Home » হাথরস গণধর্ষণ কাণ্ড ও একটি প্রহসন

হাথরস গণধর্ষণ কাণ্ড ও একটি প্রহসন

পুরন্দর চক্রবর্তী, সময় কলকাতা, ৪ সেপ্টেম্বর :

এই পথে চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে আমার মেয়ে,  পড়ে আছে তার ধুলোমাখা হাওয়াই চটি।

আরজিকর কাণ্ড ও হাথরস গণধর্ষণ কাণ্ড

আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসক ধর্ষণ-খুন কাণ্ড নিয়ে দেশ উথাল পাতাল। উনিশ বছরের এক দলিত মেয়ের ওপরে নৃশংস, পাশবিক অত্যাচারের ঘটনায় বছর চারেক আগে হাথরস এরকমভাবেই তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল দেশ জুড়ে। দুটি ঘটনায় কিছু সাদৃশ্য রয়েছে, রয়েছে বেশ কিছু বৈসাদৃশ্য। তবে বৈসাদৃশ্য যাই থাকুক , হাথরস গণধর্ষণ কাণ্ড হিসেবে যা আলোড়ন ফেলেছিল তা আদালতের রায়ের পরে স্রেফ একটি “দুর্ঘটনাবশত খুনের কাণ্ডে ‘ পরিণতি লাভ করে। তবুও এনিয়ে তর্ক -বিতর্কের শেষ নেই, আদালতের রায়কে প্রহসন ভাবা মানুষের সংখ্যাও কম নয়।

এ কোন সকাল!

সূর্য ওঠার আগের ন্যূনতম ৪৮ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১ প্রহর বা ৩ ঘণ্টাব্যাপী সময়কে হিন্দু ধর্মে ব্রাহ্ম মুহূর্ত বলা হয় ৷ সর্বশক্তিময় প্রভু প্রতিটি ধর্মশাস্ত্রেই এ মুহূর্তটিকে তাঁকে স্মরণ এবং তাঁর ক্ষমা , করুণা ও দয়া প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত বলেছেন । ভারতীয় সংস্কৃতি অনুসারে ব্রহ্মা হলেন সৃষ্টির দেবতা। তাই ব্রাহ্ম মুহূর্ত হল স্বয়ং ব্রহ্মার সময়। সাধারণভাবে অনেক ক্ষেত্রে আবার সূর্য ওঠার দেড় ঘন্টা আগের সময়কে ব্রাহ্ম মুহূর্ত বলে ধরা হয়। এই সময় মন ও চিত্ত পুণ্য থাকে। এই সময়ের কিছু আগে ও কিছু পরে মানুষের মধ্যে কু চিন্তা জন্মায় না। এমনটাই বলা হয়। বলা হয়, ভোরে বা সাতসকালে মানুষ সাধারণভাবে অসৎ চিন্তা করে না । ধার্মিক মানুষ মন্দির -মসজিদে যায়। সাতসকালে কেউ সাধারণভাবে অপরাধ করে না, কাকডাকা সকালে ক্রাইমের কথা কমই শোনা যায়। আর এখানেই যেন সাদৃশ্য হালের পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর হাসপাতালের ৯ আগস্ট ব্রাহ্ম মুহূর্তর কাছাকাছি সময় ও প্রায় চার বছর আগে উত্তরপ্রদেশর হাথরসের একটি সকালের । হাথরসে ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরের সকালবেলা সম্ভবত পবিত্র ছিল না কয়েকজনের কাছে। সম্ভবত রামু, সন্দীপ, লবকুশ বা রবির কাছে। তাদের জন্যই সেই সূর্যালোকিত সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার হয়ে ওঠে একটি দলিত মেয়ের কাছে, তার পরিবারের কাছে। মেয়েটি এই সকালের পরে আর দিন পনের মুমূর্ষু হয়ে বেঁচেছিল।পরিবারটিকে নরক যন্ত্রণা হয়েছিল পরবর্তী তিন বছর, যে দুঃস্বপ্নের স্মৃতি তারা যতদিন বেঁচে থাকবে তার একটি দিনও তাদের পক্ষে ভোলা সম্ভব হবে না। কী হয়েছিল সেদিন? জানতে যেতে হবে চাঁদপায়।

