Home » মানব ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর গবেষণা, “রাশিয়ান স্লিপ এক্সপেরিমেন্ট,” কি ছিল সেই গবেষণা ?

মানব ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর গবেষণা, “রাশিয়ান স্লিপ এক্সপেরিমেন্ট,” কি ছিল সেই গবেষণা ?

ধীরাজ কুমার দাস, সময় কলকাতাঃ পৃথিবীর মানুষ যবে থেকে আগুন জ্বালানো শিখেছে তবে থেকেই মানুষ নতুন নতুন আবিস্কারের নেশায় মেতেছে। মানুষ তার বুদ্ধি, জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সভ্যতার উন্নতি ঘটিয়েছে। পৃথিবী ছাড়িয়ে মানুষের গবেষণা মহাকাশে পৌঁছেছে। কিন্তু এমন কিছু গবেষণা আছে যা শুনলে, যে কোন মানুষই শিউরে উঠবে।  জন্ত, জানোয়ার কিংবা গিনিপিগের উপর গবেষণা নয়। ইন্টারনেটে এমন এক গবেষণার কথা শোনা যায় যেখানে গবেষণাগারে পরীক্ষা চালানো হয়েছিল কয়েকজন মানুষের ওপর। যার পরিণতি হয়েছিল ভয়ঙ্কর। এতটাই ভয়ঙ্কর যে গবেষণাগারের সেই মানুষ গুলো নিজের খিদে মেটানোর জন্য নিজের শরীরের মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে শুরু  করে। বিশ্বের এই অমানবিক গবেষণার পোশাকি নাম “রাশিয়ান স্লিপ এক্সপেরিমেন্ট”। এই ঘটনাটি ২০১০ সালে অরেঞ্জ সোডা নামের কোন এক ইউজার আইডির দ্বারা “ক্রিপিপাস্তা উইকি(creepy pasta wiki)” নামক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় । প্রকাশ হওয়ার পরই ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্রুত  ছড়িয়ে পড়ে এই  “রাশিয়ান স্লিপ এক্সপেরিমেন্ট”-এর কথা।

ঘুম মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিশ্ব ইতিহাসে এমন এক গবেষণার কথা ইন্টারনেট মারফত জানা যায়, যেখানে ঘুম ছাড়া মানুষ কিভাবে সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারে তার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই গবেষণা করা হয়েছিল সাধারন মানুষের ওপর। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল, এমন এক সৈন্যবাহিনী তৈরি করা, যেখানে সৈন্যরা একটানা ৩০ দিন না ঘুমিয়ে শত্রু পক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারবে।
সালটি ছিল ১৯৪০, সোভিয়েত রাশিয়া তখন ক্ষমতার শীর্ষে। সোভিয়েত রাশিয়ার সৈন্যদলের অধীনে একদল বিজ্ঞানী একটি গবেষণা শুরু করে। যার মূল উদ্দেশ্যই ছিল এমন একটি ওষুধ তৈরি করা, যার দ্বারা ঘুম ছাড়াও মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলা ফেরা করতে পারবে।

গবেষণাটি করার জন্য বিজ্ঞানীরা পাঁচজন যুদ্ধবন্দিকে নিয়ে আসে। এই পাঁচজনকে বলা হয়, গবেষণাটি সম্পন্ন হয়ে গেলে তাদের জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।ফলে, তারাও রাজি হয়ে যায়।
এরপর বিজ্ঞানীরা সেই পাঁচজনকে একটি চেম্বারের মধ্যে নিয়ে গিয়ে, তাদের তালাবন্দি করে দেয়।চেম্বারটির মধ্যে তাদের খাওয়া-দাওয়া, বই, ম্যাগাজিন, টয়লেট সবকিছুর ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু সেই চেম্বারের মধ্যে ঘুমানোর কোন ব্যবস্থা ছিলনা। চেম্বারের দরজায় একটি কাঁচের জানলা ছিল যা দিয়ে গবেষকরা ওই বন্দিদের ওপর নজর রাখছিল।
চেম্বারের মধ্যে বাইরে থেকে একধরণের উত্তেজনামূলক গ্যাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়। যা তাদের পরবর্তী ৩০ দিন জাগিয়ে রাখত। প্রথম চারদিন বেশ ভালোই চলছিল সব। পাঁচজন বন্দিই খুব সাধারন আচরণ করছিল। তারা সকলেই একে অপরের সঙ্গে কথা বার্তা বলছিল। ফলে, গবেষণা সফল হচ্ছে ভেবে,  বিজ্ঞানীরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান।কিন্তু এই আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

