Home » হাতিরা ঢুকছে জনপদে : কেন বিপন্ন বন্যপ্রাণ ও মানুষ?

হাতিরা ঢুকছে জনপদে : কেন বিপন্ন বন্যপ্রাণ ও মানুষ?

সানী রায় ও পুরন্দর চক্রবর্তী, সময় কলকাতা , ৭ এপ্রিল : :দাও ফিরে সে অরণ্য’- কবির এরকম ভাবনায় পরিবেশপ্রেমীরা এরকম চাইতে পারেন, তবে এই শব্দবন্ধ স্রেফ কথার কথা হয়েই থেকে যাচ্ছে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের যুগে। পর্যটন শিল্পের রমরমার পাশাপাশি মুনাফালোভীদের দাপাদাপিতে জঙ্গল সাফ। গড়ে উঠছে রিসর্ট। গড়ে উঠছে হোমস্টে। পর্যটন শিল্পের উন্নতির ব্যানার সামনে রেখে গড়ে উঠছে অজস্র ব্যবসায়িক আবাস । রিসর্ট, হোমস্টের ছয়লাপে বনজঙ্গলের গাছ কাটা হচ্ছে নির্বিবাদে। বন্যপ্রাণীর খাদ্য ও রসদ কমছে। ফলশ্রুতি জঙ্গলের নিবিড় ছায়া না পেয়ে লোকালয়ে আসছে বন্যপ্রাণীরা, সংকট বাড়ছে বন্যপ্রাণী ও মানুষ উভয়েরই । খাদ্যের সন্ধানে  হাতিরা ঢুকছে জনপদে , বিপন্ন বন্যপ্রাণ ও মানুষ। কমতে থাকা গাছ গাছালি ও  জঙ্গলের মধ্যে থেকে তুলে আনা হয়েছে কিছু অন্তর্নিহিত সত্য  যা মানুষের বিপদ ডেকে আনছে।

সত্য নিহিত রয়েছে এলাকাবাসী ও পরিবেশবিদদের অভিযোগে। অভিযোগ উঠেছে, শাসকদলের ছত্রছায়ায় থেকেই জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় পর্যটন বিকাশের নাম করে হোমস্টে তৈরি হচ্ছে। লাটাগুড়ি, চাপরামারি, গরুমারা সহ ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকায়. চিলাপাতার জঙ্গল সংলগ্ন এলাকাতেও চলছে অবৈধ নির্মাণ। সেক্ষেত্রে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।সবুজ বাঁচানোর জন্য গোটা বাংলাজুড়েই নানা চেষ্টার কথা বলা হয়। কিন্তু তার মাঝেই ডুয়ার্সে বাড়ছে হোমস্টে ও রিসর্ট তথা কংক্রিটের জঙ্গল। এমনকী নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ডুয়ার্সের জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় একাধিক অবৈধ নির্মাণ হচ্ছে বলে অভিযোগ। সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় হোমস্টে তৈরির ক্ষেত্রেও নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু সেই সব বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একাধিক জায়গায় তৈরি হচ্ছে হোমস্টে। অভিযোগ এমনটাই। সরকারি হোটেলে জায়গা না পেয়ে ডুয়ার্সের জঙ্গল লাগোয়া এই হোমস্টেতে বিবিধ বিনোদনের আনন্দ নিতে যাচ্ছেন অনেকেই। এমনকী লাউড স্পিকার বাজানোও চলছে পুরোদমে। এনিয়ে স্থানীয় পরিবেশপ্রেমীরা বার বার অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু সেই স্বর চাপা পড়ে যাচ্ছে ইটকাঠ আর বিনোদনের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশের তত্ব।

বন দফতরের কাজকর্মেও উদাসীনতার ছাপ। চিতাবাঘকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে  গুলি করে শেষ ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। হাতিরা ঢুকছে জনপদে খাদ্যের সন্ধানে  । এই সমস্যা সমাধানে বন্য জীবদের হানায় প্রাণ যাচ্ছে জঙ্গল লাগোয়া এলাকার মানুষদের। পরিবেশ নষ্টের ফলশ্রুতিতে বিপন্ন  বন্যপ্রাণীর মতই প্রান্তিক মানুষেরা।

জঙ্গলের ঘ্রান যাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাদের বক্তব্য , রাজনৈতিকভাবেও জঙ্গলের অস্তিত্ব সংকট দূর করার কথা ভাবা হচ্ছে না।  অতীতে বনমন্ত্রীর চেয়ারে এমন কাউকে বসানো হত যিনি সাধারণত উত্তরের জঙ্গলের ব্যাকরণটা ঠিকঠাক জানেন। বাম আমলে যাঁরাই বনমন্ত্রী হতেন তাঁদের বেশিরভাগই উত্তরবঙ্গের মানুষ। তবে তৃণমূল জমানায় ছবিটা প্রথমদিকে ঠিকঠাক থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা ক্রমশ বদলাতে থাকে। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছুদিন আগে বনমন্ত্রী করা হয় । অতঃপর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে বসানো হয় বনমন্ত্রীর চেয়ারে। সেক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা নিয়ে যত না প্রশ্ন, বনমন্ত্রী হিসেবে তাঁর চয়ন নিয়ে তারচেয়ে বেশি প্রশ্ন। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতার ও মন্ত্রিত্ব খোয়ানোর পরবর্তী সময়ে  বীরবাহা হাঁসদাকে বনমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে,তিনি পরিযায়ী পাখির প্রশ্নে পরিবেশের প্রতি দায়িত্বের  ইঙ্গিত রেখেছেন। পর্যটন শিল্পের উন্নতির দিকে উতার নজর রয়েছে। কিন্তু জঙ্গল ও সবুজ বিলোপ নিয়ে তত্ত্বকথা ঠান্ডা ঘরেই পড়ে থাকছে।

হাতিরা ঢুকছে জনপদে ।হাতির হানায় মানুষের প্রাণ যাওয়া এবং হাতির যখন তখন লোকালয়ে আসার পেছনে পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার যে সমীকরণ তা রুখতে কোনও হেলদোল নেই। অরণ্য ফিরছে না বরং অরণ্য হারিয়ে যাচ্ছে। আশ্চর্যভাবে শীতঘুমে প্রশাসন। সবুজ ধ্বংসের  বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ভাবনার বাস্তবায়ন  যেন মরীচিকা।।

#Latestbengalinews

আরও পড়ুন জলপাইগুড়ি : হাতির আঘাতে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন বৃদ্ধার দেহ, প্রশ্ন জঙ্গল বিনাশ ঘিরে

About Post Author