হাথরস চাঁদপা

 পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের হাতরাস জেলার এক জাতীয় সড়কের পাশে একটি শান্ত অঞ্চল হল চাঁদপা।  কৃষিকাজ এখানে প্রধান জীবিকা। ১৪ সেপ্টেম্বর ছিল একটি উত্তপ্ত রৌদ্রোজ্জ্বল দিন। ১৯ বছর বয়সী হাথরস কন্যা, একটি দলিত মেয়ে, সেদিন এই নৈসর্গিক ছবির মত অঞ্চলের একটি ছোট গ্রামে নগ্ন, রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে ছিল। মেয়েটি ছিল গুরুতর আহত,জিভ কেটে গিয়েছিল,শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে । যখন তাকে খুঁজে পাওয়া যায় সে তখন মারা না গেলেও প্রাণের বিশেষ লক্ষণ তার মধ্যে ছিল না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছিল তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, দৃশ্যপট এবং মেয়েটির অবস্থা তাই বলে। এরপরে হাসপাতালে দু-সপ্তাহ মেয়েটি বেঁচে ছিল। তারপরে ২৯ সেপ্টেম্বর হাথরস কন্যা বা আরেক নির্ভয়া তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। মেয়েটির পরিবার দলিত বাল্মীকি সম্প্রদায়ের। অভিযুক্ত রামু, রবি এবং লভকুশ – যারা উচ্চবর্ণের ঠাকুর বংশের ও এলাকায় অভিজাত হিসেবে গণ্য , তাদের বাড়ি মেয়েটির বাড়ির কাছেই । এছাড়াও আরেক অভিযুক্ত ছিল তার নাম সন্দীপ। ঘটনার পরে অভিযুক্তের আত্মীয়রা যাতে দলিত পরিবারকে অত্যাচার বা চাপে না ফেলতে পারে সেজন্য বিশেষ পুলিশ বাহিনী দলিত বাড়িটির পাশে মোতায়েন করা হয়েছিল। চাপ বা অত্যাচার কী হতে পারে তা পরিবারটি অবশ্য প্রতি পদেই টের পেয়েছিল। চূড়ান্ত রায়ের পরে মেয়েটির ভাই কেঁদে বলেছিল এক তাৎপর্যপূর্ণ কথা। কী বলেছিল তা পরেই না হয় বলা যাবে আগে বলা যাক ঘটনাটির কথা।

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

উজ্জ্বল রোদ, নীল শরৎ আকাশ।সকাল পর্যন্ত সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। সকাল ৮টার পরে হাথরস কন্যা বা আরেক নির্ভয়া তার মা ও ভাইকে নিয়ে মাঠে গিয়েছিল। মাঠে যাওয়ার আগে, হাথরসের নির্ভয়ার মা তার কানের ব্যথা ও সমস্যার জন্য কানে তুলো লাগিয়েছিলেন। তারা তিনজনই তাদের বাড়ি থেকে দুশো মিটার দূরে ঘাস কাটতে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ পর, ভাই মহিষের জন্য জল ভরতে বাড়ির দিকে রওনা হল, আর নির্ভয়া ও তার মা মাঠেই রইল। প্রায় আধঘণ্টা পর নির্ভয়ার মা উঠে মেয়ের খোঁজ করলে তাকে আর দেখতে পাননি।তিনি পরে বলেছিলেন যে, মেয়ে সেদিন বলেছিলো জল তেষ্টা পেয়েছে, আমি ভেবেছিলাম সে তাই বাড়ির দিকে রওনা হয়েছে। তিনি আরও বলেছিলেন, আমি রেগে গিয়েছিলাম আর ভেবেছিলাম মেয়েকে পেলেই চড় মারবো। কিন্তু তার সে চড় মারার সৌভাগ্য আর হয়নি। তিনি যখন তার বাড়ির দিকে মেঠো পথ ধরে এগোচ্ছেন তখন তার নজরে এল নির্ভয়ার নীল চপ্পল দুটো কিছু দূরে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। তিনি আরো দেখতে পেলেন নোংরা কাদার মধ্যে বেশকিছু দাগ। তিনি লক্ষ্য করলেন, তার মেয়ের পায়ের ছাপ এবং চপ্পলের কাছে  কাদায় কিছু টেনে নিয়ে যাওয়ার ছাপ। সামনের পথেও কিছু টেনে নিয়ে যাওয়ার চিহ্ন। তখনও তিনি জানতেন না তার হতভাগিনী মেয়ে কী ভয়ংকর পরিণতির শিকার হয়েছে।সেই পথ বাজরা ক্ষেতের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে।