পঞ্চমদিন থেকে প্রতিটি বন্দির মধ্যে কিছু অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা দিতে শুরু করে। তাদের প্রত্যেককেই অবসাদগ্রস্ত দেখায়। ধীরে ধীরে তারা নিজেরাই নিজেদের দেহে আঘাত করার প্রবণতা দেখা দেয়।এরপর আচমকায় তারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। ফলে, অদ্ভুত নিস্তব্ধতা তৈরি হয় সমগ্র চেম্বারটি জুড়ে। এখানেই শেষ নয়। এটাতো শুরুর শুরু ছিল।

নবম দিনে এসে সব থেকে ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটে। এদিন, চেম্বারের মধ্যে থাকা পাঁচ জনের মধ্যে দুজন চেম্বারের মধ্যে চিল চিৎকার করতে করতে দৌড়াতে থাকে।তারা এতটাই জোরে চিৎকার যে তাদের ভোকাল কর্ড ছিঁড়ে যায়। এরপর তাদের চিৎকার একেবারে থেমে যায়। সমগ্র চেম্বার জুড়ে নেমে আসে ভয়ঙ্কর নিস্তব্ধতা।এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে বিজ্ঞানীরা ভীষণ ভয় পেয়ে যান। তারা সিদ্ধান্ত নেন চেম্বারে থাকা বন্দিদের মুক্ত করে দেওয়া হবে।কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। ১৫ তম দিনে এসে গবেষকরা চেম্বারের দরজা খুলে দেন।  চেম্বারটি খোলার পর তারা যা দেখতে পান, তা দেখে একেবারে চক্ষুচড়ক গাছ হয়ে যায় তাদের। গবেষকরা দেখেন ওই পাঁচজনের মধ্যে একজন মারা গেছে। প্রত্যেকটি বন্দিই ভীষণ ভাবে আহত। তাদের দেহে গভীর ভাবে ক্ষতের চিহ্ন একেবারে স্পষ্ট । খোবলানো তাদের শরীরের মাংসপিন্ড । কারোর কারোর সম্পূর্ণ ভাবে খোবলানো তলপেটের নীচের মাংস। তাদের মধ্যে অনেকের দেহের হাড় পর্যন্ত বেরিয়ে পড়েছে। কেউ আবার তখনও নিজের মাংস নিজেই খাচ্ছে। তারা প্রত্যেকেই চেম্বারের বাইরে যেতে চাইছিল না। দেখে মনে হচ্ছিল তারা প্রত্যেকেই যেন এক একটা অতিমানবে পরিণত হয়েছে। তারা ব্যথা অনুভব করার শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছিল।

গবেষকরা ওই বন্দিদের জিজ্ঞাসা করে। তারা কেন এমন আচরণ করছে? তারা প্রত্যেকেই একই উত্তর দেয়, “আমাকে অবশ্যই জেগে থাকতে হবে (I must remain awake)।”তারপর, ওই বন্দিদের ওই চেম্বার থেকে বের করার চেষ্টা করা হলে, তারা কিছুতেই বেরোতে চাইনা। তারা চেম্বারের মধ্যে প্রথম দিনের দেওয়া উত্তেজনামূলক গ্যাসটি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য , উন্মাদের মত চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় ছিল তাদের শরীরে এত ক্ষত থাকা সত্বেও, তারা প্রত্যেকেই জীবিত ছিল। তাদের প্রত্যেকেরই একটাই লক্ষ্য ছিল- জেগে থাকা।

তারপরের ধাপে বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন, ওই বন্দিরা ঘুমিয়ে পড়লেই তাদের মৃত্যু ঘটছে। এইভাবে ঘুমিয়ে পড়ার কারণে ইতিমধ্যেই দুজনের মৃত্যুও হয়। আর বাকিদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।এরপর চিকিৎসা চলাকালীন একজন বন্দি ঘুমিয়ে পড়লে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। বাকি একজনকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। এরপর চেম্বারটিকে সিল করে দেওয়া হয়। এরপর চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়, মানব ইতিহাসের এই ভয়ঙ্কর গবেষণা “রাশিয়ান স্লিপ এক্সপেরেমিন্ট”।

ইন্টারনেটে “শহুরে কিংবদন্তি (Urban Legends)” গুলির  মধ্যে “রাশিয়ান স্লিপ এক্সপেরেমিন্টকে” সবথেকে জনপ্রিয় বলা হয়। এই ঘটনার সত্যতার কোন প্রমান না থাকলেও, অনেকেই বিশ্বাস করে এটি সত্যিই ঘটেছিল। আবার অনেকে মানেন এটি একেবারে কল্পকাহিনী।  ঘটনাটি  সত্যিই হোক বা কল্পকাহিনী, পাঠকের মন কিন্তু সর্বদাই আকর্ষণ করে এই “রাশিয়ান স্লিপ এক্সপেরেমিন্ট” -কে। এ কারণেই হয়ত এটিকে “ইন্টারনেটের সবথেকে চমকপ্রদ ও আকর্ষনীয়ী “শহুরে কিংবন্তিদের” বলে আখ্যায়িত করা হয়।

About Post Author