়েছে তাঁকে। তার অত্যাচারের সাক্ষী তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসা ফেনা যা তার চোখ, মুখ, ঠোঁট, নাক ঢেকে রেখেছে। এটাই সেদিনের অন্ধকার গ্রাম কামদুনি, যে গ্রামে মানুষরূপী পশুদের অত্যাচারে প্রাণ হারিয়েছিল এক কলেজ পড়ুয়া তরুণী।

আদতে কী হয়েছিল?

১১ বছর আগের কামদুনির সেই ভয়ঙ্কর দিনটি ছিল বৃষ্টিভেজা। তখন আনুমানিক দুপুর দুটো কুড়ি বেজেছে। রাজারহাটের ডিরোজিও কলেজের কলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীটি কলেজ থেকে একাই ফিরছিল কামদুনি গ্রামে বাড়ির দিকে। কামদুনি বাস স্টপেজ থেকে গ্রামের শুড়িপথ ধরে বাড়ির পথে এগোচ্ছিল সে। পথেই আটবিঘার জমি, এক কোম্পানির লিজ নেওয়া ঘরে মদ-মাংস সহযোগে অপেক্ষায় ছিল কিছু মানুষরূপী পিশাচ। আটবিঘা জমির গেটের সামনে থেকে নিমেষের মধ্যে আনসার আলি মোল্লা ও তার আট অপকর্মের শাগরেদ ক্ষীণতনু কলেজ ছাত্রীকে টেনে নিয়ে যায় গেটের ভেতরে। চলে পাশবিক অত্যাচার। গণধর্ষণ, পুনরায় ধর্ষণ। অত্যাচারে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ার পরে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা চলে। তার আগে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় কলেজ ছাত্রীকে। এমনকী সরকারি মতে, মৃতাবস্থায় তার ওপরে চলে চরম পৈশাচিক অত্যাচার। সন্ধ্যে অব্দি মেয়ে বাড়ি না ফেরায় বাড়ির লোক অস্থির হয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে কলেজ ছাত্রীকে। গ্রামের চার-পাঁচটি পাড়ার মানুষ একযোগে খুঁজে শেষ পর্যন্ত আটবিঘার পাঁচিলের এক পাশে পড়ে থাকতে দেখে তরুণীর নিস্প্রাণ নগ্ন দেহ। মুখ দিয়ে বেরোনো গেঁজিয়ে ওঠা ফেনা শুকিয়ে আছে। চরম অত্যাচারে শরীরটি স্বাভাবিক ছিল না। ঘাসে পড়ে থাকা নির্যাতিতার দেহের দুটি পায়ের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে উঠেছিল এতটাই, যা অত্যাচারের হাল বয়ান করছিল। গ্রামবাসীরা চুপ করে থাকেনি। মৃত তরুণীর শরীরটিকে রাস্তায় শুইয়ে রেখে আনসার আলি মোল্লা ও তার দুস্কর্মের সহযোগীদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে রাত থেকে চালিয়ে যায় অবস্থান বিক্ষোভ। তৎকালীন আমিনপুর ফাঁড়ির অধীন গ্রামটির বাসিন্দারা জেলা পুলিশকে ঘিরে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখায়। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ধরা পড়ে আট অভিযুক্ত। পরবর্তীতে ধরা পড়ে আরও এক অভিযুক্ত।
নৃশংস গণধর্ষণ ও খুনের ফলশ্রুতিতে শুরু হয় গ্রামবাসীদের আন্দোলন। রাজ্যের মানুষ শিউরে ওঠে সেদিনের ঘটনার বিবরণে। পরবর্তীতে কামদুনিকাণ্ড গোটা রাজ্যবাসীকেই আবার নাড়া দিয়ে যায় বিভিন্ন ভাবে। চলতে থাকে কামদুনি গ্রামের বিক্ষোভ আন্দোলন। রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে ঘটনাটিকে ঘিরে। রাজ্য ছাড়িয়ে সারা দেশে প্রভাব ফেলে সেদিনের কামদুনি। মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে ক্ষোভ জানাতে ভোলেনি গ্রামের মেয়েরা। নিজেদের ক্ষোভ নিয়ে দিল্লি অভিযান পর্যন্ত করে সেদিনের অখ্যাত গ্রামটির মানুষেরা। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে তারা। একাত্ম, একজোট হয়ে সমগ্র গ্রামবাসী সুবিচার প্রত্যাশী হয়ে আন্দোলনে নেমেছিল, যার আংশিক ও সাময়িকভাবে হলেও সাফল্য এসেছিল পরবর্তীতে। ধর্ষণের প্রতিবাদে সামিল মৌসুমী, টুম্পা, সুকান্ত, ভাস্কর সহ কামদুনির জোটবদ্ধ আন্দোলন আজও এক দৃষ্টান্ত।