ঘটনার পরে যতবার সংবাদ মাধ্যমকে বা তদন্তকারীদের নির্ভয়ের মা সেই ক্ষেতের কাছে নিয়ে এসেছেন তিনি বন্ধ করে ফেলেছেন তাঁর দু চোখ। আমি এখানে এসে আর তাকাতে পারি না, আর তাকাতে পারি না – তিনি বারবার একথা সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন এবং চোখের জল ফেলেছেন।আজও হয়তো তেমনটাই চোখের জল ফেলে চলেন। নীরবে। বিচারের বাণীর মতই।

মায়ের চোখের জল

কী বলেন দলিত মেয়েটির মা? ” আমার মেয়ের মুখ থেকে জিভ বাইরে ঝুলছিল,নগ্ন অবস্থায় আমার মেয়ে শুয়ে ছিল, তার চোখ ফুলে উঠছিল এবং তার মুখ, ঘাড় থেকে রক্ত পড়ছিল এবং তার চোখের কাছে রক্ত ​​জমে ছিল। আমি তার যোনি থেকে রক্তপাতও দেখতে পেলাম।আমি তাড়াতাড়ি তাকে আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢেকে দিলাম, এবং চিৎকার করতে লাগলাম,”

 তিনি বলেছিলেন যে আক্রমণকারীরা যখন তাকে শ্বাসরোধ করে, তখন তার জিভ কামড়ের চাপে কেটে যায়।মায়ের চিৎকার শুনে আগে আশেপাশে ছুটে আসে কয়েকজন শিশু। তিনি তাদের বললেন ছেলেকে জানাতে, এবং কিছু জল আনতে। কিছু শিশু পলিথিন ব্যাগে জল আনল যা তিনি মেয়ের উপর ছিটিয়ে দেন।
“হয়তো আমার মেয়ে চিৎকার করেছিল কিন্তু আমি তাকে শুনতে পারিনি কারণ আমি ভাল শুনতে পারি না। আমি যখন দেখলাম তাকে ভাবলাম সে হয়তো মরেই গেছে। সে সেদিন এত নিষ্প্রাণ হয়ে শুয়ে ছিল,” জন্মদাত্রী মায়ের মনে পড়ে যেতে থাকে অন্ধকার সকালের কথা।তিনি বলেছিলেন ,কাছে গিয়ে বুঝলাম সে খুব ধীরে শ্বাস নিচ্ছে।যখন তাঁরা জিজ্ঞাসা করেছিল কি হয়েছে,  তার জিভের আঘাতের কারণে স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে না, বিড়বিড় করে বলেছিল, “সন্দীপ আমার দম বন্ধ করে দিয়েছে।”

 জীবন ও সম্মান রক্ষার প্রয়াস 

নির্যাতিতার ভাই ও মা বোনকে  চাঁদপা থানায় নিয়ে যায়। সেখানে হাথরসের নির্ভয়া রোদে পাথরের ওপরে বসে ব্যথায় ছটফট করছিল।তার ভাই অভিযোগ করেছিল,
“সেখানে কেউ আমাদের কথা শোনেনি।”
পুলিশ বলতে থাকে এখান থেকে মেয়েটিকে নিয়ে যাও। মেয়েটির যন্ত্রণা ও অভিযোগকে অভিনয় বলেছিল উত্তরপ্রদেশের  পুলিশ। তারা বলেছিল, তোমরা কি আমাদের ফাঁদে ফেলতে চাও?

 মেয়েটি আস্তে আস্তে চেতনা হারাচ্ছিল,সে সময় যৌন নিপীড়নের কথা বা অন্য তিন অভিযুক্ত নিপীড়কদের নাম করতে পারে নি।
তার ভাই বলেছিল তাকে হত্যার অভিপ্রায়ে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল, এবং পুলিশ সন্দীপের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করেছে, তাকে হত্যার চেষ্টার পাশাপাশি তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি নৃশংসতা প্রতিরোধ আইনের অধীনে মামলা করেছে।

