Home » পরিবেশ রক্ষার নামে পরিবেশ ধ্বংস : সবুজ হত্যার চক্রান্তের অভিযোগ, আন্দোলনে ক্লাব সংগঠন

পরিবেশ রক্ষার নামে পরিবেশ ধ্বংস : সবুজ হত্যার চক্রান্তের অভিযোগ, আন্দোলনে ক্লাব সংগঠন

সানী রায়, সময় কলকাতা, ২২ জুন : ” দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর ” -বারবার বলা হয়, কিন্তু  পরিবেশ হত্যার নামে পরিবেশ ধ্বংস  হতে দেখে পুরসভার বিরুদ্ধে  আন্দোলনে নামল উত্তরবঙ্গের ধুপগুড়ির  একটি ক্লাব সংগঠন।জলাভূমি ভরাট হতে দেখে ক্লাবের জমি ফেরতের দাবি তে পুরসভার বিরুদ্ধে জোর আন্দোলনে নামল ক্লাব।গ্রীন সিটি পার্ক তৈরির নামে ফুঁসলিয়ে ক্লাবের জমি হাতিয়ে নেওয়া ও জলাভূমি ভরাটের প্রতিবাদে পুরসভার বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন।

“ভাওতা দিয়ে জমি নেওয়া, জলাভূমি ভরাটের ” অভিযোগ তুলে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সুস্পষ্ট করে দিয়েছে ক্লাব সংগঠনটি । তাদের দাবি, ২০১৪ সালে ধূপগুড়ি পুরসভা স্থানীয় দক্ষিণায়ন ক্লাবের কাছ থেকে প্রায় সাত বিঘে জমি গ্রীন সিটি পার্ক অর্থাৎ ইকো অ্যামিউজমেন্ট পার্ক গড়ার জন্য জায়গা আছে ক্লাবের কাছে আবেদন জানায়। সেই সময় বেশকিছু দাবি কে সামনে রেখে পাঁচবিঘে জলাশয় এবং আরো দু বিঘা জমি সহ প্রায় সাত বিঘে জায়গা পৌরসভা কে দেওয়ার ব্যাপারে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর হয়। তবে অভিযোগ সেই পার্ক না গড়ে অন্য প্রশাসনিক বা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করছে পুর-কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিকভাবেই  পার্ক গড়ে না ওঠায় পুরসভার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ তুলে পোস্টার লাগিয়ে আন্দোলনে নামলেন দক্ষিণায়ন ক্লাবের সদস্যরা।

পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে ধুপগুড়ি। পোস্টার আশঙ্কা যেখানে, সেই স্থানেও। সবুজ হত্যার আশঙ্কার পোস্টারে দাবি তোলা হয়েছে এলাকার “বাস্তুতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে জলাভূমিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়া আনতে হবে “, “ক্লাবের জায়গা নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সমস্ত মানুষ এক হও” -এই রকম বিবিধ স্লোগান লেখা পোস্টার ওই জায়গাতে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ক্লাব সদস্যরা দাবি তুলেছেন দ্রুত জমি ফেরাতে হবে ক্লাবকে। এদিন বিডিও রোডের ওপর ক্লাস সংলগ্ন মাঠে ব্যানার টাঙিয়ে আন্দোলন শুরু করে ক্লাব কর্মকর্তারা৷ শুক্রবার পরিস্থিতি নিয়ে ক্লাবে এক সভাও আয়োজিত হয়।

সূত্রে খবর জমি ফেরানোর এই লড়াইকে এলাকার এক সার্বিক সবুজ রক্ষা আন্দোলনের রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সভায়৷আন্দোলন নিয়ে দক্ষিণায়ণ ক্লাবের সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, যে চুক্তির ভিত্তিতে জমি নেওয়া হয়েছিল তা এক দশকেও কার্যকর হয়নি। এমনকি জলাভূমিকে অক্ষত রেখে সেখানে গ্রীন সিটি পার্ক করার কথা বলা হয়েছিল সেই কথাও তারা রাখেনি।  পুরো জলাভূমি ভরাট করে ফেলেছে। সেকারণে আমরা চুক্তি অনুসারেই জমি ফেরত চাইছি৷

সবুজের হত্যা অনেকাংশেই সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। ইতিহাস তাই বলে। দক্ষিণায়ণ ক্লাব সংলগ্ন এই জায়গায় একসময় বড় জলাশয় ছিল, সেই জলাশয়ের ওপরে প্রতিবছর দুর্গাপূজার মন্ডপ গড়ে বড় বাজেটের পুজো আয়োজন হত। এই পূজোর মূল আকর্ষণই ছিল জলের ওপর মন্ডপ।