কামদুনি ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রথমে বারাসাত আদালত ও পরে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে চলে শুনানি। প্রায় ৩২ মাস দীর্ঘ সময় ধরে শুনানির পরে আদালত রায় দেয়। সইফুল আলি, আনসার আলি মোল্লা আর আমিন আলি – এই তিনজনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। আমিনুর ইসলাম, ভোলা নস্কর, এমানুল ইসলাম – এদের আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ধৃত নয় অভিযুক্তর একজন বন্দি দশাতেই মারা যায়, অপর দুজন প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস পায়। এই ঘটনাকে বিরলতম আখ্যা দিয়ে বিচারক তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্ব গ্রামবাসীদের ওই প্রতিবাদ আন্দোলনকে অনেকটাই স্তিমিত করে দিতে সক্ষম হয়। নির্যাতিতার পরিবারকে গ্রাম থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তার ভাইকে সরকারি চাকরি দেওয়া হয়।

কামদুনি কাণ্ডের সাময়িক প্রভাব

কামদুনি একটি নতুন দিশার উন্মেষ। নির্যাতিতার পরিবারের একাধিক মানুষ চাকরি পেয়ে আন্দোলন থেকে সরে গেলেও নির্যাতিতার পরিবার দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তিই চেয়েছিল। সর্বোপরি, সামগ্রিকভাবে গ্রামবাসীরা নির্যাতিতা মেয়েটি সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত কখনই আন্দোলন থেকে সরে আসেনি আর এজন্যই কামদুনি আন্দোলন আজও দৃষ্টান্ত। নৃশংস নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে একযোগে একটি অখ্যাত গ্রামের মানুষদের একজোট হয়ে রুখে দাঁড়ানোর এবং নিম্ন আদালত থেকে সুবিচার পাওয়া একটি আপাত সফল আন্দোলনের প্রথম পর্ব হিসেবেই চিহ্নিত। অতঃপর নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ও সাজাপ্রাপ্তরা যায় হাইকোর্টে। সাফল্যের সংজ্ঞা বদলাতে আরম্ভ করে।

হাইকোর্টের রায়

মুখ্যমন্ত্রী ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচারের দ্রুত নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন। এক মাসের মধ্যে না হলেও তিন বছর কাল পরে নিম্ন আদালতে রায় বেরোলেও প্রায় ৭ বছর ধরে মামলা চলে হাইকোর্টে। হাইকোর্টের রায়ে কামদুনি মামলা সাজা ঘোষণা করে হয়, যা কামদুনির আন্দোলনকারীদের হতাশা ও নিরাশার মধ্যে ঠেলে দেয়। কী রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট? কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। প্রমাণের অভাবে দু’জন আগেই ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল। মামলা চলাকালীন আরও এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালে কলকাতার নগর দায়রা আদালত বাকি ৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করেছিল। তিনজনের ফাঁসির সাজা ও বাকি তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালত। পরবর্তীতে সেই মামলা আসে হাইকোর্টে। দীর্ঘ শুনানির পর অবশেষে ২০২৩ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তার ডিভিশন বেঞ্চ কামদুনি মামলায় রায়দান করে।
নিম্ন আদালতে তিনজনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষিত হয়েছিল যা মকুব করে দেয় উচ্চ আদালত। অভিযুক্ত শরিফুল আলি, আনসার আলি মোল্লা ও আমিন আলি – এই তিনজনকে এর-আগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল নিম্ন আদালত। কলকাতা হাইকোর্টে বেকসুর খালাস পেয়ে যায় আমিন আলি। শুধুমাত্র আনসার আলি মোল্লা ও শরিফুল আলির আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টে মৃত্যুদণ্ডের কোনও বিষয়ই থাকেনি। গ্রামবাসী ও মৃত ছাত্রীর পরিবারের তরফে এই ঘটনার মূল পাণ্ডা ছিল আনসার আলি মোল্লা। নিম্ন আদালতে শুনানি চলাকালীন, অভিযোগ ছিল যাদের বিরুদ্ধে, তার মধ্যে আনসার আলি মোল্লা ধর্ষণের ঘটনায় পাণ্ডা ছিল, এরকম অভিযোগ বারবার উঠেছে। চার্জশিটে অবশ্য সইফুলকে সবচেয়ে বেশি অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়। ধর্ষণ, ছাত্রীর মৃতদেহের উপরে অত্যাচার, পুনরায় ধর্ষণ – একাধিক অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ থাকায় তাদের ফাঁসি চেয়ে এসেছিল কামদুনি। তারা মুক্তি না পেলেও তাদের প্রাণদণ্ড মুকুব হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই কামদুনি খুশি হয়নি তাদের চাওয়া দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি কার্যত হাতছাড়া হওয়ায়। কামদুনি মনে করেছিল তারা সুবিচার পায়নি। উচ্চ আদালতের রায়ের শেষে টুম্পা, মৌসুমীদের প্রতিক্রিয়া ও হতাশা তা পরিষ্কার করে দেয়। উল্লেখ্য, নিম্ন আদালত আরও তিন অভিযুক্ত এমানুল হক, ভোলানাথ নস্কর ও আমিনুল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছিল। এদের মধ্যে এমানুল হককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা রদ করে তাকে মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি, আমিনুল ও ভোলানাথ ইতিমধ্যেই ১০ বছর জেল খেটে ফেলেছিল। দু’জনকেই স্রেফ ১০ হাজার টাকা করে দিতে বলা হয়।