মেয়েটির মা বলেছিলন , “ আমি তাকে নগ্ন অবস্থায় পেয়েছি এবং তার যোনি থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।সেই সময় আমি ভেবেছিলাম যে আমি যদি এটি উল্লেখ করি তবে আমার মেয়ে তার বাকি জীবন মর্যাদার সাথে বাঁচতে পারবে না।” তবে দলিত মেয়েটি মুখ খুলেছিল। মৃত্যুর আগে একাধিকবার  মুখ খুলেছিল। তার মা বলেছিলেন,” যখন সে নিজেই পরে বলেছিল, আমরা পুলিশকে জানিয়েছিলাম।”

(প্রাক )মৃত্যুকালীন জবানবন্দি ও প্রহসন 

 চেতনাহীন মেয়েটিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয়  এক স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং দু ঘন্টার মধ্যে তাকে আলীগড় জওহরলাল নেহেরু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। আলিগড়ে জ্ঞান ফেরে মেয়েটির এবং তার পরিবারের সাথে কথা বলে, হাথরস পুলিশ প্রধান বিক্রান্ত বীর বলেন যে মেয়েটির বক্তব্য শুধুমাত্র ১৯ সেপ্টেম্বর রেকর্ড করা হয়েছিল। অথচ পরে জানা যায়,২১  এবং ২২ সেপ্টেম্বর তার ফলো-আপ বিবৃতিতে, মেয়েটি সন্দীপ ছাড়াও লাভকুশ, রবি এবং রামুকে তার আততায়ী হিসাবে নাম দিয়েছে এবং গণধর্ষণের উল্লেখ করে। এনিয়ে সংশয় থাকার কারণ নেই। কারণ নইলে পুলিশ কী করে গণধর্ষণের ধারা যোগ করল এবং অপর তিনজনকে গ্রেফতার করল? উল্লেখযোগ্য ভাবে,অতঃপর পুলিশ এফআইআর-এ গণধর্ষণ সংক্রান্ত শাস্তিমূলক ধারা যুক্ত করে এবং ২১ ও ২৫ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে রবি এবং লভকুশকে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর রামুকে গ্রেফতার করে। সন্দীপকে ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। অথচ পরবর্তীতে আদালত রায় দিয়েছিল গণধর্ষণ হয়নি এবং তিনজন বেকসুর খালাত পেয়ে যায়।

   আশ্চর্যজনক ভাবে হাত হাথরসের নির্ভয়ার পরিবারের অভিযোগ এবং এফআইআরের বিপরীতে, হাথরসের বিজেপি বিধায়ক রাজবীর দিলার সংবাদ মাধ্যমকে  বলেন, “মেয়েটি নিজেই পুলিশকে বলেছে তাকে ধর্ষণ করা হয়নি। এটা ধর্ষণের ঘটনা নয়।”

আরও প্রহসন 

ঘটনার ছদিন পর, উত্তর প্রদেশ ও দেশজুড়ে  ঘটনাটি সামনে আসায়  রাজনৈতিক নেতারা হাথরসের নির্ভয়া কে  দেখতে এসেছিলেন, সেদিনই অবশেষে বিশেষ পরিচর্যা ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সেদিন তার শারীরিক অবস্থার বুলেটিন দেওয়া হয়।
জেএনএম কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ শহীদ আলী সিদ্দিকী বলেন, মেরুদন্ডের ক্ষতির কারণে মেয়েটি কোয়াড্রিপ্লেজিয়ায় ভুগছিলেন, যার অর্থ চারটি অঙ্গে সম্পূর্ণ পক্ষাঘাত এবং রয়েছে তার ঘাড়ে আঘাত,  তার “শ্বাসকষ্ট” শুরু হয়েছে । আবার আহত মেয়েটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বারো দিন কেটে যাওয়ার পরে , অধ্যক্ষ  সিদ্দিকী বলেছিলেন যে যৌন নিপীড়ন হয়েছে কিনা তা তাঁরা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি।

“আমাদের পক্ষ থেকে একটি সিল করা রিপোর্ট জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।”দুই সপ্তাহ পরেও কেন হাসপাতাল আশার গোপনাঙ্গে যৌন নির্যাতন বা আঘাতের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি জানতে চাইলে, পুলিশ প্রধান বীর শুধু বলেছিলেন যে, তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে এবং রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।

