পুরন্দর চক্রবর্তী, সময় কলকাতা : সুকুমার রায় বহু আগে লিখেছিলেন ‘শিবঠাকুরের আপনদেশে আইনকানুন সর্বনেশে’। বেঁচে থাকলে তৃণমূলের আইনকানুন নিয়ে সুকুমার রায় আজ কী বলতেন তা অনুমান করা সম্ভব নয়। তবে বারাসাত পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থীপদ ঘিরে যা হয়েছে তাকে এককথায় গোলমেলে বলা যায়।তৃণমূলের ও তৃণমূল শাসিত কর্পোরেশনের আইনকানুনের লালফিতের ফাঁসে পড়ে তৃণমূলের নেতা ও বারাসাত পুরসভার তিনবারের কাউন্সিলার প্রণবনন্দন চৌধুরী নাজেহাল ও বিস্মিত । তাঁর হতচকিত দশা যেন কাটছে না। পুরনির্বাচনে তাঁর প্রার্থীপদ বাতিল বা পুনর্বহাল নিয়ে বিভ্রান্ত বারাসাতের সাধারণ মানুষ থেকে রাজনৈতিক মহল। তাঁর প্রার্থীপদ ঘিরে কী এমন ঘটল?
প্রণবনন্দন চৌধুরী বারাসাতের রাজনীতিতে সুপরিচিত নাম। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই দলে আছেন।পুরসভায় যখনই লড়েছেন জিতেছেন। বাম আমলেও তাঁকে হারানো যায় নি। ৩ বারের কাউন্সিলারের এলাকায় প্রভাব রয়েছে ।উল্লেখ্য,৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার ছয় হাজারের বেশি।এখানে জনপ্রিয় প্রণব নন্দন চৌধুরী শেষ তথা বিগত পুরভোটে প্রায় চারশো ভোটে জিতেছিলেন।অথচ তাঁর প্রার্থীপদ টালমাটাল হয়ে যাওয়া ঘিরে দেখা দেওয়া জটিলতা আর ধোঁয়াশাকে অনভিপ্রেত বলছেন স্বয়ং প্রণবনন্দন চৌধুরী।
প্রসঙ্গত,তৃণমূল নেতৃত্বের সই সাবুদ সম্বলিত চূড়ান্ত তালিকায় নাম ছিল প্রণবনন্দন চৌধুরী(মাধু)-র। অথচ ৮ ফেব্রুয়ারী তাঁকে জানানো হয়, তিনি পুরভোটে লড়তে পারবেন না কারণ এক্ষেত্রে বাদ সাধছে তাঁর চাকরিক্ষেত্র। উল্লেখ্য, বারাসাত পুরসভার কাউন্সিলার হওয়ার পাশাপাশি প্রণবনন্দন চৌধুরী কর্মসূত্রে যুক্ত কলকাতা কর্পোরেশনে। মেয়র ফিরহাদ হাকিমের দপ্তর থেকেই আসে বাধা। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন থেকে জানানো হয়, কর্পোরেশনে চাকরি করলে ভোটে দাঁড়ানো যাবে না। তাঁকে ভোটে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বারণ করা হয় নির্দেশিকা হাতে পেতেই তাজ্জব হয়ে যান প্রণবনন্দন চৌধুরী।
কলকাতা কর্পোরেশনে নতুন চাকরি পেয়েছেন এমন নয়। এমনও নয় যে তিনি আগে ভোটে লড়েন নি। তাহলে এমন কী হল যে তাঁর প্রার্থীপদ খারিজ হয়ে যাচ্ছে? অবাক হওয়া ছাড়া কিছু করারও ছিল না তাঁর । কিন্তু তাঁর প্রচার যে শুরু হয়ে গেছে , দেওয়াল লেখাও প্রায় শেষ। এদিকে সংরক্ষিত আসনে স্ত্রী কেও দাঁড় করাতে পারবেন না তিনি।অন্যদিকে,দল থেকেই আরেক প্রার্থীকে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মোটামুটি স্থির হয়ে যায় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রণবনন্দন চৌধুরীর জায়গায় আরেক তৃণমূল প্রার্থী বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।
নাটকের আরও বাকি ছিল।অনোন্যপায় প্রণবনন্দন চৌধুরী তৃণমূল বারাসাত সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অশনি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন। জেলা সভাপতির অনুরোধে খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ প্রার্থীপদের আইনি বিষয়টি নিয়ে কর্পোরেশনের সাথে মধ্যস্থতা করতে রাজি হন। পাঁচজনকে নিয়ে বৈঠক হয়। এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের কমিশনার আই এ এস বিনোদ কুমার।রথীন ঘোষ তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কোন ধারায় প্রণবনন্দন চৌধুরীর মনোনয়ন পদ খারিজ হওয়ার কোনও জায়গা নেই। সকাল সাড়ে দশটায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, প্রণবনন্দন চৌধুরীর প্রার্থীপদ পুনর্বহাল। দেড় ঘন্টার মধ্যে কর্পোরেশনে পৌঁছে যান প্রার্থী। কর্পোরেশনের ‘নো অবজেকশন লেটার’ নিয়ে এসে প্রায় শেষ মুহূর্তে বারাসাতের প্রশাসনিক কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন প্রণবনন্দন চৌধুরী।
আইনি জটিলতা কেটে তাঁর প্রার্থীপদ টিকে যাওয়ায় প্রণবনন্দন চৌধুরী এখন শেক্সপিয়ারের নাটক অল ইস অয়েল দ্যাট এন্ডস ওয়েলের নাম কপচাচ্ছেন। কিন্তু তিনি জানেন তৃণমূলে যা চলছে তা আরও অনেক বড় নাটক।নিজেকে “মাস্ট উইন “ক্যান্ডিডেট দাবী করেও প্রার্থী বলছেন, বিষয়টি অনেক সুষ্ঠ ভাবে সমাধান হওয়া উচিত ছিল।শেষ অব্দি সুতোয় ঝুলেছে সিদ্ধান্ত।
খুশি হওয়ার পাশাপাশি কিছুটা হলেও ক্ষুব্ধ প্রণবনন্দন চৌধুরী। তিনি বলছেন, কর্তৃপক্ষ জানত আইন টুকুই -আইনের সংশোধন হয়েছে তার খবর তাদের কাছে ছিল না। আগেরদিন গৃহীত সিদ্ধান্তর ত্রুটি ধরিয়ে দেন রথীন ঘোষ। প্রশ্ন উঠছে খোদ ফিরহাদ হাকিমের দপ্তরে বিনোদ কুমারের মত “দক্ষ প্রশাসক “থাকা সত্বেও এত জটিলতা হল কেন? এমনও ও নয় যে তৃণমূলে চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে একমাত্র প্রণবনন্দন চৌধুরীই আইনের যাঁতাকলে চাপা পড়েছেন। তাহলে কি আইনকানুন গোলমেলে করে প্রার্থীপদ নিয়ে চলছে অনেক গভীর খেলা?
More Stories
RG Kar Protest Kumortuli: ‘আমার দুর্গা’-র বিচারের দাবিতে রাজপথে কুমারটুলির মৃৎশিল্পীরা, কতটা পথ পেরোলে বিচার পাওয়া যাবে, জানতে চান হাতে টানা রিক্সাচালকেরা
Trinamool Congress MP resigsn: আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ, দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে রাজ্যসভার পদ থেকে ইস্তফা তৃণমূূল সাংসদের
১৩ মাসের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের রায় :মাটিগাড়ায় ধর্ষণ-খুনের সাজা ফাঁসি, নির্দেশ দিল শিলিগুড়ি আদালত