বিচারের বাণী

ঘটনাটি প্রায় এক দশকের বেশি আগের। ২০১৩ সালের জুন মাসের ওই ভয়ঙ্কর ঘটনা টলিয়ে দিয়েছিল গোটা রাজ্যকে। প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে। হাইকোর্টের রায়ের পর দেখা যায়, কামদুনি কাণ্ডের আন্দোলনকারীরা বিচারের শেষে যা যা চেয়েছিলেন, সেই হিসেব ধরলে তাদের চাওয়া-পাওয়ার হিসেব মেলেনি। কলেজ ছাত্রী ধর্ষণ ও খুনের কাণ্ডে ৯ অভিযুক্তর মধ্যে প্রধান দুই অভিযুক্ত আনসার ও শরিফুলকে মুক্ত না করতে পারলেও, অভিযুক্তদের আইনজীবীরা সবাইকেই কারাগারের বাইরে নিয়ে আসতে পেরেছেন। এগারো বছরের কম সময়ে দুজন বাদে মুক্তি পেয়ে যায় সবাই। কামদুনির দীর্ঘ লড়াইয়ের প্রতিফলন না হওয়ায় হাইকোর্টের রায়ে যে কামদুনি গ্রাম খুশি হয়নি তা বলাই বাহুল্য। তরুণী ছাত্রীর ওপরে পৈশাচিক ও বর্বর অত্যাচার ও হত্যার সুবিচার চেয়ে ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে যারা একযোগে লড়েছিলেন, তাদের মধ্যে হতাশা ছাড়া বিশেষ কিছুই কাজ করেনি। কার্যত কামদুনির দিকে যারা এক দশক ধরে নজর রেখেছেন, তাঁরাও মনে করছেন টুম্পা, মৌসুমী, ‘মাস্টার’ প্রদীপ মুখার্জী, ভাস্কর এবং কামদুনির পাঁচটি পাড়ার বাসিন্দারা একযোগে লড়ে আদর্শগতভাবে অঙ্কে একশোতে একশো পেলেও বাস্তবের পরিপ্রেক্ষিতে শূন্য পেয়েছেন। কামদুনি গ্রাম হয়তো আলোকিত হয়েছিল, পুলিশ প্রহরা বেড়েছিল। তবুও নিশ্চিতভাবে বলা যায়, নির্যাতিতার প্রকৃত সুবিচারের যে দাবি তোলা হয়েছিল, তা হাইকোর্টের রায়ে হাতছাড়া হয়ে যায়, হাতে পড়েছিল পেন্সিল। সে কথা ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে স্মরণ করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৯ আগস্ট আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের নৃশংস ধর্ষণ ও খুনের পরে এনকাউন্টারের প্রসঙ্গ তোলা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় ছিল আইন পরিবর্তনের দাবি। তিনি জানতে চেয়েছিলেন এরকম পাষণ্ডের বেঁচে থাকার অধিকার কি আছে? কামদুনির প্রতিবাদীরাও আজ থেকে ১১ বছর আগে সেই প্রশ্নই তুলেছিল। প্রশ্নের উত্তর তারা পায়নি।।

About Post Author