এই প্রহসন দলিত কন্যার সু বিচারের আশার পথ যেরকম বন্ধ করে দেয় তেমনি পাকাপোক্তভাবে  গণধর্ষণের প্রমাণ লোপাট করে দেয়। ঘটনার ৭ দিন পরে  মেডিকেল টেস্ট -এর রিপোর্ট জমা পড়া নিশ্চিত করে  দেয় ধর্ষণের কোনও চিহ্নই থাকবে না। মেডিক্যাল সায়েন্স বলে , শুক্রাণু বাঁচে বড়জোড় ৯০ ঘন্টা । ধর্ষণের প্রমাণের  জন্য ৭২ ঘন্টার মধ্যে ফরেনসিক টেস্ট ও মেডিক্যাল টেস্ট জরুরি।

২৭ সেপ্টেম্বর, নির্যাতিতার ভাইরা সংবাদ মাধ্যমকে  জানান যে তাকে দিল্লির এইমস-এ নিয়ে যাওয়ার জন্য আলিগড় হাসপাতাল তাদের চাপ দিচ্ছে।”কেন তারা হঠাৎ তাকে সেখানে নিয়ে যেতে বলছে? যদি তারা মনে করে যে তারা এখানে তার চিকিৎসা করতে পারবে না, তাহলে কী তাদের আমাদের আরও ভালো হাসপাতালে জোর করে পাঠাতে হবে?

প্রদীপ নিভল 

২৮ সেপ্টেম্বর , অসুস্থ মেয়েটিকে দিল্লির সফদরজং মেডিকেল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়, যেখানে একদিনের মধ্যে এক সকালে তার মৃত্যু হয়। সেদিন ২৯ সেপ্টেম্বর।

হাতরাসের কংগ্রেস নেতা শ্যাওরাজ জীবন বাল্মিকি কার্যত যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য সরকারকে নির্যাতিতাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য দায়ী করেন। বাল্মিকি এও দাবি করেন যে, তিনি নির্যাতিতাকে হাসপাতালে তিনবারের বেশি দেখতে গিয়েছিলেন এবং তাকে যেভাবে চিকিৎসা চলছিল তা দেখে “মর্মাহত” হয়েছিলেন। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, “হাসপাতাল কেন ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করল না? মেয়েটি যদি উচ্চবর্ণের হত, তাহলে লোকেরা মোমবাতি নিয়ে বের হত। চিকিৎসক ও পুলিশ এখানে একযোগে কাজ করেছে।কেন এখনও দলিতদের উপর অত্যাচার  করা হচ্ছে?” নির্ভয়াকে দিল্লির একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করার বিষয়ে, তিনি বলেছিলেন যে  উত্তর প্রদেশে “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য” এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল।ঘটনাটিকে “লজ্জাজনক এবং নিন্দাজনক” বলে অভিহিত করে, বিএসপি নেত্রী মায়াবতী  আদিত্যনাথ সরকারকে মনোযোগ দিতে বললেও হাথরসের নির্যাতিতা বাঁচে নি। নির্বান্ধব দেশে শত্রুপুরীতে বাঁচা সম্ভব ছিল ও না মেয়েটির ।

আমার ক’বার মরণ হবে বলো?

মেয়েটির পরিবার বলেছিল ,মৃত্যুর আগে মেয়েটি জানিয়েছিল, তাকে ছ মাস আগে আরেকবার  ছেলেগুলি লাঞ্ছিত করে। সেবারও সেকথা প্রকাশ না করার জন্য তার পরিবারকে খুনের হুমকি দেওয়া হয় মেয়েটিকে। মেয়েটির মা বলেছিল বিগত কয়েক মাস ধরে মেয়েটি বাইরে যেতে চাইত না। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “আমি জানতাম না, আগে কিছুই সে আমাদের বলেনি।”

ছশো পরিবারের গ্রামটির অর্ধেকের বেশি পরিবার ঠাকুর সম্প্রদায়ের। ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের বাস ও প্রচুর। দলিত বা বাল্মিকি সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা মাত্র ১৫ ঘর। মেয়েটির দাদা জানিয়েছিল, তাদের পূর্বপুরুষরা  ব্রাহ্মণ বা ঠাকুর সম্প্রদায়ের মানুষ পাশ দিয়ে গেলে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করত। বর্তমান প্রজন্মেও একসঙ্গে কোথাও বসতে পারার প্রশ্নই আসে না। দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ উচ্চবর্ণের মানুষের বাড়িতে বা কাছে আসতে পারত বিশেষ প্রয়োজনে বা জমি পরিষ্কার অথবা বাড়ি পরিষ্কার বা ঘাস কাটার কাজে। বর্তমানে বিভিন্নভাবে আর্থিকভাবে উন্নতির পথে চলা দলিত সম্প্রদায়কে ঠাকুর ও ব্রাহ্মণদের তাই সম্মান না প্রদর্শন করলেই বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হত।

