পুরন্দর চক্রবর্তী, সময় কলকাতা :সংস্কৃত “কথা” থেকেই উৎপত্তি কত্থকের। যখন আরশি পদ্য বসু, আর্শিয়া আইচ, এশা দত্ত, আদ্রিজা সাধুখাঁ, অদ্রিজা রায়, নব্যা মুখার্জি প্রমুখ নৃত্যশিল্পী “নৃত্যম”-এর কুশলী তালিমে “আমাদের কথা” পরিবেশন করে, তখন সেই কথা সর্বজনীন হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে তাহাদের কথা। হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষের উত্তরণের কথা। বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের কথাও ভাষা পায় মুদ্রা ও নৃত্যের তালে। কথা প্রাণ পায় বিশুদ্ধ শিল্পচর্চার আঙ্গিকে, যে কথার প্রাণকেন্দ্রে রয়েছেন পুলোমা সেন। তাঁর কত্থক নৃত্যচর্চার কেন্দ্রের কথা যে জড়িয়ে আছে কত্থকের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বিশুদ্ধ রাখার প্রয়াসে।
কত্থকের ইতিহাস ঐতিহ্যশালী এবং কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন। “বেদাবেদাংবিদ্বয়ংস্তৈবাধ্যাত্মচিন্তকাঃ”- মহাভারতের আদি পর্বে শাস্ত্রীয় শিল্পের ইঙ্গিত রয়েছে: ‘সঙ্গীতে দক্ষ ব্যক্তিদের দ্বারা, ভাগবতের ভক্তদের দ্বারা, কথকদের দ্বারা (পবিত্র ধর্মের আবৃত্তিকারী), বনবাসীদের দ্বারা মিষ্টিভাবে স্বর্গীয় ইতিহাস আবৃত্তি ‘। গবেষক মেরি স্নোডগ্রাসের মতে, ভারতের কত্থক ঐতিহ্য চারশো খ্রিস্টপূর্বাব্দে পাওয়া যায়। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের উপস্থাপনার যুগে নিজেদের চলার পথ ও চর্চাকে শুদ্ধ রাখাই লক্ষ্য পুলোমা সেনের। শুদ্ধ ও নিখাদ কত্থক রীতির চৰ্চাকে তুলে ধরার প্রয়াসে “নৃত্যম” কেন অনন্য, কেন মুগ্ধতা দেয় “নৃত্যম”, তার প্রমাণ মিলল মঙ্গলবার বিড়লা অ্যাকাডেমি অফ আর্ট অ্যান্ড কালচারে। কোহিনূর সেন বরাট, শোভন সুন্দর বসু, অর্কদের ভট্টাচার্য, সুজাতা বোস প্রমুখ প্ৰখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও শিল্পীদের উপস্থিতিতে “নৃত্যম” তাদের বার্ষিক অনুষ্ঠানে মনোমুগ্ধকর নৃত্যশৈলী প্রদর্শন করে, যার পরতে পরতে ছিল চিরায়ত শিল্প ভাবনার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য।
২২ বছর পথ চলার নিবেদন হিসেবে কথার শুরু হয়েছিল বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের হাত দিয়ে, প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে। অতঃপর কথা ছড়িয়ে যায় কত্থকের বিভিন্ন শৈল্পিক পরিবেশনে। আরশি পদ্য, সপ্তপর্ণী, সোহিনী, ঋষিকা, বৃন্দা, আর্যমা, শিরিন, রুমেলা, আয়াতি, সাবিত্রীদের ছন্দময় কথা শেষে তাদের নৃত্যগুরু পুলোমা সেন নিবেদন করেন “অর্ধনারীশ্বর” থেকে “কৌন গলি শ্যাম”। লখনউ ঘরানার কত্থকশৈলীতে তারানা অর্থময় হয়ে ওঠে। মালবিকা মিত্রের সুযোগ্যা শিষ্যা পুলোমা সেন জানিয়েছেন, শুদ্ধভাবে কত্থককে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস তাঁর মধ্যে নিরন্তর কাজ করে। তবে তাঁর বার্ষিক অনুষ্ঠান বুধবার আরও বড় ব্যাপ্তি নিয়ে হাজির হয়। মায়াভরা মুগ্ধতার মধ্যে নৃত্যমের স্পর্শে প্রাণ পেল তারানার না জানা কথা, বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের উত্তরণের পথও দিশা পেল। কত্থকের কথা শাশ্বত হয়ে উঠল ‘নৃত্যম’এর রং-রূপ-ছন্দে। ‘স্বর্গীয় ইতিহাসের’ পুনরাবৃত্তি।।
আরও পড়ুন জ্ঞানপীঠ পাওয়া গুলজার আজীবন কোন ধর্মের কথা বলে চলেছেন ?
More Stories
বাংলাদেশ থেকে উড়িয়ে দেওয়া হল বিখ্যাত কোম্পানি বাটা। নেপথ্যে কী?
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে ২৬ হাজার শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীর। শীর্ষ আদালতের এই রায় মানতে পারছেন না বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে এবার বিশেষ যন্ত্র বসানো হল সুভাষ সরোবরে