২০১২ সালে তৃণমূল ধূপগুড়ি পুরবোর্ড দখলের পর এই জায়গায় নিকো পার্কের আদলে একটি ইকো অ্যামূজমেন্ট পার্ক গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় ক্লাব পুরসভাকে দানপত্র মারফত রেজিষ্ট্রি দেবে পুরো জায়গা।এমনকি সেখানে লেখা হয় যে ব্যতীত অন্য কিছু সেখানে করা যাবে না। যদি পার্ক করা না হয় তাহলে জমি দিতে হবে ক্লাব কে। এরবদলে পুরসভা সেখানে পার্ক এবং একটি বিবাহ ভবন গড়ে তুলবে যার আয় থেকে তিরিশ শতাংশ যাবে ক্লাবের কাছে।৭০ শতাংশ নেবে পুরসভা। চুক্তির ভিত্তিতে ২০১৪ সালের গোড়ায় জমির ভাগ ও লভ্যাংশ নিয়ে ক্লাব ও পুরসভার মধ্যে একটি ১৩ দফা চুক্তি হয় নোটারি অ্যাফিডেফিট আকারে। এরপর সাড়ে সাত বিঘা জমি পুরসভা কে দেয় ক্লাব।

পুরসভা সূত্রে খবর জমি হাতে পেয়ে একটি সতেরো কোটি টাকার প্রকল্প বানিয়ে অনুমোদনের জন্যে পাঠানো হয় রাজ্য পুরদপ্তরে পাঠায় পুরসভা। সেই প্রকল্প আজও সবুজ সঙ্কেত দেয়নি পুরদপ্তর। এদিকে প্রকল্পের টাকা আসবে ধরে নিয়ে ঐ মাঠে বিপুল পরিমাণে মাটি ফেলে জলাশয়ের ৯০ শতাংশ বুজিয়ে ফেলা হয়। মাটি ফেলা সহ পার্ক ও বিবাহ ভবনের কাঠামো গড়তে এখনও পর্যন্ত পুরসভা প্রায় তিন কোটি টাকাও লগ্নি করে বসে ওই জায়গায়। তবে কোন অজানা কারণে আজ পর্যন্ত সেই পার্ক গড়ে ওঠেনি। প্রায় একদশক ধরে বন্ধ পড়ে রয়েছে পার্ক ও বিবাহ ভবন গড়ার কাজ। সেক্ষেত্রে জমি হাতে নেওয়া সহ প্রকল্প গড়তে লগ্নী করা পুরসভার প্রায় তিন কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে, এমনটাই অভিযোগ।

এদিকে ধূপগুড়ি মহকুমা গড়ার সিদ্ধান্তে এনওসি দেওয়ার আগে গতবছর কোলকাতা হাইকোর্টের তরফে আদালত গড়ার সাম্ভাব্য জায়গার সন্ধান চাওয়া হয় জেলা প্রশাসনের কাছে। সেই সুবাদেই সুপার মার্কেটে কৃষিজ বিপণন দপ্তরের একটি, ঝুমুরে কৃষি দপ্তরের মালিকানাধীন একটি এবং পুরসভার হাতে থাকা এই জমিটির সন্ধ্যান কোর্টকে জানায় জেলা প্রশাসন। সেই সুবাদেই দুবার জমি পরিদর্শন করেন হাইকোর্টের আধিকারিকরা৷

অবশেষে গত ১৬ জুন হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর নেতৃত্বে এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাকি দুই জমির সাথে ঘুরে দেখেন এই জমিটিও। এরপর থেকেই আদালত গড়তে পুরসভা জমি দিয়ে দিচ্ছে অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ শুরু করে দক্ষিণায়ণ ক্লাবের সদস্যরা।

ক্লাবের অপর সদস্য সুবোধ দাস বলেন, এলাকার বাস্তুতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে জলাভূমি কে আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনতে হবে।আমরা জমি ফেরত চাই। চুক্তি মত কাজ করা হয়নি। প্রয়োজনে আমরা গ্রীন ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হচ্ছি।

রাজনৈতিক ভাবেও ক্লাবের অভিযোগে সিলমোহর পড়ছে। ধূপগুড়ি পৌরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য তথা প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান অরূপ দে বলেন, ক্লাবের জায়গায় গ্রিন সিটি পার্ক তৈরি করা হবে, সেরকম সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই শর্তে ক্লাব আমাদের জমি দিয়েছে। তবে সেখানে মহকুমা আদালত হবে এমন কোন আলোচনা বা সিদ্ধান্ত পৌরসভাতে হয় নি। কেউ একনায়কতন্ত্র চালানোর চেষ্টা করছেন। তুঘলকি সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।মহকুমা আদালত করতে হলে ভালো জায়গা রয়েছে শহরের উপরে, জানিয়েছেন তিনি।

পুরসভার বিরুদ্ধে ক্লাবের অভিযোগ নিয়ে ধূপগুড়ি পুর প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন ভারতী বর্মনকে ফোন করা হয়েছে, বেজেই গিয়েছে ফোন। উত্তর নেই সবুজ হত্যার, পরিবেশ হত্যার নামে পরিবেশ ধ্বংস করার  পুরসভার কায়েমি স্বার্থ অভিযোগের।

আরও পড়ুন ফের বন্দুকবাজের হামলায় রক্তাক্ত আমেরিকা, নিহত অন্তত ৩, আহত ১০

About Post Author