যেদিন মেয়েটি মারা যায় তার তিনদিন আগে ২৬ সেপ্টেম্বর আলিগড় হাসপাতালে মেয়ের সাথে বাবার সাথে দেখা হয়েছিল। সেই সময় স্মৃতিচারণা করতে করতে হাথরসের দলিত নির্ভয়ার বাবা বলেছিলেন,তিনি আইসিইউতে যখন তাঁর মেয়ের পাশে বসেছিলেন  তখন মেয়ের গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়েছিল এবং সে ধীরে ধীরে বলেছিল, “বাবা , দয়া করে এবার শেষ একবার আমাকে বাড়িতে নিয়ে চলো ।”

“আমি তাকে বলেছিলাম লড়াই করার জন্য তাকে শক্তিশালী হতে হবে, এবং একবার সে সুস্থ হয়ে গেলে আমরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যাব,” হাথরসের নির্যাতিতার বাবা বলেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন,”আমি তাকে আশ্বস্ত করেছিলাম যে একবার এটি শেষ হলে, আমরা একটি সুখী জীবনযাপন করব।” তিনি সফদরজং হাসপাতালে বসে বলেন, “আমি তার নিথর দেহ দেখলাম। ওরা বলল, মেয়ে আর কথা বলবে না। কথা রাখা হল না। “

হাতের তালু ভাঁজ করে তিনি বলেছিলেন, “আমাদের মেয়েরা আর নিরাপদ নয়।
আমরা অসহায়, জাতির কাছে অনুরোধ করছি আমাদের পাশে দাঁড়ান, আমাদের মেয়ের বিচার পেতে সাহায্য করুন।।”

ঘরে ফেরা

   উনিশ বছরের মেয়েটির ঘরে ফেরা হয় নি। জোর করে তার দেহ তুলে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলে পুলিশ।দেহ যখন পঞ্চভুতে বিলীন হয়ে যাচ্ছিল তখন কাছে ছিল না পরিবার-পরিজন। এক অজ্ঞাত কারণে, যাকে প্রমাণ লোপাটের সর্বশেষ ও চূড়ান্ত অধ্যায় বলে ধরা হয়, অজ্ঞাতসারে পুড়িয়ে দেওয়া হয় হাথরসের দলিত নির্ভয়া কে।রাতের অন্ধকারেই নির্যাতিতার দেহ ‘গোপনে’ পুড়িয়ে ফেলারও ব্যবস্থা করা পুলিশ   আরেকটি পরিকল্পনা কার্যকর করে। এনিয়েও তোলপাড় হয় উত্তর প্রদেশের রাজ্য-রাজনীতি যার আঁচ এসে পড়েছিল সারা দেশে । মেয়েটির দাদা সরাসরি অভিযোগ করেছিল, বোনের দেহ নিয়ে পুলিশ জোর করে চলে যায়।  তাদের  আটকে রেখে দেহ নিয়ে যায় এবং পুড়িয়ে ফেলে। অথচ উত্তরপ্রদেশের পুলিশ বলেছিল, পরিবারের সম্মতি নিয়েই তারা এমনটা করেছে।

বিচারের বাণী ও আশার আলো 

আরজিকর কাণ্ডে যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী তদন্ত শুরু করে তার দায়িত্বে ছিলেন সম্পত মীনা। হাথরসেও তদন্তকারী দলের দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি। প্রাথমিক সাফল্যও আসে তদন্তকারী দলের।

যোগী রাজ্যের পুলিশ মানতে চায়নি হাথরসের ১৯ বছরের  তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও ছিল না গণধর্ষণের উল্লেখ। ফরেনসিক  রিপোর্টে গণধর্ষণ তো দূরের কথা ধর্ষণের উল্লেখ ছিল না উত্তর প্রদেশের পুলিশ তাকেই হাতিয়ার করেছিল। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সেই ফরেন্সিক দাবিকে খারিজ করে দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। উল্টে হাথরসকাণ্ডে নির্যাতিতাকে ধর্ষণ করেই খুন করা হয়েছিল, আদালতে এমনটাই জানায় সিবিআই।এই ঘটনায় চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। যেখানে ওই দলিত কিশোরীকে উচ্চ সম্প্রদায়ের চার যুবক ধর্ষণ করে খুন করেছে তা স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়। মৃতার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি এবং বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সিবিআই ঘটনাটিকে গণধর্ষণ ও হত্যার বলে উল্লেখ করে।

আদালত ও সুবিচারের স্বপ্নের মৃত্যু 

সিবিআই কী সত্যে বা সিদ্ধান্তে উপনীত হল , পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমাণাদি কী বলল তা যখন গুরুত্ব পায়না তখন দলিত পরিবারের চোখের জলের দাম থাকে না। গণধর্ষণ নয়, হাথরস কাণ্ডকে  দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করে দলিত পরিবারের সুবিচারের দাবিকে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেয় আদালত।হাথরস কন্যার মৃত্যু কালীন জবানবন্দীর দাম ছিল না, হাথরস কন্যার যোনির আঘাত ও ক্ষতের গুরুত্বকে নস্যাত করে দেন বিশেষ তফসিলি জাতি ও উপজাতি আদালতের বিচারক। ২০২৩ সালের মার্চ মাসের রায়ে  বলা হয় ধর্ষণ হওয়ার যথেষ্ট প্রমাণ ছিল না।  আদালতের মন্তব্য ছিল , সন্দেহপ্রকাশ করা ছাড়া ধর্ষণের পক্ষে কোনও প্রমাণই আদালতে দেখাতে পারেননি সরকারি কৌঁসুলি। মেয়েটিকে শেখানো-পড়ানো হয়ে থাকতে পারে বলেও সন্দেহপ্রকাশ করে আদালত। আদালতের এই রায়ে নির্যাতিতার পরিবার জানিয়েছে, একটুও অবাক হননি তাঁরা। এই দেশে ন্যায় বিচারের নামে দলিতদের কপালে এমনই রায় জোটে।

 উত্তরপ্রদেশের বিশেষ তফসিলি জাতি ও উপজাতি আদালতের বিচারক ত্রিলোকপাল সিংহ চার অভিযুক্তের মধ্যে রামু, লবকুশ এবং রবি-এই তিন জনকে বেকসুর খালাস করেন। চতুর্থ তথা মূল অভিযুক্ত সন্দীপকে শুধুমাত্র অনিচ্ছাকৃত হত্যার মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ধর্ষণের অভিযোগ গৃহীতই হয়নি আদালতে। সন্দীপকে যাবজ্জীবনের সাজা শোনায় আদালত। তফসিলি জাতি ও উপজাতি নের ৩(২) (৫ম) ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সন্দীপ, যার আওতায় তফসিলি জাতি বা উপজাতি সম্প্রদায়ের কারও প্রতি অপরাধমূলক আচরণে শাস্তি হয়।

আদালতের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন করলে, নির্যাতিতার দাদা জানান, এই দেশে দলিতরা ন্যায় বিচারের নামে যে রায় পান, তাঁরাও সেই রায়ই পেয়েছেন। তিনি বলেন, “এ দেশে দলিতরা যেমন বিচার পান, তা-ই পেয়েছি আমরা। ঠাকুর এবং ব্রাহ্মণরা যা ইচ্ছে তা করতে পারেন। অপরাধ করেও পার পেয়ে যেতে পারেন ওঁরা। তবে ন্যায় বিচার না হওয়া পর্যন্ত বোনের অস্থি বিসর্জন দেব না আমরা। হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টেও যাব।” মেয়েটির দিদি বলেন, “আমরা ন্যায় বিচার পেলাম না। আমাদের মান-সম্মান ধুলোয় মিশে গিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত প্রকৃতপক্ষে  ন্যায় এবং সত্যের হত্যা।”

যদিও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মেয়েটির মৃত্যুর কারণ হিসেবে আঘাতের পাশাপাশি সিবিআইয়ের দাখিল করা চিকিৎসার রেকর্ড হিসেবে ধর্ষণ এবং শ্বাসরোধের উল্লেখও ছিল। মেয়েটির পরিবার জানায়, বেশ কয়েক মাস ধরে মেয়েটিকে  হেনস্থা করছিলেন অভিযুক্তরা। এমনকি মেয়ের দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার পর, পুলিশ এবং প্রশাসনের তরফেও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল তাঁদের উপর। হাথরসের প্রশাসনকে পরিবারের উপর হুঁশিয়ারি দিয়ে চাপ সৃষ্টি করার ভিডিও সামনে আসে। প্রশাসন জয়ী হয়েছিল।  সুবিচারের আশা ও দলিত বাল্মিকি পরিবারটির দীর্ঘশ্বাস আজও ভেসে বেড়াচ্ছে হাথরসের।

   শিবঠাকুরের আপন দেশে 

অবাক হওয়ার নেই রায়ে। উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকার, পুলিশ ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তদন্তকে বিলম্বিত ও বিপথে চালিত করার অভিযোগ ছিল।  তিন অভিযুক্ত ছাড়া পাওয়ার পরে উত্তরপ্রদেশ সরকারের উচ্চতর আদালতে যাওয়ার বিষয় প্রত্যাখ্যান এই অভিযোগে যেন সিলমোহর দেয়। অবাক হওয়ার যেন কিছু ছিল না।উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকার, রাজ্য পুলিশ এবং কর্তৃপক্ষ একের পর এক এমন কাজ করেছিল যা আদালতে তিন অভিযুক্তকে মুক্তি দেওয়ার ভিত গড়ে দিয়েছিল। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় ছিল, মেয়েটির পরিবারের প্রাথমিক অভিযোগ না নেওয়া। অভিযোগ দেরিতেই নেওয়ার পরে হাথরস কন্যার তিনটি প্রাক-মৃত্যু কালীন জবানবন্দির মধ্যে দুটির কথা অস্বীকার করে পুলিশ। ১৯ সেপ্টেম্বরে সন্দীপের নাম, তার করা আঘাত ও দম বন্ধ করে দেওয়ার কথা মেয়েটি যে বয়ানে উল্লেখ করেছিল সেই বয়ান রেকর্ড করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছিল। ২১ ও ২২ তারিখের ফলোআপ রেকর্ড যেখানে চারজনকে অভিযুক্ত করে মেয়েটি, গণধর্ষণের বিবৃতি দেয় -সেই রিপোর্টগুলি চেপে যেতে সচেষ্ট হয় পুলিশ। গণধর্ষণের রিপোর্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে হাসপাতাল ও কর্তৃপক্ষ একযোগে অতিমাত্রায় উদাসীন হয়ে পড়ে। মেয়েটির ফরেনসিক টেস্ট ও সোয়াব সংগ্রহ হয় ঘটনার সাতদিন পরে অথচ এই টেস্ট তিনদিন পরে কার্যত অর্থহীন। বীর্য বা শুক্রাণুর কোন প্রমাণই থাকেনা ৯০ ঘন্টা পরে। পরিবারের আপত্তিতে কর্ণপাত না করে হাথরস কন্যার মৃত্যুর দিন রাত আড়াইটার সময় মেয়েটিকে পুড়িয়ে ফেলেছিল উত্তর প্রদেশ রাজ্য সরকার। বিচারের নামে প্রহসন হওয়ার যা যা করা দরকার ছিল, যে যে ক্ষেত্র প্রস্তুত করা দরকার ছিল তা তৈরি হয়ে গিয়েছিল আগেই।

    ট্রায়াল কোর্টের বিচারের রায়ের পরে একদা হাইকোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভাবনা নেওয়া মৃতার পরিবারের এখন নিরাপত্তা যে নেই তাও মেনে নিয়েছে উচ্চতর আদালত । অতি সম্প্রতি এলাহাবাদ হাইকোর্ট থেকে  জানানো হয়েছে যে দলিত মহিলার পরিবারের সদস্যদের দৈনন্দিন চলাফেরা বিঘ্নিত হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখেনি রাজ্য সরকার। তাদের স্থানান্তরের জন্য আদালতের আদেশ পালন করা হয়নি।  ২০২২ সালে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল নির্যাতিতার পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে যা কার্যকর করা হয়নি। মৃতার দাদা ২০২৪ সালের জুলাই মাসেও বলেছেন, “আমরাই যেন বন্দি, যাদের বন্দি হওয়ার কথা ছিল তারা ভালো আছে, খোলা আকাশের তলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে সদর্পে।” এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশ থেকে পরিষ্কার  আজব সাজা ঘোষণা হয়েছে। “শিব ঠাকুরের আপন দেশে আইন কানুন সর্বনেশে ” -সুকুমার রায়ের কবিতাই হাথরস কাণ্ডের নির্যাস।

 

About Post Author